ব্যুরো নিউজ ২৮শে আগস্ট ২০২৫ : ভারতের আসন্ন উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের মধ্যে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। এর সূত্রপাত হয় যখন ১৮ জন প্রাক্তন বিচারপতির একটি দল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের একটি মন্তব্যের কঠোর বিরোধিতা করে। অমিত শাহ প্রাক্তন বিচারপতি বি. সুদর্শণ রেড্ডিকে সলওয়া জুডুম রায় নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন। প্রাক্তন বিচারপতির দলটি এই মন্তব্যকে “দুর্ভাগ্যজনক” বলে অভিহিত করে এবং সতর্ক করে যে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের এ ধরনের “পক্ষপাতমূলক ভুল ব্যাখ্যা” বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করতে পারে।
বিবৃতির বিরুদ্ধে পাল্টা বিবৃতি: ৫৬ জন প্রাক্তন বিচারপতির কঠোর প্রতিক্রিয়া
১৮ জন বিচারপতির এই বিবৃতি প্রকাশের পর তার বিরুদ্ধে শক্তিশালী পাল্টা প্রতিক্রিয়া আসে। মঙ্গলবার ৫৬ জন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির একটি বৃহৎ জোট, যার মধ্যে ভারতের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি পি. সতশিবম এবং রঞ্জন গগৈ সহ সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি এ.কে. সিকরি এবং এম.আর. শাহ-ও অন্তর্ভুক্ত, একটি কড়া চিঠি প্রকাশ করে। তারা তাদের সহকর্মীদের বিরুদ্ধে “বিচারিক স্বাধীনতার আড়ালে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব” করার অভিযোগ আনেন এবং সতর্ক করেন যে এ ধরনের কাজ বিচার বিভাগের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করে।
রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
৫৬ জন প্রাক্তন বিচারপতির এই গোষ্ঠী, যার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচজন বিচারপতিও আছেন, বলেন, “এই ধরনের বিবৃতি বিচারিক স্বাধীনতার আড়ালে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বকে লুকিয়ে রাখতে চায়। এটি সেই প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি বড় ক্ষতি যা আমরা একসময় সেবা করেছি, কারণ এটি বিচারপতিদের রাজনৈতিক অভিনেতা হিসাবে তুলে ধরে।” তারা বলেন, “যারা রাজনীতির পথ বেছে নিয়েছেন, তারা যেন সেই অঙ্গনেই নিজেদের রক্ষা করেন,” এবং যোগ করেন যে বিচার বিভাগকে এই ধরনের রাজনৈতিক বিতর্ক থেকে দূরে রাখা উচিত।
সলওয়া জুডুম বিতর্ক: যা বলছে উভয় পক্ষ
বিচারপতি রেড্ডি’র সলওয়া জুডুম সংক্রান্ত রায়ের সমালোচনা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সলওয়া জুডুম ছিল ছত্তিশগড়ি উপভাষায় “শুদ্ধিকরণ”, যার উদ্দেশ্য ছিল গ্রামের সশস্ত্র বাহিনী তৈরি করে নকশালদের বিরুদ্ধে লড়াই করা। নকশালরা ওইসব এলাকায় স্থানীয়দের জন্য বড় ধরনের নিরাপত্তার হুমকি ছিল। তৎকালীন ছত্তিশগড় প্রশাসন এই স্থানীয় বাহিনীর নিয়োগ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেছিল। এই পরিস্থিতিতে কিছু মানবাধিকার গোষ্ঠী সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন জানায়। তৎকালীন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বি. সুদর্শণ রেড্ডি এই মামলাটি হাতে নেন এবং সলওয়া জুডুম আন্দোলনের বিরুদ্ধে রায় দেন, যার ফলে স্থানীয়দের নকশালদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সরকারের উদ্যোগ ব্যাহত হয়। এই রায়ের জন্যই অমিত শাহ উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী বিচারপতি রেড্ডির সমালোচনা করেন, কারণ তার মতে এই রায় নকশাল আন্দোলনের পক্ষে গিয়েছিল।
Vice President Election : সিপি রাধাকৃষ্ণনকে উপরাষ্ট্রপতি প্রার্থী করল এনডিএ, বিরোধী জোট বিভক্ত
বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা বনাম রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা
৫৬ জন প্রাক্তন বিচারপতির মূল আপত্তির মধ্যে রয়েছে বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হওয়া। তাদের মতে, বিচারপতিদের রাজনৈতিক এজেন্ট হিসেবে চিত্রিত করা বিচারিক পদের মর্যাদা এবং নিরপেক্ষতাকে ক্ষুণ্ন করে। তারা জোর দিয়ে বলেন, বিচারপতি রেড্ডি একজন রাজনৈতিক প্রতিযোগী হিসেবে তার সিদ্ধান্তের জন্য রাজনৈতিক বিতর্কের ক্ষেত্রে জবাবদিহি করতে বাধ্য, বিচারিক স্বায়ত্তশাসনের আড়ালে তা রক্ষা করতে পারেন না। অন্যদিকে, ১৮ জন প্রাক্তন বিচারপতি, যাদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি ক্যুরিয়েন জোসেফ, মদন বি. লোকুর এবং জে. চেলামেশ্বর রয়েছেন, নির্বাচনী সময়ে সৌজন্য ও সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানান। তারা আদালতের সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যার সঠিকতার ওপর জোর দেন। এই বিতর্ক ভারতের বিচারিক সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাজন তুলে ধরেছে এবং বিচারিক স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণের সীমানা নিয়ে বৃহত্তর প্রশ্ন তৈরি করেছে।