ব্যুরো নিউজ,১৭ এপ্রিল: রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা বর্তমানে এক ভয়াবহ সংকটে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিযুক্ত প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট, যার ফলে বহু স্কুল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। কোথাও ২৭ জনের মধ্যে ২৫ জন শিক্ষক নেই, কোথাও আবার ৮ জনের মধ্যে ৭ জন চলে গিয়েছেন। এমনকি, কোথাও একজন শিক্ষকই পুরো স্কুল সামলাচ্ছেন—তিনি-ই ঘণ্টা দিচ্ছেন, পড়াচ্ছেন এবং খাতা দেখছেন। এই সংকটে West Bengal Board of Secondary Education রিভিউ পিটিশন করে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়। এই মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার বেঞ্চ চারটি গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়েছেন, যা সাময়িক স্বস্তি দিয়েছে রাজ্য সরকার ও বহু চাকরি হারানো কর্মীকে।
শান্তির মুখোশে লুকানো উত্তেজনার আগুন: কী বললেন মুখ্যমন্ত্রী?
সুপ্রিম কোর্টের চার দফা নির্দেশ:
- চাকরি হারানো প্রার্থীরা ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকরিতে থাকতে পারবেন:
যাঁদের চাকরি বাতিল হয়েছে, তাঁরা ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকরিতে বহাল থাকতে পারবেন এবং পূর্ণ বেতন পাবেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, সেই সময় পর্যন্ত তাঁরা সরকারি সুবিধা পাবেন। - ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে:
সুপ্রিম কোর্ট ৩ এপ্রিলের শুনানিতে যে তিন মাসের সময়সীমা নির্ধারণ করেছিল, তা বাড়িয়ে এখন ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এই সময়সীমার মধ্যে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। - ৩১ মে’র মধ্যে অনলাইনে আবেদন ফর্ম ছাড়তে হবে:
রাজ্য সরকারকে ৩১ মে ২০২৫-এর মধ্যে অনলাইনে আবেদন ফর্ম প্রকাশ করতে হবে যোগ্য প্রার্থীদের জন্য। যদি এই সময়ের মধ্যে ফর্ম ছাড়া না হয়, তাহলে সুপ্রিম কোর্ট কঠোর পদক্ষেপ নেবে। আবেদনপত্র ও তার প্রতিলিপি আদালতে জমা দিতেও বলা হয়েছে। - যোগ্য প্রার্থীদের নাম ও তালিকা অনলাইনে প্রকাশ বাধ্যতামূলক:
Group C ও D পদে যাঁরা যোগ্য, কিংবা যাঁদের চাকরি বাতিল হয়েছে, তাঁদের নাম অনলাইনে প্রকাশ করতে হবে। সেই তালিকার কপি সুপ্রিম কোর্টে জমা দিতে হবে ৩১ মে’র মধ্যেই। বিচারপতি খান্না মন্তব্য করেছেন, এই গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গভীর দুর্নীতি হয়েছে, তাই স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এই পদক্ষেপ অপরিহার্য।
রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা এক কঠিন মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। একদিকে শিক্ষক নেই, অন্যদিকে হাজার হাজার চাকরি বাতিল। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ কিছুটা স্বস্তি দিলেও, বড় প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে—এই সংকট থেকে শিক্ষা ব্যবস্থা কবে মুক্তি পাবে? এখন নজর রাজ্য সরকারের ওপর—তারা সময়মতো নিয়োগ ও আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে কিনা, সেটাই আগামী শিক্ষাবর্ষের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।