ব্যুরো নিউজ ২৩ অক্টোবর ২০২৫ : ভারত ভাই-বোনের সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দুটি আন্তরিক উৎসব পালন করে—যা হল ভাইফোঁটা বা ভ্রাতৃদ্বিতীয়া এবং রক্ষা বন্ধন। উভয় উৎসবই ভাই-বোনের অটুট বন্ধনকে সম্মান করে, তবে তাদের সময়কাল, আচারের ভিন্নতা এবং পেছনের পৌরাণিক কাহিনি তাদের বিশেষত্ব প্রদান করে।
ভাইফোঁটা: যম ও যমুনার আখ্যান
ভাইফোঁটা উৎসবটি পাঁচ দিনব্যাপী দীপাবলি অনুষ্ঠানের সমাপ্তি চিহ্নিত করে। এটি কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে (সাধারণত অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে) পালিত হয়।
- আচার ও তাৎপর্য: এই বিশেষ দিনে বোনেরা পূজা করেন, ভাইয়ের কপালে মঙ্গল তিলক পরান এবং তাঁর দীর্ঘায়ু ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করেন। এর প্রতিদানে ভাই বোনের জন্য উপহার, অর্থ এবং আশীর্বাদ প্রদান করেন এবং তাকে আজীবন রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেন।
- পৌরাণিক ভিত্তি: পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, এই দিনেই দেবী যমুনা তাঁর ভাই যমরাজ, অর্থাৎ মৃত্যুর দেবতাকে, নিজের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তিনি উষ্ণতার সাথে তাঁকে বরণ করেন, আরতি করেন এবং তাঁর সামনে খাবার পরিবেশন করেন। যমুনা দেবীর এই গভীর স্নেহ ও ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে যমরাজ ঘোষণা করেন যে, যে কেউ এই দিনে তার বোনকে সম্মান করবে, সে সমৃদ্ধি এবং দুর্ভাগ্য থেকে রক্ষা পাওয়ার আশীর্বাদ লাভ করবে।
Yamuna : সূর্যকন্যা যমুনা: মৃত্যুর ভয় হরণকারী এবং জীবনের পবিত্র প্রবাহ
রক্ষা বন্ধন: প্রতিজ্ঞা ও সুরক্ষার বন্ধন
অন্যদিকে, রক্ষা বন্ধন উৎসবটি ভাই-বোনের সম্পর্কের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদযাপন। এটি শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে (সাধারণত জুলাই বা আগস্ট মাসে) পালিত হয়।
- আচার ও তাৎপর্য: এই দিনে বোনেরা ভাইয়ের হাতে একটি পবিত্র সুতো বা রাখি বেঁধে দেন। এই রাখি কেবল একটি সুতো নয়, এটি ভাইয়ের দীর্ঘ জীবন, সুখ ও সমৃদ্ধির জন্য বোনের আশীর্বাদ এবং ভালোবাসার প্রতীক। এর বিনিময়ে ভাই তার বোনকে আজীবন রক্ষা করার প্রতিজ্ঞা করেন।
ভাইফোঁটা বনাম রক্ষা বন্ধন: পার্থক্যগুলি
যদিও দুটি উৎসবের মূল ভাব একই—ভাই-বোনের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা—তবুও তাদের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে:
| বৈশিষ্ট্য | ভাইফোঁটা | রক্ষা বন্ধন |
| সময়কাল | কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে (দীপাবলির পরে) | শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে (বর্ষাকালে) |
| মূল আচার | বোন কর্তৃক ভাইয়ের কপালে তিলক দেওয়া এবং দীর্ঘায়ুর জন্য প্রার্থনা | বোন কর্তৃক ভাইয়ের হাতে রাখি বেঁধে দেওয়া এবং সুরক্ষার প্রতিজ্ঞা |
| পৌরাণিক কাহিনি | যমরাজ এবং তাঁর বোন দেবী যমুনার সাক্ষাৎ | দেবী লক্ষ্মী-বলি বা দ্রৌপদী-কৃষ্ণের আখ্যান |
| মূল প্রার্থনা | বোনের পক্ষ থেকে ভাইয়ের দীর্ঘায়ু ও সমৃদ্ধি | ভাইয়ের পক্ষ থেকে বোনের সুরক্ষা ও প্রতিজ্ঞা |
রক্ষা বন্ধনের নেপথ্যে কিংবদন্তি
রক্ষা বন্ধন উদযাপনের পিছনেও রয়েছে শক্তিশালী ঐতিহাসিক ও পৌরাণিক ভিত্তি:
১. দেবী লক্ষ্মী ও রাজা বলি: একটি কিংবদন্তি অনুসারে, একবার দেবী লক্ষ্মী রাজা বলির কাছে তাঁর সুরক্ষার জন্য রাখিবন্ধন করেছিলেন। রাজা বলি লক্ষ্মীর এই স্নেহে এতই মুগ্ধ হন যে তিনি তাঁর মনস্কামনা পূর্ণ করেন এবং ভগবান বিষ্ণুকে তাঁর স্বর্গীয় আবাসে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেন।
২. দ্রৌপদী ও শ্রীকৃষ্ণ: আরেকটি জনপ্রিয় গল্প অনুসারে, একবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের হাতে আঘাত লাগলে, দ্রৌপদী তাঁর শাড়ির এক টুকরো ছিঁড়ে কৃষ্ণের হাতে বেঁধে দেন। দ্রৌপদীর এই সহানুভূতিতে মুগ্ধ হয়ে কৃষ্ণ তাঁকে প্রয়োজনে রক্ষা করার প্রতিজ্ঞা করেন। এই গল্প রক্ষা বন্ধন উৎসবের মূল চেতনাকে তুলে ধরে—যা হল নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও সুরক্ষার অঙ্গীকার।
এইভাবে, ভাইফোঁটা এবং রক্ষা বন্ধন উৎসব দুটি ভিন্ন রীতি ও কাহিনি নিয়ে এলেও, তারা একই মূল বার্তা দেয়—ভাই-বোনের সম্পর্ক একটি পবিত্র বন্ধন, যা ভালোবাসা, দায়িত্ব ও পারস্পরিক সুরক্ষার ওপর নির্ভরশীল।



















