ব্যুরো নিউজ ১৭ অক্টোবর ২০২৫ : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছ থেকে রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধের আশ্বাস পাওয়ার দাবি সরাসরি অস্বীকার করেছে ভারত। বৃহস্পতিবার ভারতের বিদেশ মন্ত্রক (MEA) স্পষ্ট করে দিয়েছে যে বুধবার দুই নেতার মধ্যে এই বিষয়ে কোনো ধরনের ফোন আলাপ হয়নি। এর পাশাপাশি, ভারত পুনর্বার তার জ্বালানি নীতির অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেছে যে তাদের আমদানির সিদ্ধান্ত দেশের জাতীয় স্বার্থ দ্বারাই পরিচালিত হয়।
ট্রাম্পের বিতর্কিত দাবি
বুধবার ওয়াশিংটনের ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন যে প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন যে ভারত আর রাশিয়া থেকে তেল কিনবে না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদী আজ আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে তাঁরা রাশিয়া থেকে তেল কিনবেন না। এটা একটা বড় পদক্ষেপ। এখন আমাদের চীনকেও একই কাজ করতে হবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমি খুশি ছিলাম না যে ভারত তেল কিনছিল, কারণ এটা রাশিয়াকে এই হাস্যকর যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সাহায্য করে।”
ট্রাম্পের দাবি, মোদী বলেছেন যে এটি ‘তাৎক্ষণিকভাবে’ সম্ভব নয়, তবে ‘খুব শীঘ্রই প্রক্রিয়াটি শেষ হবে’। তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে মস্কোর ওপর আর্থিক চাপ বাড়াতে ভারত এই সিদ্ধান্ত নিলে তা সহায়ক হবে। যুদ্ধ শেষ হলে ভারত আবার রাশিয়ার সঙ্গে জ্বালানি বাণিজ্য শুরু করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন ট্রাম্প।
বিদেশ মন্ত্রকের দ্ব্যর্থহীন প্রত্যাখ্যান
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই দাবির পর বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে স্পষ্টীকরণ দেন।
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যে কোনো কথোপকথন বা টেলিফোন কল হয়েছিল কিনা, সেই বিষয়ে আমি গতকাল (বুধবার) দুই নেতার মধ্যে কোনো কথোপকথনের কথা অবগত নই।” এর মাধ্যমে ট্রাম্পের দাবিকৃত ‘আশ্বাস’ দেওয়ার বিষয়টি সরাসরি মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়।
ভারতের জ্বালানি নীতির পুনরাবৃত্তি
ট্রাম্পের দাবির পর ভারত আবারও নিজেদের স্বাধীন জ্বালানি নীতির পক্ষে সওয়াল করেছে। বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে:
- জাতীয় স্বার্থ অগ্রাধিকার: “ভারত তেল ও গ্যাসের একটি উল্লেখযোগ্য আমদানিকারক। অস্থির জ্বালানি পরিস্থিতিতে ভারতীয় গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষা করা আমাদের ধারাবাহিক অগ্রাধিকার। আমাদের আমদানি নীতিগুলি সম্পূর্ণরূপে এই উদ্দেশ্য দ্বারা পরিচালিত।”
- দ্বৈত লক্ষ্য: “স্থির জ্বালানি মূল্য এবং সুরক্ষিত সরবরাহ নিশ্চিত করা আমাদের জ্বালানি নীতির যুগ্ম লক্ষ্য।”
- উৎস বৈচিত্র্যকরণ: “এই নীতির মধ্যে রয়েছে আমাদের জ্বালানি উৎসগুলিকে বিস্তৃত করা এবং বাজারের পরিস্থিতি মেটাতে যথাযথভাবে বৈচিত্র্য আনা।”
- যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা: জয়সওয়াল আরও নিশ্চিত করেন যে বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের সঙ্গে জ্বালানি সহযোগিতা আরও গভীর করতে আগ্রহ দেখিয়েছে এবং এই বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে।
প্রেক্ষাপট: রুশ তেল ও ওয়াশিংটনের চাপ
পাশ্চাত্যের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়া থেকে ভারতের তেল কেনা অব্যাহত রাখার বিষয়টি নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতির একটি প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারত বর্তমানে চীনের পরে রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম জীবাশ্ম জ্বালানি ক্রেতা। ট্রাম্প অভিযোগ করেন যে এই ধরনের ক্রয় প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে তাঁর যুদ্ধে অর্থ যোগাতে সাহায্য করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট স্পষ্টভাবে বলেছেন যে ভারতের এই পদক্ষেপের কারণে আমেরিকা “খুশি নয়”।
সব বিতর্কের মধ্যেই ট্রাম্প প্রধানমন্ত্রী মোদীকে “একজন মহান মানুষ” হিসাবে বর্ণনা করেন, তবে রসিকতা করে বলেন, “আমি চাই না আপনারা ‘ভালবাসা’ শব্দটি অন্যভাবে গ্রহণ করুন। আমি তাঁর রাজনৈতিক জীবন নষ্ট করতে চাই না।”




















