প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায়, ২২ ফেব্রুয়ারি: বাংলার ছায়াছবির গান ও ছবি প্রযোজনায় মহিলাদের সংখ্যা সত্যি আজও বিরল ছিলেন মাত্র কয়েকজন এখন যারা আছে আদেরও তেমন প্রচার নেই। কিন্তু সদ্য পরলোকগত অসীমা মুখোপাধ্যায় ছিলেন হাঁতে গোনা কয়েকজনের মধ্যে অন্যতম। অসীমা ছাড়া আর যারা ছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মীতা সে, অরুন্ধুতি দেবি প্রমুখ। সত্যি জ্ঞান প্রকাশ ঘোষ ও পঙ্কজ কুমার মল্লিকের ছাত্রী অসীমা সাফল্য পেয়েছিলেন একেবারে শুরুতেই ছবির প্রযোজনায়। তার প্রযোজনায় তৈরি হয়েছিল আশাপূর্ণা দেবির কাহিনী অবলম্বনে ‘দোলনা’। এটিী ছিল তার প্রযোজিত প্রথম ছবি। আর দ্বিতীয় ছবিটি তাঁকে নিয়ে গিয়েছিল সাফল্যের শীর্ষে এবং সেটি হল চৌরঙ্গী। উত্তম কুমার অভিনীত এই ছবি আজও দর্শকদের বড় প্রিয়। চৌরঙ্গীর সুরকারও ছিলেন তিনি। উত্তম কুমারের লিপে তাঁর দেওয়া সুরে গানটি ছিল ‘বড় একা লাগে এই আধারে’। মান্না দে-র গলায় এই গান আজও দর্শকদের ভাসিয়ে নিয়ে যায়। আর ওই ছবিতে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে তাঁর সুর দেওয়া গানটি ছিল ‘জানি কোনও দিন হবে না সময়, কাছে রবে’। লিপ দিয়েছিলেন বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়। এই গানেরও সমতুল গান আজও হয়নি। অসীমার প্রযোজনায় আরও একটি ছবি আজও দাগ কাটে বাঙ্গালীর মনে তা হল ‘মেমেসাহেব’। নায়ক ছিলেন উত্তম কুমার। আর নায়িকা অপর্ণা সেন। এই ছবিতে অসীমা মান্না দে-র সঙ্গে ডুয়েট গেয়ে তাঁর প্রতিভার জাত চিনিয়েছিলেন। তবে তাঁর প্রযোজিত ‘বাঘবন্দি খেলা’ সাফল্যের শীর্ষে নিয়ে গিয়েছিল অসীমাকে। উত্তম কুমারের অভিনয় আজও দর্শককে টানে।
ফের হাওড়া স্টেশন থেকে সোনা উদ্ধার | মিলল কোটি কোটি টাকার সোনা
শুধু কি প্রযোজনা? যে সব গুরুর কাছে তালিম পেয়েছিলেন তাদের মধ্যে জ্ঞান প্রকাশ ঘোষ ও পঙ্কজ বাবুর যোগ্য ছাত্রী হিসাবে নানা গানেী তাঁর কণ্ঠ শোনা যায়। বিরেন্দকৃষ্ণ ভদ্রের ‘মহিষাসুরমর্দিনী’-তে পঙ্কজ মল্লিকের সুরে কণ্ঠ দিয়েছিলেন আরতি মুখোপাধ্যায় ও শ্যামল মিত্রের সঙ্গে। উত্তম কুমারের সঙ্গে তাঁর ছিল যেনও ভাই- বোনের সম্পর্ক। রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও প্রায়ী দেখা করতেন মহানায়কের সঙ্গে। উত্তম কুমার যেমন অসাধারণ অভিনয়ের সঙ্গে রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন বাঙালি দর্শককে। তেমনি অসীমা ছবির প্রযোজনার সঙ্গে গান গাওয়া আর ছিল অভিনয়ও। অসীমা বরাবরই তাঁর সব কাজেই ছিলেই সফল। ১৯৬৭ সালে তাঁর প্রথম গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের সুরে। আর গানটি ছিল ‘ যে গানে তোমার মন গিয়েছে ভরে’। সত্যিই সেই গানের জন্য অকুণ্ঠ প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন অসীমা। এক জন মহিলা হিসাবে তাঁর এই ভার্সাটাইল ট্যালেন্ট অবাক করেছিল উত্তম কুমারকেও। অসীমার বিয়ে হয়েছিল উত্তম কুমারের বহু ছবিতে সহ অভিনেতা হিসাবে সুদর্শন পার্থ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। পার্থ বাবু বছর ৬ আগেই প্রয়াত হয়েছেন। কিন্তু, অসীমা তখনও বেশ সচলই ছিলেন। কিন্তু ক্রমশই বয়সের ভার তাঁকে ন্যূব্জ করে দিচ্ছিল। এরপরেই তিনি পাড়ি দিলেন কোন অজানার দেশে… এধরনের সফল ব্যক্তিত্ব সত্যই এখন বড় একটা মেলেনা। এই অসীমাকেই সত্যিী কি বাঙ্গালী মনে রাখবে?