ব্যুরো নিউজ, ২৫ ফেব্রুয়ারি:কখনও শুনেছেন শরীরে পাঁচটি কিডনি থাকার কথা? বিশ্বাস না হলেও, এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একজন বিজ্ঞানীর সঙ্গে। ৪৭ বছরের দেবেন্দ্র বারলেওয়ার, যিনি বর্তমানে ফরিদাবাদের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাঁর শরীরে কিডনির সংখ্যা পাঁচটি। তবে এর মধ্যে একটিই সক্রিয়, বাকিরা অকেজো। এই কিডনি প্রতিস্থাপন নিয়ে নানা ধরনের জটিলতা এবং চিকিৎসার প্রক্রিয়া এ এক বিরল চিকিৎসা উদাহরণ।দেবেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (CKD)-এ আক্রান্ত ছিলেন এবং বছর বছর তাঁর কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হত। এরই মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে তাঁকে একের পর এক কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হয়, যার ফলে তাঁর শরীরে পাঁচটি কিডনি রয়েছে। এমনকি, এর মধ্যে একটির অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে সেটি বাদ দিতে হয়েছিল।
অসমে শিল্প বিপ্লবঃ টাটার হাত ধরে গড়ে উঠছে নতুন ভবিষ্যত
প্রথম কিডনি প্রতিস্থাপন
২০১০ সালে দেবেন্দ্রের প্রথম কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। তাঁর মা ছিলেন প্রথম দাতা। কিডনি প্রতিস্থাপন সফল হলেও, এক বছরের মধ্যে ডায়ালিসিসের প্রয়োজন পড়ে এবং কিডনি নতুন করে অকেজো হয়ে যায়। এরপর ২০১২ সালে, দেবেন্দ্রের এক আত্মীয় দ্বিতীয় কিডনি দান করেন। দ্বিতীয় কিডনি প্রায় ১০ বছর পর্যন্ত চলেছিল, তবে ২০২২ সালে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর সেই কিডনি আবারও অকেজো হয়ে পড়ে।
তৃতীয় কিডনি প্রতিস্থাপন
এরপর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে, ব্রেন ডেথ (মস্তিষ্কের মৃত্যু) হওয়া এক রোগীর কিডনি দেবেন্দ্রের শরীরে প্রতিস্থাপিত হয়। এর ফলে তাঁর শরীরে কিডনির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচটি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তৃতীয় কিডনি প্রতিস্থাপন একটি অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া ছিল। প্রায় চার ঘণ্টার দীর্ঘ অস্ত্রোপচারের পর, দাতার শরীর থেকে নেওয়া কিডনি বর্তমানে সঠিকভাবে কাজ করছে এবং দেবেন্দ্রের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে।
কেন পুরনো কিডনি বাদ দেওয়া হয়নি?
বেশি সংখ্যক কিডনি শরীরে থাকার পরও পুরনো কিডনিগুলি বাদ দেওয়া হয়নি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নতুন কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে তলপেটের কাছে ‘ইলিয়াক ফোসা’ অঞ্চলে। পুরনো কিডনিগুলি বের করার চেষ্টা করলে শরীরে প্রচণ্ড রক্তপাত হতে পারে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যেত। তাই পুরনো কিডনিগুলি না সরিয়েই নতুন কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, যাতে ঝুঁকি কম থাকে এবং রোগী দ্রুত সুস্থ হতে পারেন।
অন্ধ্রপ্রদেশের বাজেট অধিবেশন চলবে মার্চ ২১ পর্যন্ত, ২৮ ফেব্রুয়ারি জমে উঠবে বাজেট প্রস্তাবনা
এটি একটি বিরল চিকিৎসা উদাহরণ
এ ধরনের চিকিৎসা প্রক্রিয়া বিরলতম, যেখানে শরীরে এতগুলি কিডনি থাকা সত্ত্বেও রোগী সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দেবেন্দ্রর মতো রোগী বাঁচার জন্য অনেক ধৈর্য ও সময়ের প্রয়োজন, কারণ প্রতিস্থাপনের পরেও নতুন কিডনি শরীরে কাজ করতে শুরু করতে কিছু সময় লাগে। তবে বর্তমানে দেবেন্দ্র ভাল আছেন এবং তাঁর শারীরিক অবস্থাও স্থিতিশীল।এটি শুধুমাত্র একটি বিরল ঘটনা নয়, বরং চিকিৎসাবিজ্ঞানে একটি অভাবনীয় জয়। এমন প্রতিস্থাপন শুধু চিকিৎসকদের দক্ষতা এবং রোগীর সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করে, কিন্তু এটা আরও প্রমাণ করে যে, বিজ্ঞান এবং চিকিৎসা প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে এমন পরিস্থিতিতেও সুস্থ জীবনযাপন সম্ভব।