ব্যুরো নিউজ ,৫ মে: ভারতের সামরিক পরিকাঠামোর বিরুদ্ধে নয়া সাইবার যুদ্ধের আশঙ্কা জাগাচ্ছে একাধিক হ্যাকিং প্রচেষ্টা। সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট অনুযায়ী, পাকিস্তানভিত্তিক হ্যাকার গোষ্ঠী ‘পাকিস্তান সাইবার ফোর্স’ দাবি করেছে, তারা ভারতের গুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংবেদনশীল তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে। এই ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে দেশের প্রতিরক্ষা মহলে।
ওয়েবসাইট বিকৃত করার চেষ্টা
জানা গেছে, ‘মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস’ (MES) এবং ‘মনোহর পর্রিকর ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ় অ্যান্ড অ্যানালিসিস’ (MP-IDSA) থেকে গোপন সামরিক তথ্য চুরির দাবি করেছে হ্যাকাররা। সেই সঙ্গে ভারতের সরকারি মালিকানাধীন সংস্থা ‘আরমার্ড ভেহিকল নিগম লিমিটেড’ (AVNL)-এর ওয়েবসাইট বিকৃত করারও চেষ্টা করা হয়েছে। সাইবার আক্রমণের পর পরই নিরাপত্তার খাতিরে AVNL-এর ওয়েবসাইটটি আপাতত ‘অফলাইন’ করে দেওয়া হয়েছে।
আজ থেকে জোকা-মাঝেরহাট মেট্রোতে দ্বিগুণ ট্রেন! পরিষেবা বৃদ্ধিতে নয়া উদ্যোগ মেট্রোর
হ্যাকারদের সমাজমাধ্যম পেজে পোস্ট করা স্ক্রিনশট অনুযায়ী, বিকৃত ওয়েবসাইটে পাকিস্তানের পতাকা এবং সামরিক ট্যাঙ্কের ছবি বসানো হয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি শুধু হ্যাকিং নয়, মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে অংশ বিশেষ—ভারতের সামরিক মনোবলে আঘাত হানার উদ্দেশ্যে।এএনআই সূত্র জানাচ্ছে, এই হ্যাকিং প্রচেষ্টার ফলে কিছু প্রতিরক্ষা কর্মীর ব্যক্তিগত তথ্য এবং লগ-ইন ডেটা ফাঁস হয়ে থাকতে পারে। তবে বড়সড় ক্ষয়ক্ষতির আগে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়ায় ক্ষতির মাত্রা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এখনও পর্যন্ত দেশের কোনও গুরুত্বপূর্ণ সার্ভার বা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মূল স্তরে প্রবেশ করতে পারেনি হ্যাকাররা।
পহেলগাঁও হামলার নেপথ্যে স্থানীয় স্লিপার সেলের জাল!দাবি করলেন এক প্রাক্তন কাশ্মীরি জঙ্গির
এই ঘটনা পহেলগাঁও হামলার ঠিক পরপরই সামনে এল, যখন ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক একপ্রকার তলানিতে এসে ঠেকেছে। কূটনৈতিক মহলে অনুমান, এই সাইবার আক্রমণ শুধুমাত্র তথ্য চুরির উদ্দেশ্যে নয়, বরং একটি সংগঠিত প্রচেষ্টা—যা ভারতীয় সামরিক গোপনীয়তা ও মর্যাদায় আঘাত হানার চেষ্টা করছে।এদিকে, জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (NIA) সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ‘Internet of Khilafah’ বা ‘IoK’ নামে একটি হ্যাকার গোষ্ঠীর নামও উঠে এসেছে সাম্প্রতিক একাধিক সাইবার আক্রমণে। অন্তত চারটি ঘটনায় তারা ভারতীয় সেনার বিভিন্ন ওয়েবসাইট বিকৃত করার চেষ্টা চালিয়েছে। যদিও প্রতিবারই ভারতীয় সাইবার নিরাপত্তা বলয় সফলভাবে প্রতিরোধ গড়েছে।
এইসব আক্রমণ শুধু সরকারি ওয়েবসাইট বিকৃত করেই থেমে থাকেনি, বরং ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়াল অফ সার্ভিস (DDoS) আক্রমণ, ফিশিং এবং তথ্য হাতানোর চেষ্টাও হয়েছে একাধিকবার। ফলে প্রতিরক্ষা দপ্তর এখন আরও শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলছে, যাতে ভবিষ্যতের আক্রমণ আগেভাগে রোখা যায়।সাইবার যুদ্ধ এখন আর কল্পনার বিষয় নয়। আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে তথ্যই হচ্ছে সবচেয়ে বড় অস্ত্র। আর এই তথ্য রক্ষার লড়াইয়ে ভারতকে লড়তে হচ্ছে দেশি-বিদেশি হ্যাকারদের বিপুল চাপে। প্রতিরক্ষা মহলের মতে, কেবল প্রযুক্তিগত সক্ষমতাই নয়, প্রয়োজন আরও কঠোর নীতি, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং অভ্যন্তরীণ নজরদারি।
এই সাইবার চ্যালেঞ্জের মুখে ভারতের প্রতিরক্ষা অবকাঠামো কতটা নিরাপদ, তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। তবে আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, ভবিষ্যতের সাইবার হামলা ঠেকাতে সরকার এবং প্রতিরক্ষা দপ্তরকে আরও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।