ব্যুরো নিউজ, ৯ এপ্রিল: ভারত, যার প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে যেমন অজস্র পরিবর্তন রয়েছে, তেমনি তার মানুষের জিনগত বৈচিত্র্যও অসীম। এই বৈচিত্র্যই প্রভাবিত করে মানুষের স্বাস্থ্য এবং তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা। তাই, ২০২০ সালে ভারত সরকার ‘জিনোমইন্ডিয়া’ নামক একটি প্রকল্প শুরু করে, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের জিনগত তথ্য একত্রিত করে একটি বিশাল বায়ো-ব্যাঙ্ক তৈরি করা। সম্প্রতি, এই প্রকল্পের প্রথম গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জার্নাল ‘নেচার জেনেটিক্স’-এ। এই বায়ো-ব্যাঙ্ক দেশের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছে, যা ভবিষ্যতে ক্যানসার, ডায়াবিটিস কিংবা মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
গবেষণার গুরুত্ব এবং এর সম্ভাবনা
ভারতের ১৪০ কোটি মানুষের জন্য আগে কোনও জিন-তথ্যভান্ডার ছিল না। সেই কারণে, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা, ওষুধ তৈরি, বা রোগীদের জন্য সঠিক চিকিৎসা নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভারতকে ইউরোপের তথ্যভান্ডারের উপর নির্ভর করতে হতো। কিন্তু ইউরোপীয়দের শারীরিক গঠন এবং জিনগত চরিত্র ভারতের মানুষের থেকে আলাদা, যার ফলে অনেক সময় ইউরোপীয়দের জন্য কার্যকরী চিকিৎসা ভারতের জন্য ক্ষতিকরও হতে পারে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে, ভারতীয়দের জন্য একটি নিজস্ব জিন-তথ্যভান্ডার তৈরি করা হয়েছে, যা দেশের মানুষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী হবে। গবেষণায় যুক্ত বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ২০১৫-২০১৬ সাল থেকেই এই বায়ো-ডেটাবেস তৈরির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এবং পরবর্তীতে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে ২০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা প্রায় ৮৩টি পৃথক জনগোষ্ঠীর ২০ হাজার মানুষের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেন। এতে ৩০টি আদিবাসী জনজাতিও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এসব জনগণের উচ্চতা, ওজন, রক্তে শর্করার মাত্রা, লিভারের কার্যক্ষমতা সহ বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা করা হয়।
সেলে হাট—সস্তায় জিনিসপত্র কেনার সেরা সময়!”
এছাড়া, ১০ হাজার মানুষের ‘হোল জিনোম সিকোয়েন্সিং’ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়, যা ভবিষ্যতে পার্সোনালাইজড চিকিৎসার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। এই গবেষণার প্রধান বিজ্ঞানী, কল্যাণী বসু জানান, এই ডেটাবেসের মাধ্যমে জানা যাবে, দেশের বিভিন্ন জনগণের মধ্যে কোন ধরনের রোগের ঝুঁকি রয়েছে এবং কীভাবে রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে। এই গবেষণায় যুক্ত বিজ্ঞানী চন্দ্রিকা ভট্টাচার্য বলেন, “এটি শুধু রোগ নির্ণয়ের জন্য নয়, বরং রোগীদের জন্য সঠিক চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যনীতি তৈরিতে সাহায্য করবে।” গবেষণায় অংশগ্রহণকারী সকল বিজ্ঞানী এবং প্রতিষ্ঠান মনে করেন, এই প্রকল্প ভারতীয় স্বাস্থ্য খাতে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
আইএসএল ফাইনাল: মোহনবাগান বনাম বেঙ্গালুরু এফসি, কে হাসবে শেষ হাসি?
এই তথ্যভান্ডারের মূল সুবিধা হলো, এটি দেশের যেকোনো প্রান্তে সহজেই ব্যবহার করা যাবে। এটি ফরিদাবাদের ‘রিজিওনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি’-তে সংরক্ষিত আছে এবং সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করে ১৮ কোটি ডিএনএ ভেরিয়েন্টের বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যা চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটি বিরাট সাফল্য। এই ডেটাবেস শুধু ভারতের জনগণের জন্য নয়, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যনীতি তৈরিতে একটি শক্তিশালী ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।