ব্যুরো নিউজ,১২ নভেম্বর:প্রয়াত বাংলা নাটক ও চলচ্চিত্রের এক অমূল্য রত্ন, বর্ষীয়ান অভিনেতা ও নাট্যব্যক্তিত্ব মনোজ মিত্র। মঙ্গলবার সকালে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন তিনি, এবং অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হন সেপ্টেম্বর মাসের শেষে। তাঁর অবস্থা বেশ সংকটজনক ছিল এবং চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন যে, তিনি ‘কার্ডিওজেনিক শক’ অবস্থায় রয়েছেন।
অমূল্য অবদান
মনোজ মিত্র বাংলা নাটক এবং চলচ্চিত্রের জগতে অমূল্য অবদান রেখে গেছেন। ১৯৫৯ সালে ‘মৃত্যুর চোখে জল’ নামক নাটক লিখে নাট্য জগতে পা রাখেন, তবে ১৯৭২ সালে ‘চাঁকভাঙা মধু’ নাটকটির মাধ্যমে তিনি নাট্যাঙ্গনে নিজের পরিচিতি তৈরি করেন। এরপর একের পর এক দর্শকদের মন জয় করেছেন তিনি। তাঁর অভিনয়ের দক্ষতা, মঞ্চে তাঁর উপস্থিতি ও চরিত্রের গভীরতা তাকে নাট্য দুনিয়ার কিংবদন্তিতে পরিণত করেছিল।বাংলা সিনেমা জগতেও ছিল তাঁর বিশাল অবদান। তিনি সত্যজিৎ রায়, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, তপন সিনহা, তরুণ মজুমদার, শক্তি সামন্ত, গৌতম ঘোষের মতো মহান পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন। তাঁর অভিনীত চরিত্রগুলো এখনও দর্শকদের মনে উজ্জ্বল হয়ে আছে।মনোজ মিত্রের অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলি হল আদালত ও একটি মেয়ে, বাঞ্ছারামের বাগান , শত্রু, ঘরে বাইরে, গণশত্রু প্রভৃতি
বিগত কয়েক মাস মনোজ মিত্রের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। হার্ট, কিডনি, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস, সিওপিডি, ডিমেনশিয়া—এই সব অসুখে ভুগছিলেন তিনি। সর্বশেষ সেপ্টেম্বর মাসে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর, তাঁর অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। চিকিৎসকদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার পরও শেষরক্ষা হল না।মনোজ মিত্রের মৃত্যু বাংলা নাট্য ও সিনেমা জগতের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর সৃষ্টিকর্ম এবং অভিনয় বাঙালি সংস্কৃতির এক অমূল্য অংশ হয়ে থাকবে। নাট্যপ্রেমী, চলচ্চিত্রপ্রেমী সকল বাঙালির হৃদয়ে তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন। তাঁর পরিবার স্ত্রী ও কন্যা ময়ূরী ও গুনমুগ্ধরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।প্রথম জীবনে মনোজ মিত্র দক্ষিণ কলকাতার নিউ আলিপুর কলেজের দর্শন শাস্ত্রের অধ্যাপনার কাজ করেন। প্রায় অবসরকালের কিছু আগে তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিনয় শেখানো শুরু করেন। অধ্যাপক হিসেবে তার যথেষ্ট খ্যাতি ছিল। ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে তিনি ছিলেন অতি প্রিয় তবে বিভিন্ন ছবিতে তার অভিনয় দাগ কাটলেও ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে সে বিষয়ে কখনো আলোচনা করেননি। তার ব্যক্তিত্ব ছিল চোখে পড়ার মতো। শান্ত স্বভাবের মনোজ মিত্র তার সহকারি অধ্যাপক ও শিক্ষকদের ও অশিক্ষকদের কাছে অত্যন্ত নিকটের মানুষ বলে নিজেকে মেলে ধরেছিলেন।