ব্যুরো নিউজ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : মঙ্গলবার, রেকর্ড বৃষ্টিপাতের পর থেকে কলকাতার বিভিন্ন অংশে জনজীবন এখনও স্বাভাবিক হয়নি। টানা ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে শহরজুড়ে জল জমে থাকায় সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। মঙ্গলবার শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা হাঁটু বা কোমর সমান জলে তলিয়ে গিয়েছিল, যা বুধবারও বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যমান রয়েছে। কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (KMC) এবং রাজ্য সরকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালিয়ে গেলেও, দুর্গাপূজার ঠিক আগে এই অবস্থা শহরবাসীর মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
বর্তমান পরিস্থিতি
কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রে খবর, বুধবার সকালেও আমহার্স্ট স্ট্রিট, এজেসি বোস রোড, ক্যামাক স্ট্রিট, ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি, এলগিন রোড, লর্ড সিনহা রোড, হাঙ্গারফোর্ড স্ট্রিট, এক্সাইড মোড়, মিন্টো পার্ক এবং পাটিলির একাংশ জলমগ্ন ছিল। কাঁকুরগাছি আন্ডারপাসও এখনও পুরোপুরি জলমুক্ত হয়নি, যার ফলে গাড়িগুলিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পাতিপুকুর আন্ডারপাসও জলমগ্ন থাকায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিশেষ করে, বালিগঞ্জের বিজন সেতুর নীচে এখনও কোমর সমান জল জমে রয়েছে, যা নিত্যযাত্রীদের জন্য চরম দুর্ভোগের কারণ হচ্ছে।
Kolkata Flooded : তিলোত্তমার জলযন্ত্রণা: রেকর্ড বৃষ্টিতে প্লাবিত কলকাতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
প্রশাসনের প্রচেষ্টা ও প্রতিশ্রুতি
কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম মঙ্গলবার বলেছিলেন যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে প্রায় ১৪ ঘণ্টা সময় লাগবে। বুধবার, পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। কেএমসি জানিয়েছে, শহরে অতিরিক্ত পাম্প বসানো হয়েছে জল বের করার জন্য। ইএম বাইপাস, রবীন্দ্র সরণি, আলিপুর রোড, লেনিন সরণি, মহাত্মা গান্ধী রোড, সিআর অ্যাভিনিউ এবং এজেসি উড়ালপুলের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতে যান চলাচল সকাল থেকেই স্বাভাবিক হয়েছে।
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (নিকাশি) তারক সিং জানিয়েছেন, নিম্নচাপের কারণে সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস এবং গঙ্গার জল বেড়ে যাওয়ায় ৮২টি পাম্পিং স্টেশন পুরোপুরি জল নামাতে পারেনি। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে দুপুরের মধ্যে কলকাতার সব জল নেমে যাবে।
দায় কার, বিতর্কের ঝড়
এই ভয়াবহ জলাবদ্ধতার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মেয়র ফিরহাদ হাকিম দু’জনেই এটিকে “মেঘভাঙা বৃষ্টি”-র সঙ্গে তুলনা করেছেন এবং ৩০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাতকে এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনার জন্য সিইএসসি-র গাফিলতিকে দায়ী করেছেন, যার ফলে জলমগ্ন শহরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। একইসঙ্গে তিনি নিউটাউন-রাজারহাট এবং সল্টলেক এলাকার জলাবদ্ধতার জন্য মেট্রো নির্মাণ সামগ্রীর আবর্জনাকে দায়ী করেছেন।
অন্যদিকে, বিরোধীরা সরকারের সমালোচনা করে বলছে যে মাত্র ৬ ঘণ্টার বৃষ্টিতে প্রশাসনের অচলাবস্থা বেআব্রু হয়ে গেছে। পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই পরিস্থিতিতে বলেন “যতগুলো মৃত্যু ইলেকট্রিক পোস্ট এবং ট্রাফিক পোস্টে হাত লেগে হয়েছে তার জন্য ফিরহাদ হাকিম দায়ি। মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টি পাহাড়ে হয় কলকাতায় নয়। মুখ্যমন্ত্রী পুজো উদ্বোধন করছেন হিজাব পরে। মা দুর্গাকে অপমানের জন্য এই অবস্থা। পুজোর সঙ্গে সঙ্গে এই প্রতিবাদ হবে। কর্পোরেশন পোস্টে কেন শর্ট হবে? কেন হাত লেগে মৃত্যু হবে? কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে যাওয়া উচিত মেয়রকে। নালাগুলো সংস্কার হয় না, কেন না মুখ্যমন্ত্রী কালীঘাটের নালা দখল করে রেখেছেন। সুজিত বসু দখল করে রেখেছে। ”
সল্টলেক এবং বিধাননগরের বিস্তীর্ণ এলাকাও জলমগ্ন থাকায় আইটি হাবে কর্মরতদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
Kolkata Flooded : ভারী বর্ষণে বিপর্যস্ত পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী : বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর মিছিল, অকেজো পুর পরিষেবা
পরিবহন ব্যবস্থায় দুর্ভোগ
বাস, অটো, এবং ট্যাক্সির সংখ্যা কম থাকায় সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছেন। অ্যাপ-ভিত্তিক বাইক এবং গাড়ির ভাড়া আকাশছোঁয়া। অনেক গাড়ির ইঞ্জিন জমা জলে বিকল হয়ে গেছে। তবে, রেল পরিষেবা (শিয়ালদহ ও হাওড়া বিভাগ) এবং মেট্রো পরিষেবা বুধবার সকাল থেকেই স্বাভাবিক রয়েছে, যদিও সার্কুলার রেলওয়ের কলকাতা স্টেশনে এখনও জল জমে আছে।
জনগণের প্রতিক্রিয়া
শহরবাসী বলছেন, তারা গত ৩৯ বছরে এমন ভয়াবহ জলজমাট পরিস্থিতি দেখেননি। জল নামলেও এর ধীর গতি নিয়ে তারা অসন্তুষ্ট। দুর্গাপূজার মুখে এই পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। যদি আবার ভারী বৃষ্টি হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে কেএমসি কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন।