ব্যুরো নিউজ, ৯ এপ্রিল: জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের ১০৬তম বার্ষিকী ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে, ব্রিটিশ সরকারের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া উচিত কিনা, তা নিয়ে আবারও বিতর্ক শুরু হয়েছে। ১৩ এপ্রিল ১৯১৯ সালের এই দিনটিতে ঘটে যাওয়া নৃশংস গণহত্যার জন্য ব্রিটিশ সরকার এখনও পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। তবে, সম্প্রতি ব্রিটিশ কনজারভেটিভ এমপি বব ব্ল্যাকম্যান, ঐতিহাসিক এই ঘটনার জন্য ব্রিটিশ সরকারের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনার দাবি তুলেছেন।
হনুমান জন্মজয়ন্তীতে রাশির ভাগ্য খুলবে, তবে কী রহস্য লুকিয়ে আছে?
ব্ল্যাকম্যানের দাবি এবং ১৯১৯ সালের ভয়াবহতা:
ব্ল্যাকম্যান সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে এক বক্তৃতায় এই হত্যাকাণ্ডের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “জেনারেল ডায়ারের নির্দেশে এই ঘটনাটি ঘটেছিল, যেখানে হাজার হাজার নিরীহ ভারতীয় বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং আহত হয়েছিল।” ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল, অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগে এক শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদরত জনতার ওপর গুলি চালিয়ে ব্রিটিশ বাহিনী ১,৫০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছিল এবং আরও অনেকে গুরুতরভাবে আহত হয়েছিল। ব্ল্যাকম্যান, এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের পটভূমি তুলে ধরে বলেন, “পরিবারগুলো শান্তিপূর্ণভাবে পূর্ণিমা তিথিতে ছুটির দিনে একত্রিত হয়েছিল, কিন্তু ব্রিটিশ সৈন্যরা তাদের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল।” তিনি উল্লেখ করেন যে ২০১৯ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এই ঘটনার কথা স্বীকার করেছিলেন, তবে তাতে কোনও আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা ছিল না। ব্ল্যাকম্যানের মতে, এখন সময় এসেছে এই অন্ধকার অধ্যায়ের জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার।
মহাবীর জয়ন্তী ২০২৫: ব্যাংক ছুটির বিভ্রান্তি
ব্ল্যাকম্যান আরও বলেন, “২০১৯ সালে থেরেসা মে এই ঘটনার কথা স্বীকার করেছিলেন, তবে কোনো আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়নি।” ১৩ এপ্রিল, ২০২৫ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের ১০৬তম বার্ষিকী উপলক্ষে ব্রিটিশ সরকার এই হত্যাকাণ্ডের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারে, এই দাবিই উঠেছে। সংসদ নেতা লুসি পাওয়েল, যিনি ব্ল্যাকম্যানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, তিনি বলেন, “এটি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ইতিহাসের সবচেয়ে লজ্জাজনক অধ্যায়গুলির মধ্যে একটি।”
১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল, ব্রিটিশ জেনারেল রেজিনাল্ড ডায়ারের নেতৃত্বে ব্রিটিশ সৈন্যরা অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগে একত্রিত হওয়া শান্তিপূর্ণ ভারতীয় জনতার ওপর গুলি চালায়। এটি রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে জড়ো হওয়া জনতা ছিল। ব্রিটিশ বাহিনী, একমাত্র প্রবেশপথ বন্ধ করে প্রায় দশ মিনিট ধরে গুলি চালায়, এতে নারী ও শিশু সহ ১,৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। এই নৃশংসতা ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে পরিণত হয় এবং ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তির জন্য ভারতের জনগণের সংকল্প আরও দৃঢ় হয়ে ওঠে।
পাঞ্জাবের বৈশাখী: নাচ-গান, ইতিহাসের নতুন মোড়
এই হত্যাকাণ্ড ভারতীয় জনগণের হৃদয়ে একটি গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে, যা আজও বহন করছে। তবে, ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া না হওয়া পর্যন্ত এই ক্ষত ঘা হয়ে রয়ে যাবে। ১০৬ বছর পর, এই হত্যাকাণ্ডের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ব্রিটিশ সরকারকে তার নৃশংস আচরণের জন্য একবার হলেও ক্ষমা চাইতে হবে, এই দাবি আজও শোনা যাচ্ছে। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের ১০৬তম বার্ষিকী উপলক্ষে এই বিতর্কটি নতুন মাত্রা পেয়েছে, যেখানে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার দাবি আবারও উঠেছে। ব্রিটিশ সংসদের সদস্যদের তরফ থেকে এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে, বিশ্বব্যাপী এই ঘটনাকে স্মরণ করা হচ্ছে, যার ক্ষত চিরকাল রয়ে যাবে ভারতের ইতিহাসে।