ব্যুরো নিউজ ,২ মে: কলকাতা হাই কোর্টে ঘটল এক নজিরবিহীন ঘটনা।প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তিনি আর কোনও জনস্বার্থ মামলা শুনবেন না।
এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে চাঞ্চল্য আইনজীবী মহলে
পহেলগাঁও কাণ্ডে হাফিজ সইদের নাম জড়াল! লাহৌরে নিরাপত্তা চাদরে মোড়া লশকর প্রধানের ঘর
হাই কোর্ট সূত্রে খবর, ২০২১ সালের পর থেকে দায়ের হওয়া কোনও জনস্বার্থ মামলাই তাঁর বেঞ্চে শুনানি হবে না।এমনকি, ভবিষ্যতে দায়ের হওয়া নতুন জনস্বার্থ মামলার ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।
হাই কোর্টের একটি বিজ্ঞপ্তি মারফত এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।জানা গিয়েছে, এটি সম্পূর্ণ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত।মামলা বণ্টনের দায়িত্ব প্রধান বিচারপতির হাতেই থাকে।সেই দায়িত্বেই এবার তিনি এই বড় পদক্ষেপ নিলেন।
যেসব মামলার মধ্যে রয়েছে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা বা অতিসক্রিয়তার অভিযোগ সেগুলিও আর প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে উঠবে না।এই সংক্রান্ত সব মামলাই পাঠানো হয়েছে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চে।
২০২৩ সালের পর থেকে পুলিশের ভূমিকা সংক্রান্ত যাবতীয় মামলা ওই বেঞ্চেই শুনানি পাবে।এছাড়া, বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের সিঙ্গল বেঞ্চ থেকে নির্দেশ এসেছে এই ধরনের মামলা প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না, চ্যালেঞ্জ করতে হবে চক্রবর্তীর বেঞ্চে।
জনস্বার্থ মামলাগুলির শুনানি ভার এখন পড়েছে বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চের উপর।বহু আইনজীবীর মতে, এই রদবদল কলকাতা হাই কোর্টের ইতিহাসে বিরল।অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিই জনস্বার্থ মামলা শুনে থাকেন।এমনকী, যদি তিনি অনুপস্থিত থাকেন, তখনই সাধারণত অন্য বেঞ্চে মামলাগুলি পাঠানো হয়।
কিন্তু এবার সম্পূর্ণভাবে সরে দাঁড়ালেন প্রধান বিচারপতি নিজে।
এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে।বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “হয়তো প্রধান বিচারপতি শুনতে পারছেন না, তাই দায়িত্ব অন্যদের দিয়েছেন। এতে অস্বাভাবিক কিছু নেই। তবে এরকম আগে হয়েছে বলে আমার মনে পড়ে না।”
অন্যদিকে, রাজ্য সরকারের বিশেষ কৌঁসুলি অর্ক নাগ বলেন, “জনস্বার্থ মামলা আসলে একটি সাংবিধানিক বিকাশের ফল। এর নির্দিষ্ট আইনি সংস্থান না থাকলেও, সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে রুল তৈরি করেছে।১৯৭৯ সালে বিচারপতি পিএন ভাগবতীর হাত ধরে এই ধারার সূচনা হয়।তারপরই দেশের বিভিন্ন হাই কোর্ট, including কলকাতা, এই ধারা অনুসরণ করে।”
তিনি আরও বলেন, “পত্র মারফত আবেদনও জনস্বার্থ মামলা হিসেবে গণ্য হয়, এবং সাধারণত তা প্রধান বিচারপতির কাছেই যায়। তবে প্রধান বিচারপতি যদি মনে করেন, অন্য কেউ শুনানি করবেন, তাতে কোনও আইনগত বাধা নেই।”
সব মিলিয়ে, এই সিদ্ধান্ত একদিকে প্রশাসনিক হলেও, তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে আদালতের ঐতিহ্য এবং মামলার প্রক্রিয়ার উপর।প্রশ্ন উঠছে— এ বার থেকে কী বিচারব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ এই ধারা আরও ছড়িয়ে পড়বে অন্যান্য বেঞ্চে?