ব্যুরো নিউজ, ১ এপ্রিল,সম্পাদকীয় স্বপন দাস : রাজা কৃষ্ণচন্দ্র সনাতন ধর্মকে রক্ষা করেছিলেন। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র সম্পর্কে যে কুৎসা করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে তা এই প্রতিবেদনে পাঠ করলেই বুঝতে পারবেন।
পুজো দিতে গিয়ে আদালত খ্যাত রণিত রায়ের সঙ্গে ঘটল অদ্ভুত অভিজ্ঞতা! কী হল সেখানে?
নদীয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়(১৭১০-১৭৮৩) ছিলেন বিদ্বান, সংগীত রসিক এবং তিনি নিজেই সংস্কৃত ও ফার্সি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন । তার রাজসভায় রামপ্রসাদ সেন ,রায়গুনাকর ভারতচন্দ্র , রশিদ গোপাল ভাঁড়ের মত বিদ্দজনরা আলো করে থাকতেন । তারই অনুপ্রেরণায় রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র অন্নদামঙ্গল কাব্য লিখেছিলেন । তাঁর রাজত্বকালে তিনটে খুব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল এক পলাশীর যুদ্ধ ,দুই ৭৬ এর মন্বন্তর, তিন বর্গী হামলা । এর মধ্যে পলাশীর যুদ্ধে তার অবস্থান নিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই কুৎসা করা হয় ।
প্রথমেই এটা বলে রাখা ভালো যে সিরাজউদ্দৌলার সঙ্গে থাকলে আপনি দেশপ্রেমীক আর না থাকলে দেশবিরোধী এই ধরনের কোন ঐতিহাসিক বিবৃতির সঙ্গে সহমত পোষণ করা মানেই ইতিহাসকে বিকৃত জানা।
প্রথমত ইতিহাসের বিকৃতি এটা যে সিরাজউদ্দৌলা খুব ভালো মানুষ ছিলেন এবং তিনি বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব ছিলেন ।
সিরাজ কখনোই বাঙালী ছিলেন না তিনি ছিলেন তুর্কি জাতির লোক সিরাজের দাদু ছিল আলীবর্দী খান । এই আলীবর্দী খানের তিন মেয়ে ছিল আর এই তিন মেয়ের বিয়ে দেয় তারই বড় ভাই হাজী আহমেদের তিন ছেলের সঙ্গে। বাঙালির ঘরে কোনদিন শুনেছেন যার জেঠতোতো খুঁড়তোতো ভাই বোনের মধ্যে এইভাবে হোলসালে বিয়ে ।
সিরাজের দাদু আলীবর্দির বাবা ছিলেন মির্জা মোহাম্মদ যিনি ছিলেন তুর্কি বংশোদ্ভুত । আবার মির্জা মোহাম্মদ এর বউ মানে সিরাজের ঠাকুরমা ছিল ইরানের খোরাসানের এক তুর্কি উপজাতির মেয়ে । ফলে কোন দিক থেকেই সিরাজ বাঙালি ছিলেন না ।
সিরাজউদ্দৌলা কেমন মানুষ ছিলেন তার কিছু তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
১) নবাব সিরাজউদ্দৌলা সম্পর্কে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর “বাঙ্গলার ইতিহাস “প্রথম অধ্যায় বইতে লিখলেন—– সিরাজউদ্দৌলা সিংহাসনে অধীরূড় হইয়া, মাতামহের পুরান কম্মচারী ও সেনাপতি দিগকে পদচ্যুত করিলেন কুপ্রবৃত্তির উত্তেজক কতিপয় অল্পবয়স্ক দুষ্ক্রিয়াসক্ত ব্যক্তি তাহার প্রিয়পাত্র ও বিশ্বাসভাজন হইয়া উঠিল। তাহারা প্রতিদিন তাহাকে কেবল অন্যায্য ও নিষ্ঠুর ব্যাপারে অনুষ্ঠানে পরামর্শ দিতে লাগিল। ওই সকল পরামর্শের এই ফল দর্শীয়াছিল যে তৎকালে প্রায় কোনো ব্যক্তির সম্পত্তি বা কোন স্ত্রীলোকের সতীত্ব রক্ষা পায় নাই।
২) পলাশীর যুদ্ধ কাব্যের প্রথম সর্গে নবীনচন্দ্র স্পষ্ট লিখেছেন —
যবনের অত্যাচার করি দরশন,
বিমল হৃদয় পাছে হয় কলুষিত,
ভয়েতে নক্ষত্র-মালা লুকায়ে বদন,
নীরবে ভাবিছে মেঘ হয়ে আচ্ছাদিত।
৩) সিরাজের সমকালীন ঐতিহাসিক গোলাম হোসেন সিরাজের অত্যাচারে মানুষের অভীষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনা বর্ণনা করেছেন।
৪) স্যামুয়েল চার্লস তাঁর Bengal in 1756-1757 বইতে সিরাজের অত্যাচারের কথা উল্লেখ করেছেন
৫) ইবরাত -ই -আরবাব -ই – বসর গ্রন্থে সিরাজকে লঘুচিত্ত ,একগুঁয়ে, বদমেজাজি , অধীর ও মুখ খারাপ এবং কাউকে রেহাই দিয়ে কথা বলতো না বলা হয়েছে ।
৬) “সিয়ার উল মুতাখখিরিন”- গ্রন্থে বলা হয়েছে সিরাজ কর্কশ ও অভদ্র কথাবার্তা এবং সরকারি কর্মচারীদের ঠাট্টা ও উপহাস করায় সকলের মনে বিরাট ক্ষোভ ছিল
৭) সিরাজের পুত্র ও বংশধরদের সন্ধানে- অমলেন্দু দে লেখা এই বইটি পড়লে বুঝতে পারবেন যে সিরাজ কি ধরনের স্বৈরাচারী ছিল
এরকম অসংখ্য প্রমাণ কে আড়াল করে একশ্রেণীর ইতিহাসবিদ মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র কে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করেছেন সিরাজকে মহিমান্বিত করার জন্য।
সুতরাং এটা প্রমাণিত সত্য যে সিরাজের বিরোধিতা করে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন। পলাশীর যুদ্ধে বাংলা পরাধীন হয়নি। আমরা পরাধীনই ছিলাম শুধুমাত্র প্রভুবদল হয়েছে। মধ্য এশীয় প্রভুদের হাত থেকে ব্রিটিশ প্রভুদের হাতে।
আমি শুধু এটা দিয়ে শেষ করব যে আপনি যদি দেখেন যে আপনার প্রতিবেশীর হাতে আপনার জীবন সম্পত্তি বিপন্ন, অর্থাৎ আপনার প্রতিবেশী আপনাকে ধনে-প্রাণে মারতে চায় এবং আপনার স্ত্রীর সম্ভ্রম লুট হতে পারে যেকোনো সময় সেই প্রতিবেশীর দ্বারা, তাহলে সেই প্রতিবেশীকে যদি বাইরের কেউ আক্রমণ করে তবে তাকে রক্ষা করাটা অবিবেচকের মত কাজ হবে । মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র এই অবিবেচকের মত কাজটি করেননি।
তাই সেই পরিবারের বর্তমান রাজমাতা অমৃতা রায় কে? যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছেন তাদের এই অপপ্রয়াস ব্যর্থ হবে। কারণ রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় সনাতনের রক্ষক হিসেবে ইতিহাসে পাতায় গৌরবান্বিত হয়ে আছেন।