ব্যুরো নিউজ ১৮ই আগস্ট ২০২৫ : বিহারের ভোটার তালিকায় একটি সাধারণ কেরানি ভুলের কারণে নিজের বয়স ১২৪ বছর হিসেবে দেখে ক্ষুব্ধ মিনতা দেবী এখন রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোটের নেতারা তাঁর নাম এবং কথিত বয়স ব্যবহার করে যে রাজনৈতিক প্রতিবাদ করছেন, তার বিরুদ্ধে সরাসরি মুখ খুলেছেন তিনি। কংগ্রেস নেতা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রার নেতৃত্বে ইন্ডিয়া জোটের সাংসদরা পার্লামেন্টের বাইরে ‘১২৪ নট আউট’ লেখা টি-শার্ট পরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন।
‘আমাকে টি-শার্টে ব্যবহারের অধিকার কে দিল?’
৩৫ বছর বয়সী মিনতা দেবী, যিনি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার বিষয়, তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, “আমি ২-৪ দিন আগে এই বিষয়ে জানতে পারি… ওরা (বিরোধী সাংসদরা) আমার কে হয়? প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বা রাহুল গান্ধীই বা আমার কে? আমাকে টি-শার্টে ব্যবহার করার অধিকার তাদের কে দিল?… আমি মনে করি তালিকায় ত্রুটি আছে… প্রশাসনের কেউ আমাকে ফোন করেনি… কেন তারা আমার বয়স নিয়ে শুভাকাঙ্ক্ষী সাজছেন?… এটা করা উচিত নয়, আমি এটা চাই না।”
তিনি আরও বলেন, “আমি চাই আমার বিবরণ সংশোধন করা হোক… যে ব্যক্তি এই তথ্য প্রবেশ করিয়েছেন, তিনি কি চোখ বন্ধ করে এটা করেছেন?… সরকার যদি আমাকে ১২৪ বছর বয়সী মনে করে, তাহলে তারা আমাকে বৃদ্ধ বয়সের পেনশন দিচ্ছে না কেন? আমার আধার কার্ডে আমার জন্ম তারিখ ১৫-০৭-১৯৯০ উল্লেখ করা আছে।”
মিনতা দেবীর বক্তব্য ও আসল সত্য:
মিনতা দেবী জানান যে, তিনি প্রথমবারের মতো ভোটার হতে পেরে খুশি, কিন্তু এই ভুলের জন্য তাকে রাজনৈতিক বিতর্কের শিকার হতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আমাকে দিদা বানিয়ে দিয়েছে’। যদিও তিনি মজার ছলে বলেন যে, সরকার যদি তাঁকে ১২৪ বছর বয়সী মনে করে, তবে তাকে বৃদ্ধ বয়সের পেনশন দেওয়া উচিত। তাঁর স্বামী ধনঞ্জয় কুমার সিং-এর নাম ভোটার তালিকায় বাড়ির নম্বরের জায়গায় ভুলবশত লেখা হয়েছে।
সিওয়ান জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, এই ভুলের জন্য মিনতা দেবী নিজেই আংশিক দায়ী। তিনি অনলাইনে ফর্ম পূরণ করার সময় নিজের জন্ম সাল ভুল করে ‘১৯৯০’-এর বদলে ‘১৯০০’ লিখেছিলেন। তবে, প্রশাসন এই ভুলটি চিহ্নিত করার পর ১০ আগস্ট তাঁর কাছ থেকে ফর্ম-৮ সংগ্রহ করে সংশোধন প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
রাজনৈতিক বিতর্ক ও ইন্ডিয়া জোটের উদাসীনতা:
বিরোধী দল ইন্ডিয়া জোটের নেতারা এই সাধারণ কেরানি ভুলকে ‘ভোট চুরি’ আখ্যা দিয়ে রাজনৈতিক নাটক তৈরি করেছেন। রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেছেন, এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং বিহারে আসন্ন নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকায় বড় ধরনের কারচুপির অংশ।
এই ঘটনাটি ইন্ডিয়া জোটের উদাসীনতাকে তুলে ধরেছে। তারা একটি সাধারণ নাগরিককে প্রশাসনিক ভুলের শিকার হিসেবে তুলে ধরেছেন, কিন্তু এই ভুলের কারণ অনুসন্ধান না করেই রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করেছেন। রাজনৈতিক স্বার্থে মিনতা দেবীর ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি এবং নাম ব্যবহার করে তারা একজন সাধারণ নাগরিককে দুর্ভোগের মধ্যে ঠেলে দিয়েছেন। এটি কেবল প্রশাসনিক ত্রুটি নয়, বরং রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বজ্ঞানহীনতারও উদাহরণ। ভোটারদের বিশ্বাস ও অধিকার রক্ষার পরিবর্তে, তারা একটি ছোট ভুলের উপর ভিত্তি করে সংবিধানের প্রতিশ্রুত ভোটার সততাকে ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছেন।
নির্বাচন কমিশনের প্রতিক্রিয়া:
নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগগুলো দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে যে, চলমান এসআইআর প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে। কমিশন জানায়, এটি একটি বিচ্ছিন্ন কেরানি ভুল, কোনো পরিকল্পিত কারচুপি নয়। উল্লেখ্য, সেপ্টেম্বরের ১ তারিখ পর্যন্ত ভোটার তালিকায় যেকোনো ভুল সংশোধনের জন্য আবেদন করা যাবে।