ব্যুরো নিউজ, ১২ জুলাই: কেন্দ্রীয় সরকার বরাদ্দ টাকা দিচ্ছে না। বাংলাকে বঞ্চনা করছে। ধারাবাহিকভাবে এই কথাটি পশ্চিমবঙ্গের সরকার এবং তৃণমূল কংগ্রেসের কাছ থেকে বারে বারে শোনা যায়। আর প্রতিটি ভোটের প্রচার থেকে শুরু করে বিভিন্ন মিটিং মিছিলে বারেবারে শুধু এই কথাই তুলে ধরা হয়। কেন্দ্র বঞ্চনা করছে বাংলাকে। কিন্তু এটা তো স্বাভাবিক, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বাংলার জন্য বরাদ্দ যে টাকা পাঠানো হচ্ছে, তার হিসাব তো সঠিক সময়ে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী পেশ করতে হবে। কেন্দ্র সেই বরাদ্দের হিসাব যদি না পায়, তাহলে কোন পদ্ধতিতে পরবর্তী ক্ষেত্রে টাকা বরাদ্দ করতে পারে?
কোন জেলায় কত পরিমান টাকা পড়ে রয়েছে
রাজ্যের কোষাগারের পরিস্থিতি একেবারেই ভালো নয়। এটা খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানেন। রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহল এই বিষয়ে ওয়াকিবহাল। এবার খোঁজ করতে গিয়ে জানা গেল, নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পঞ্চায়েত দপ্তরের সমস্ত কাজ করার নির্দেশ দিলেও গ্রামাঞ্চলে একেবারে তৃণমূল স্তরে সেই নির্দেশ পৌঁছছে না। ধরে নেওয়া যেতে পারে, মুখ্যমন্ত্রীর কথাই শুনছে না জেলা প্রশাসন। এরকম পরিস্থিতি হল কেন? এই বিষয়টি উঠে আসছে একটি কারণে, এখনো পর্যন্ত রাজ্যের জেলা পরিষদগুলোতে যে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, পরিকাঠামো উন্নয়ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা দেওয়ার জন্য, তার মধ্যে অধিকাংশ টাকাই এখনো পর্যন্ত সমস্ত জেলা পরিষদে পড়ে আছে। যা খরচই করতে পারেনি জেলা পরিষদগুলো।
Bank নাকি Post Office!কষ্ট করে রোজগার করা টাকা কোথায় ইনভেস্ট করলে বেশি লাভবান হবেন, দেখুন
নিয়ম অনুযায়ী, জেলা পরিষদ বরাদ্দ টাকা পাওয়ার পরে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের মাধ্যমে এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়ন, রাস্তা তৈরি, পানীয় জলের প্রয়োজন মেটানোর জন্য নলকূপ তৈরি, নর্দমা নিকাশি ব্যবস্থার সংস্কার সহ অন্যান্য পরিষেবা ভিত্তিক প্রয়োজনে এই টাকা প্রান্তিক মানুষদের জন্য খরচ করে থাকে। একটি পরিসংখ্যান দেখলে দেখতে পাওয়া যাবে, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদে পড়ে আছে ১৭৭ কোটি টাকা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদে ২৫২ কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। আবার হাওড়া জেলা পরিষদে ১২১ কোটি টাকা পড়ে আছে। শুধু তাই নয়, নদীয়া, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, দার্জিলিং সহ বহু জেলা পরিষদে ১০০ কোটি টাকার উপরে প্রায় গড়ে পড়ে রয়েছে। যা এখনো পর্যন্ত সেই জেলা পরিষদের অধীনে থাকা সমিতি এবং পঞ্চায়েতগুলোতে কোনো কাজেই লাগানো সম্ভব হয়নি।
শাহজাহানের পর জেসিবি,জয়ন্ত! বাংলা জুড়ে তালিবানি শাসন, শাহের দরবারে নালিশ শুভেন্দুর
আর এই ব্যর্থতা স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেওয়া যায় রাজ্য সরকারের। একদিকে বলা হচ্ছে, কোষাগারে টাকা নেই, কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না, আবার যে বরাদ্দ অর্থ ধার্য করা হচ্ছে, জেলার গ্রামাঞ্চলের কাজের জন্য, সেই টাকা দিয়ে জেলা প্রশাসন কাজও করছে না। অর্থ কমিশনের বরাদ্দ টাকা রাজ্যগুলিতে জেলার গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে খরচের জন্য বরাদ্দ করা হয়ে থাকে। সম্প্রতি পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী প্রায় ১৮০০ কোটি টাকা রাজ্যে ঢোকার কথা রয়েছে। কিন্তু সেই টাকা ঢোকার আগে আগের যে টাকা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের তরফে, তার হিসাব স্বাভাবিকভাবেই তলব করছে কেন্দ্রীয় সরকার।
নিয়মানুযায়ী রাজ্য সরকারকে সেই হিসাব দিতেই হবে। আর এরকম একটা পরিস্থিতিতে জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের কাজকর্ম একেবারে তলানিতে ঠেকে যাওয়ার কারণে মুখ্যমন্ত্রী সোমবার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ডেকেছেন। সেখানে পঞ্চায়েত দপ্তরের সচিব পি উলগানাথন প্রতিটি জেলা শাসকের কাছে এই বিষয়ে কৈফিয়ৎ তলব করবেন বলেই জানা যাচ্ছে। এবার প্রশ্ন উঠতেই পারে, সরকার কোন পদ্ধতিতে চলছে, যেখানে নির্দেশ দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যস্তর থেকে, অথচ জেলা পরিষদ, সমিতি, গ্রাম পঞ্চায়েতের মতো তৃণমূল স্তরে গিয়ে প্রান্তিক মানুষরা সেই সাহায্য পাচ্ছেন না। মুখ্যমন্ত্রীর সদিচ্ছা নিয়েও এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। কারণ এই ঘটনা তো একদিনে তৈরি হয়নি। দীর্ঘদিন ধরেই এই পরিস্থিতি চলার কারণে আজকে এত টাকা বিভিন্ন জেলা পরিষদে পড়ে রয়েছে। যার পরিকল্পনা পর্যন্ত করা হয়েছে কিনা সেই বিষয়টিও জানতে চাওয়া হতে পারে সরকারের তরফে, এমনটাই জানা যাচ্ছে।