modi mamata CJI

ব্যুরো নিউজ ০৭ অক্টোবর ২০২৫ : দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে এক নজিরবিহীন ঘটনা ঘটল সোমবার। এজলাসে বিচারিক কাজ চলার সময় প্রধান বিচারপতি (CJI) বি আর গাভাইকে লক্ষ্য করে জুতো ছোড়ার চেষ্টা করেন এক প্রবীণ আইনজীবী। ৭১ বছর বয়সী অভিযুক্ত আইনজীবীর নাম রাকেশ কিশোর। যদিও সিজেআই-এর বেঞ্চ পর্যন্ত জুতোটি পৌঁছায়নি। নিরাপত্তা কর্মীরা দ্রুত তাঁকে ধরে ফেলেন। এই ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

 

জুতো ছোড়ার কারণ: ‘সনাতন ধর্মের অপমান’

পুলিশের জেরায় এবং পরে সংবাদসংস্থা এএনআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আইনজীবী রাকেশ কিশোর তাঁর এই কাজের নেপথ্যের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন।

তিনি দাবি করেন, গত ১৬ সেপ্টেম্বর খাজুরাহো মন্দির চত্বরে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তি পুনরুদ্ধারের একটি আবেদন খারিজ করার সময় প্রধান বিচারপতির মন্তব্য তাঁকে গভীরভাবে আঘাত করে। বিচারপতি গাভাই নাকি তখন রসিকতা করে বলেন, ‘যান এবং দেবতাকে নিজেই কিছু করতে বলুন’ বা ‘মূর্তিটির মাথা পুনরুদ্ধার করার জন্য প্রার্থনা করুন’। কিশোরের দাবি, এই মন্তব্য ‘সনাতন ধর্মকে অপমান’ করেছে।

তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া একটি চিরকুটে লেখা ছিল, “ভারত সনাতন ধর্মের অপমান সহ্য করবে না।” কিশোর আরও অভিযোগ করেছেন যে, হালদওয়ানির রেলের জমি দখল, নূপুর শর্মার মামলা, এবং জা ল্লিকাট্টু বা দহি-হাঁড়ির উচ্চতার মতো সনাতন ধর্ম সম্পর্কিত অন্যান্য মামলাতেও সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তগুলি তাঁকে ব্যথিত করেছে।

Supreme Court : প্রধান বিচারপতির উদ্দেশ্যে ছোঁড়া হল জুতো , সনাতন ধর্মের হয়ে প্রতিবাদে সরব আইনজীবী

ঘটনার পর প্রধান বিচারপতির অবিচল মনোভাব

জুতো ছোড়ার চেষ্টার পরেও প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই বিন্দুমাত্র বিচলিত হননি। তিনি এজলাসে উপস্থিত অন্যান্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন: “এসব দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। আমরা বিভ্রান্ত নই। এসব ঘটনা আমার উপর প্রভাব ফেলবে না।” এর পরই তিনি স্বাভাবিকভাবে বিচারিক কাজ চালিয়ে যান।

তবে, অভিযুক্ত আইনজীবী রাকেশ কিশোরকে ৩ ঘণ্টা জেরা করার পরও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেনি পুলিশ। কিশোরের কাছে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের কার্ড ছিল।

 

প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর তীব্র নিন্দা

এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ পোস্টে লেখেন, সিজেআই-এর উপর হামলা ‘প্রতিটি ভারতীয়কে ক্ষুব্ধ করেছে’। তিনি এই কাজকে ‘সম্পূর্ণ নিন্দনীয়’ আখ্যা দেন এবং সিজেআই গাভাইয়ের ‘শান্ত মনোভাবের’ প্রশংসা করে তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।

অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ঘটনাটির নিন্দা করে এটিকে ‘সংবিধানের উপর হামলা’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি লেখেন, “এটি একটি জঘন্যতম কাজ এবং কার্যত ভারতের সংবিধানের উপর হামলা।”

 

অনুতপ্ত নন অভিযুক্ত আইনজীবী

মঙ্গলবার সংবাদসংস্থা এএনআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাকেশ কিশোর তাঁর কাজের জন্য কোনও অনুতাপ প্রকাশ করেননি। তিনি উল্টে দাবি করেন, ‘আমি কিছু করিনি, ঈশ্বর আমাকে দিয়ে করিয়েছেন’। কিশোর আরও জানান, ১৬ সেপ্টেম্বরের মন্তব্যের পর তিনি ঘুমাতে পারছিলেন না এবং এক ‘ঐশ্বরিক শক্তি’ তাঁকে এই কাজ করতে অনুপ্রাণিত করেছে।

তিনি বার কাউন্সিল কর্তৃক তাঁর সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করে বলেন, কাউন্সিলের নিয়ম ভাঙা হয়েছে। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি ক্ষমা চাইবেন না

Supreme Court : বিচার ব্যবস্থায় হিন্দু ধর্ম ও বিশ্বাস নিয়ে বিতর্ক: একের পর এক ঘটনায় বাড়ছে ক্ষোভ

প্রধান বিচারপতির এই ‘কলঙ্ক’ এবং তাঁর দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন

এই ঘটনা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর জনগণের ক্ষোভ এবং আইনি কাঠামোর প্রতি সমালোচনার একটি গুরুতর প্রতিফলন। একজন প্রধান বিচারপতির দেওয়া মন্তব্য সমাজের বিভিন্ন সংবেদনশীল বিষয়ে ভিন্নভাবে বিবেচিত হতে পারে। বিচারপতি গাভাই তাঁর মন্তব্যের জন্য পরে স্পষ্টীকরণ দিয়েছিলেন যে তিনি সব ধর্মকে সম্মান করেন। কিন্তু সমালোচকদের প্রশ্ন, তাঁর মতো সাংবিধানিক পদের একজন ব্যক্তির বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় আবেগপ্রবণ জনস্বার্থের বিষয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে আরও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত ছিল কিনা। তাঁর ‘অনুতপ্ত না হওয়া’র মনোভাবকে কেউ কেউ আইনি সিদ্ধান্তের প্রতি দৃঢ়তা হিসেবে দেখলেও, সমালোচকদের চোখে এটি সংবেদনশীল বিষয়ে আরও সংযত হওয়ার দায়িত্ব থেকে সরে আসা বলেও বিবেচিত হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর