ব্যুরো নিউজ,১৪ এপ্রিল: প্রতি বছর যখন যমুনা নদীর জলে ভেসে ওঠে ঘন সাদা ফেনা, তখনই প্রশ্ন ওঠে— এত দূষণ কোথা থেকে? ছবিতে দেখা সাদা ফেনা শুধু চোখের দেখায় নয়, এটি এক গভীর বিপদের বার্তা। মূলত কলকারখানার তরল বর্জ্য মিশে যেতেই এমন ভয়াবহ দূষণের সৃষ্টি হয়। এই সমস্যার সমাধানে বহু বছর ধরে প্রচেষ্টা চলছে, কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে জলের পরিশোধনের জন্য। কিন্তু এই রাসায়নিক নির্ভর ব্যবস্থা যেমন ব্যয়বহুল, তেমনই পরিবেশবান্ধব নয়। এবার এই সমস্যার সমাধানে নতুন সম্ভাবনার মুখ দেখালেন অস্ট্রেলিয়ার গবেষকরা। আর এই সফল গবেষণার অন্যতম সদস্য, এক বঙ্গসন্তান— দেবনাথ ঘোষাল।
শিক্ষা দুর্নীতি না রাজনৈতিক চিত্রনাট্য? রবিবারের পথে জবাব খুঁজছে রাজনীতি
‘ঘাতক ব্যাক্টেরিয়া’র সন্ধানে সাফল্য
দেবনাথ ও তাঁর সহগবেষকরা জানিয়েছেন, ফেনা তৈরির মূল কারণ এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়া— Gordonia amarae। এই ব্যাক্টেরিয়ার কোষে থাকা mycolic acid তাকে জলবিকর্ষী করে তোলে, যার ফলে বর্জ্য জলে ফেনা জমে এবং তা সহজে দূর করা যায় না। এই অবস্থায় নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন গবেষকরা।
শুরু ধোঁয়া থেকে, শেষ কোথায়? রেলের আগুন এখন নিয়মিত আতঙ্ক!
তারা Mycobacterium smegmatis নামের এক ব্যাক্টেরিয়া ব্যবহার করে Gordonia-কে ধ্বংস করার উপায় খুঁজে পান। দেবনাথ জানান, ‘‘এই ব্যাক্টেরিয়া কার্যত ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালায়। কিছু প্রোটিন ফিলামেন্টের মাধ্যমে শত্রু ব্যাক্টেরিয়ার উপর চেপে বসে এবং কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তা নিকেশ করে দেয়।’’ এই পুরো প্রক্রিয়াটি হাই-রেজোলিউশন মাইক্রোস্কোপে নজরে এসেছে, যা গবেষণায় এক বড় সাফল্য। পরিস্থিতির মোকাবিলায় গর্ডোনিয়া নিজের গঠন পাল্টাতে চেষ্টা করলেও, তাতে তার ফেনা তৈরির ক্ষমতা হারিয়ে যায়। ফলে দূষণ ছড়ানোর ক্ষমতাও কমে যায়।
এই জৈবিক পদ্ধতি শুধু পরিবেশবান্ধব নয়, তুলনায় অনেক কম খরচেও কার্যকর। গবেষক দলের মতে, প্রাথমিকভাবে বর্জ্য জল শোধনের জন্য বিভিন্ন শিল্প প্ল্যান্টে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে। পরবর্তী সময়ে নদী, জলাশয় এবং অন্যান্য জল উত্স শোধনেও এটি কাজে লাগানো যেতে পারে। এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানী দেবনাথ ঘোষাল আশাবাদী, ‘‘জল দূষণ রোধে এই পদ্ধতি এক নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।’’ সাধারণ রাসায়নিকের পরিবর্তে ব্যাক্টেরিয়ার সাহায্যে দূষণ রোধের এই অভিনব পদ্ধতি হয়তো আগামী দিনে যমুনা সহ দেশের বহু দূষিত নদীকে প্রাণ ফেরাতে সক্ষম হবে।