ব্যুরো নিউজ,১ এপ্রিলঃ মানবজীবনের চরম সত্য ‘যারা চলে যায় ফেরে না তো হায় পিছু-পানে আর কেউ’—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গানের চরম সত্যকে আবারও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বিজ্ঞান। প্রায় ১২,৫০০ বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া শিকারি নেকড়ে (Dire Wolf) এবার পৃথিবীতে ফিরে এসেছে। আমেরিকার বায়োটেকনোলজি সংস্থা Colossal Biosciences-এর বিজ্ঞানীরা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে পৃথিবীতে ফেরালেন এই নেকড়ে। বিজ্ঞানীদের দাবি, এটি বিশ্বের প্রথম ‘De-extinction’ (বিলুপ্তি থেকে পুনরুত্থান) প্রকল্প, যা বিজ্ঞানকে নতুন দিগন্তের দিকে নিয়ে গেছে।
ভাইফোঁটার পেছনের পুরাণিক গল্প যা আপনাকে ভাবাবে, কি সেই গল্প?
Dire Wolf এর ফিরিয়ে আনা: ইতিহাসের অদ্ভুত সাফল্য
এটি শুধু একটি সায়েন্স ফিকশন মনে হতে পারে, কিন্তু বাস্তবের মাটিতে এটি ঘটেছে। আজ থেকে প্রায় ১২,৫০০ বছর আগে শিকারি নেকড়ে পৃথিবী থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু Colossal Biosciences-এর বিজ্ঞানীরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সেই বিলুপ্ত প্রাণীকে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এই অসাধ্য কাজ সম্ভব হয়েছে শিকারি নেকড়ের প্রাচীন DNA-র মাধ্যমে। তাদের গবেষণার মাধ্যমে এই প্রাণীটি তৈরি করা হয়েছে এবং বর্তমানে তিনটি শিকারি নেকড়ে শাবক পৃথিবীতে উপস্থিত রয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানান, শিকারি নেকড়ের প্রাচীন DNA সংগ্রহ করে, বর্তমান সময়ের ধূসর নেকড়ের DNA এর সঙ্গে মিলিয়ে নতুন জিনোম তৈরি করা হয়। এর পর, সেই DNA কে সারোগেট সারমেয়দের গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয়। এক পর্যায়ে, গর্ভে থাকা ভ্রূণের মধ্যে তিনটি শাবক জন্ম নেয়। তাদের নাম রাখা হয়েছে Romulus, Remus, এবং Khaleesi। নামকরণটি জনপ্রিয় টেলিভিশন সিরিজ ‘গেম অফ থ্রোনস’ এর চরিত্রদের সাথে মিল রেখে করা হয়েছে।
Today petrol price: আজ পেট্রল ও ডিজেলের দাম কোন রাজ্যে কত থাকছে এক নজরে জেনে নিন
বিজ্ঞানীদের ঐতিহাসিক সাফল্য Colossal Biosciences-এর সিইও বেন ল্যাম জানান, “আমরা ১৩,০০০ বছর পুরনো দাঁত এবং ৭২,০০০ বছর পুরনো খুলি থেকে DNA সংগ্রহ করেছি। এর মাধ্যমে তিনটি শিকারি নেকড়ে তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে আমরা যা অর্জন করেছি, সেটি প্রায় জাদুর মতোই।” এটি বিজ্ঞানের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এটা সত্যি যে, জিনোম সিকোয়েন্সিং এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি বিলুপ্ত প্রাণীকে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা একটি বৃহৎ চ্যালেঞ্জ ছিল। ১৯৯৬ সালে Dolly নামক একটি ভেড়ার ক্লোনিং করা হয়েছিল, তবে এটি ছিল একটি আধুনিক প্রাণী। কিন্তু এই শিকারি নেকড়ে, যা তুষারযুগের শেষের দিকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল, তার জিন পুনর্গঠন করার প্রক্রিয়া অনেক কঠিন ছিল। তাও, বিজ্ঞানীরা সফল হয়েছেন।
এছাড়া, এটি শুধু প্রথমবারের জন্য একটি বিলুপ্ত প্রাণীকে ফিরিয়ে আনা নয়, এটি এক ধরনের বৈজ্ঞানিক বিপ্লবও। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে আরও অনেক বিলুপ্ত প্রাণীকে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে, যা বিশ্বের জীববৈচিত্র্য পুনর্স্থাপনেও সাহায্য করবে। নতুন প্রযুক্তি, নতুন আশা এটি বিজ্ঞানীদের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হলেও, মানবজাতির ভবিষ্যতের জন্যও এই সাফল্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য বজায় রাখতে ভবিষ্যতে এমন আরও প্রকল্প হতে পারে। বিশ্বের বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এমন প্রযুক্তি যদি সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়, তাহলে পৃথিবীর প্রাণীজগতের জন্য এটি এক নতুন দিগন্তের সূচনা হতে পারে।