ব্যুরো নিউজ, ২১ মার্চ: বসন্তে রঙের উৎসবে তো আমরা সকলেই মেতে উঠি। কিন্তু সেই আনন্দের মাঝে ধরা পড়ে কিছু করুণ মুখ। পথেই বসবাস তাদের। তাই অনায়াসেই নিজেদের সম্পত্তি ভেবে তাদের সঙ্গে যা খুশি করা যায় বলে মনে করেন অনেকেই। কিন্তু সেই আনন্দই শাস্তি হয়ে ওঠে ওই অবলাদের কাছে।
পিছিয়ে গেল UPSC প্রিলিমস পরীক্ষার দিনক্ষণ! কবে হবে পরীক্ষা?
দোল রঙয়ের উৎসব। আনন্দের উৎসব। বসন্তের রঙে নিজেদের রাঙিয়ে তোলার উৎসব। ছোট থেকে বড় আমরা সকলেই মেতে উঠি এই রঙের খেলায়। বালতিতে রং গুলে পিচকারি দিয়ে অন্যকে রং লাগানো যেমন চলে একই সঙ্গে চলে হাতে আবির নিয়ে প্রিয় মানুষের মুখে- গালে রং মাখানো। কেউবা আবার সেই রং খেলার সাথে মেতে ওঠে ঠাণ্ডাইয়ের গ্লাসে চুমুক দিয়ে।
কিন্তু এতো কিছুর মাঝেও প্রতিবারই সতর্ক করা হয় নিজেদের মজা যেনও অন্যের কাছে সাজা না হয়ে দারায়। আমাদের আনন্দে যেনও অন্য কোনও মানুষ থেকে প্রাণী কেউ যেনও কষ্ট না পায়। তাই সেই সতর্কবার্তায় বারবার জানানো হয়েছে কোন পথ প্রাণীদের গায়ে যেনও রং লাগানো না হয়। তা সে কুকুর হোক বা বিড়াল। কিন্তু কে শোনে কার কথা। প্রতিবারের মত গত বছরও দেখা গিয়েছিল সেই একই ছবি। নিজেদের উৎসবের রং পথকুকুরদের গায়ে মাখিয়ে পালন করা হচ্ছিল রঙের উৎসব। আবার রং গোলা এক বালতি জল পথ কুকুরদের গায়ে ঢেলে উল্লাসের সঙে উদযাপন হচ্ছে হোলি। কখনও আবার বল পূর্বক বাদুড়ে রং মাখানো হয় পথ প্রাণীদের শরীরে। এছাড়া আবীরতো আছেই। প্রতি বছরই এমন ছবিতে ভরে যায় সামাজিক মাধ্যম। কেউ কেউ এই ঘটনার তীব্র সমালোচনাও করেন। কিন্তু তাতে কার আর কি যায় আসে? এর জন্যতো আর ফাঁসি হবে না! তাই নির্দ্বিধায়, অনায়াসেই চালিয়ে যাওয়া যায় এমন কু-কর্ম। কিন্তু তারা তো কম্ম সেরেই খালাস। এই পথ পশুদের স্বাস্থ্যের দায় কে নেবে?
রঙের জন্য প্রাণীদের শরীরে কী কী সমস্যা হতে পারে?
১. দোলের রঙের সাথে প্রাণীদের অতিরিক্ত এক্সপোজার ত্বকে অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। যেমন ত্বকে ডার্মাটাইটিস এনফ্লামেশন, চুল পড়া, গুরুতর চুলকানি, নাক জ্বালা এবং শ্বাসকষ্টের অস্বস্তি। গুঁড়ো রঙে সাধারণত বিষাক্ত রাসায়নিক থাকে যা পশুদের ত্বকে অ্যালার্জি, ফুসকুড়ি এবং এমনকি অন্ধত্বের কারণ হয়।
২. হোলির সময় ব্যবহৃত বেশিরভাগ শুকনো রঙে মার্কারি সালফেট এবং মেটাল অক্সাইডের মতো রাসায়নিক থাকে। এগুলো কুকুর এবং অন্যান্য প্রাণীদের ত্বকের অ্যালার্জি এবং চুলকানিকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
৩. লোমশ প্রাণী, যেমন কুকুর, বিড়ালদের ঘাম গ্রন্থি থাকে না এবং তাই, তাদের শরীর রং থেকে সমস্ত রাসায়নিক পদার্থ শোষণ করে, এমনকি জৈব এবং অ-বিষাক্ত লেবেলযুক্ত রঙও এদের অসুস্থতার কারণ হতে পারে।
৪. লোমশ প্রাণীরা প্রায়শই নিজেদের পরিষ্কার করতে জিভ দিয়ে গা চেটে নিজেদের ত্বক পরিষ্কার করে, সেই কারণে এই রঙ তাদের হজম পদ্ধতির জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। এতে তাদের অন্ত্রের ক্ষয় এবং ডায়রিয়াও হতে পারে।
ব্রেন সার্জারির পর কেমন আছেন সদগুরু?
অনেকক্ষেত্রেই পথকুকুর, বিড়ালরা সহজে তাদের গায়ে হাত দিতে বা ধরতে দিতে চায় না। তাই এদের গায়ে কোনো ওষুধ লাগানো অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। অনেক পথ কুকুরকে আবার ওষুধ খাওয়াতেও অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়। এছাড়া এদের এই চর্মরোগের চিকিৎসাও অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ। তাই বহু ক্ষেত্রে এই খরচ বহন করা কষ্টসাধ্য ব্যপার হয়ে দারায়।
অবলাদের রং মাখালে কী শাস্তি হতে পারে?
কোনও সারমেয়র গায়ে বিষাক্ত রাসায়নিক বা রং দিলে সেই অবলা প্রাণী যদি যন্ত্রণা পায় অথবা মৃত্যুর আশঙ্কা দেখা দেয় তবে তা কড়া শাস্তি যোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। এমন ক্ষেত্রে কখনও ১৯৭৩ সালে সিআরপিসি অনুচ্ছেদ ২ ( সি) অনুসারে সরাসরি পুলিশ অভিযোগ পেয়ে গ্রেফতার করতে পারে। আবার কখনও কিছু অভিযোগে পুলিশ সরাসরি গ্রেফতার করতে না পারলেও সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি কড়া হলে সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তকে ওই পরোয়ানার ভিত্তিতে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে। ফলে এই ধরণের নিরীহ প্রাণীকে আঘাত করা, খেতে না দেওয়া, তাদের প্রতি অত্যাচার করা বা কোনওরকম দৈহিক ও মানসিক অত্যাচার করলে সেক্ষেত্রে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে ২ বছর পর্যন্ত জেল অথবা জরিমানা অথবা উভয় শাস্তি একসঙ্গে দেওয়া হতে পারে।