ব্যুরো নিউজ ২৩ মে : বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ফের একবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগের ইঙ্গিত দেওয়ায় নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে ‘ব্লাডি করিডর’ নামের একটি প্রকল্প ঘিরে সেনা ও সরকারের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ। সেনাপ্রধানের কাছ থেকে ইউনূসকে তিনটি কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে, যা প্রকারান্তরে হুঁশিয়ারি বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।


সেনাপ্রধানের কড়া বার্তা: বিপাকে ইউনূস

জানা গেছে, বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান মুহাম্মদ ইউনূসকে তিনটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন: প্রথমত, ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে; দ্বিতীয়ত, ইউনূস যেন সেনার বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করেন; এবং তৃতীয়ত, মায়ানমারের সঙ্গে প্রস্তাবিত ‘ব্লাডি করিডর’ বন্ধ করে দিতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে ‘ব্লাডি করিডর’ শব্দের এই কঠোর প্রয়োগ মুহাম্মদ ইউনূসের দুর্বলতাকে জনসমক্ষে এনে দিয়েছে। এর আগে ছাত্রদের তৈরি নতুন রাজনৈতিক দল NCP-এর লাগাতার ক্ষমতা প্রদর্শনের জেরেও মুহাম্মদ ইউনূসকে কোণঠাসা হতে হয়েছিল। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ইউনূস গত ৯ মাসে উপদেষ্টা প্রধানের পদে বসে খুব একটা শান্তি পাননি বলেই মনে করা হচ্ছে। এখন তার গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ‘ব্লাডি করিডর’।

‘অপারেশন সিঁদুর’ এর সর্বদলীয় প্রতিনিধিদলে থাকছেন না ইউসুফ পাঠান, তৃণমূল সাংসদের সিদ্ধান্ত


‘ব্লাডি করিডর’ কী?

মুহাম্মদ ইউনূসের সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম এই করিডরটি বাংলাদেশ ও মায়ানমারকে সংযুক্ত করার কথা ছিল। এর আসল নাম ‘চট্টগ্রাম-রাখাইন করিডর’। বাংলাদেশ থেকে মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ পাঠানোর উদ্দেশ্যে এই করিডর নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছিল। তবে, মুহাম্মদ ইউনূসের বিদেশ বিষয়ক পরামর্শদাতা তৌহিদ হুসেন সেনার সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই একতরফা ঘোষণা করেন যে, অন্তর্বর্তী সরকার আমেরিকার প্রস্তাবিত রাখাইন করিডর নির্মাণে সম্মত। তৌহিদের এই বক্তব্য বাংলাদেশ সেনাকে অগ্রাহ্য করার সমান ছিল। তখন থেকেই প্রশ্ন উঠেছিল, আদৌ এই করিডর তৈরি সম্পন্ন হবে কিনা। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ মহলে এমন ধারণাও আলোচিত হচ্ছে যে, আমেরিকা তার সামরিক এবং ভূ-রাজনৈতিক ফায়দার জন্যই এই প্রকল্পটি তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে।


সেনা ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ

বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরাও এই রাখাইন করিডর নির্মাণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, রাখাইন অঞ্চলে আরাকান সেনার মতো বিদ্রোহীদের গতিবিধি এবং মায়ানমারে তাদের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সম্প্রতি বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে আরাকান সেনার একাধিক ঘাঁটিতে তাদের কব্জা করার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। সীমান্ত পারে হাতিয়ার পাচার, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এবং অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। দ্বিতীয়ত, রোহিঙ্গাদের নতুন করে অনুপ্রবেশ নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, রাখাইন করিডর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পরিস্থিতি আরও জটিল করে দিতে পারে। বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছেন। করিডর খুলে গেলে মায়ানমার থেকে বিপুল সংখ্যক শরণার্থী বাংলাদেশে এসে হাজির হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আন্তর্জাতিক মহলের একাংশ মনে করছে, মুহাম্মদ ইউনূস বিনা ভোটে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে মার্কিন চাপের কাছে মাথা নত করছেন।


বাংলাদেশের সেনার তীব্র বিরোধিতা

এই করিডর নির্মাণকে ‘রেড লাইন’ অতিক্রম করার সমান ধরেছে বাংলাদেশ সেনা। প্রকাশ্যে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন তারা। ইউনূসকে হুঁশিয়ারি দিয়ে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, “বাংলাদেশের সেনা এমন কোনো কার্যকলাপে অংশ নেবে না যা দেশের জন্য ক্ষতিকারক। কাউকেই এমনটা করার অনুমতিও দেওয়া হবে না।” সেনাপ্রধান চান না যে, এই করিডর তৈরির মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ ক্রমশই মায়ানমারের গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ুক।

মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে একযোগে কাজ করা সমস্যাজনক হয়ে পড়ছে। বৃহস্পতিবার (২২ মে, ২০২৫) অ্যাডভাইসরি কাউন্সিলের বৈঠকে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

কলকাতায় তিরঙ্গা যাত্রা ,বিএসএফ জওয়ান মুক্তি, ভুয়ো খবর দমন, সন্ত্রাসবাদ নিপাতন : মোদীর নেতৃত্বে দেশ সুরক্ষিত দাবি শুভেন্দু অধিকারীর


ঢাকার ক্যান্টনমেন্টে উত্তেজনা

এই করিডরের উদ্দেশ্য গৃহযুদ্ধ এবং ভূমিকম্পের কারণে জর্জরিত লক্ষ লক্ষ শরণার্থীদের সাহায্য পৌঁছে দেওয়া বলে উল্লেখ করা হলেও, সেনাপ্রধান তা মানতে নারাজ।

এদিকে, গত তিন দিন ধরেই ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেখানে সশস্ত্র পাহারা জোরদার করা হয়েছে। অপরিচিত পথচারীদের দেহতল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের পরেই যেতে দিচ্ছেন সেনা জওয়ানরা। বাংলাদেশকে করিডর হিসেবে ব্যবহারে সম্মতি দেওয়াকে কেন্দ্র করে সেনা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে এতদিন ধরে জমা বারুদে অগ্নিসংযোগ হল বলেই মনে করা হচ্ছে। ফলে বিস্ফোরণ এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা।

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর