ব্যুরো নিউজ,২৪ ফেব্রুয়ারি:ছোটবেলায় তার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার, আইনজীবী বা ভারতীয় প্রশাসনিক পরিষেবায় যোগদান করা। কিন্তু আর্থিক সমস্যা এবং জীবনের কঠিন পরিস্থিতি তাকে সিনেমায় অভিনয় করতে বাধ্য করেছিল। প্রায় দুই দশক ধরে তিনি তামিল, তেলেগু, কন্নড় এবং হিন্দি ভাষায় প্রায় ১৩০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে হাজার হাজার দর্শকের মন জয় করেছেন। কিন্তু অভিনয় জীবনের পাশাপাশি তিনি সমাজসেবার শপথ নিয়ে রাজনীতিতে আসেন এবং এক সময় তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ওঠেন। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি এক টাকা বেতন নিতেন, যা তার সাধারণ মানুষের প্রতি ভালোবাসা এবং ত্যাগের নিদর্শন।জয়ললিতার জন্ম ১৯৪৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি, কর্ণাটকের মেলুকোটে। জন্মের সময় তার নাম ছিল কোমলভাল্লি, পরে তা পরিবর্তন করে রাখা হয় জয়ললিতা। তার বাবা ছিলেন আইনজীবী, কিন্তু মাত্র দুই বছর বয়সে তিনি বাবা হারান। এরপর তার মা বেদাভাল্লি সন্তানদের নিয়ে ব্যাঙ্গালোরে চলে যান এবং সেখানে কন্নড় সিনেমায় কাজ করার প্রস্তাব পেয়েছিলেন। কিন্তু তার বাবা ছিলেন ব্রাহ্মণ, তাই মা এই কাজে সম্মতি দেয়নি। পরে মা অভিনয়ের জন্য চেন্নাই চলে যান, এবং এই সময়ই জয়ললিতার অভিনয় জীবন শুরু হয়।
মহাশিবরাত্রি ২০২৫: চন্দ্রের প্রভাবের কারণে কোন কোন রাশির ভাগ্য ঘুরবে জানেন?
দেবী পার্বতীর চরিত্রে অভিনয়
জয়ললিতা মায়ের পেশায় আগ্রহী না হলেও একদিন শুটিংয়ে গিয়ে তিনি দেবী পার্বতীর চরিত্রে অভিনয় করেন, যা তার অভিনয় জীবনের প্রথম পদক্ষেপ। এরপর তিনি টুকটাক অভিনয় শুরু করেন এবং দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তার অভিনয়ের শুরু থেকেই জয়ললিতা দর্শকদের মধ্যে আলাদা জায়গা তৈরি করেছিলেন। তিনি পাঁচবার তামিলনাড়ু স্টেট অ্যাওয়ার্ডের সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান এবং তিনবার ফিল্মফেয়ারে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে পুরস্কৃত হন।১৯৬৫ সালে তিনি তামিল সুপারস্টার এমজিআরের সাথে অভিনয় শুরু করেন এবং পর্দায় তাদের জুটি দর্শকদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। তারা একসঙ্গে ২৭টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ১৯৭২ সালে এমজিআর রাজনৈতিক দলে এআইএডিএমকে প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৮২ সালে জয়ললিতা সেই দলে যোগ দেন। পরে, তার নেতৃত্বের জন্য তিনি ‘আম্মা’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
১৯৮৯ সালে এক গভীর সংকটে জয়ললিতা বিধানসভায় শারীরিকভাবে হামলার শিকার হন, কিন্তু তিনি দৃঢ় মনোবল নিয়ে প্রতিজ্ঞা করেন যে, “মুখ্যমন্ত্রী না হওয়া পর্যন্ত আমি বিধানসভায় ফিরব না।” দুই বছর পর তার এই প্রতিজ্ঞা পূর্ণ হয় এবং তিনি তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হন।১৯৯১ সালে জয়ললিতা মাত্র ৪৩ বছর বয়সে তামিলনাড়ুর সবচেয়ে কম বয়সী মুখ্যমন্ত্রী হন এবং পরবর্তী ১৪ বছর ধরে ছয় মেয়াদে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার সরকার নারী ক্ষমতায়ন এবং শিল্পায়নে বিশেষভাবে কাজ করে। তিনি নারীদের জন্য ৩০ শতাংশ পুলিশ নিয়োগে কোটা নির্ধারণ করেছিলেন এবং বিভিন্ন সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মসূচি চালু করেন।
দুবাইয়ের মাটিতে ভারতের দাপট, কোহলির নেতৃত্বে পাকিস্তানকে পরাস্ত
২০১১ সালে, ‘আম্মা’ নামের একটি ব্র্যান্ড চালু করেন, যেখানে কম দামে প্রয়োজনীয় দ্রব্য, যেমন চাল, লবণ, জল এবং সিমেন্ট বিক্রি করা হয়। তিনি গ্রামীণ দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে ল্যাপটপ বিতরণ, কমমূল্যের স্বাস্থ্যসেবা এবং ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য বিনামূল্যে বাস ভ্রমণের সুযোগ প্রদান করেন। তার অবদান দেশের কৃষি ক্ষেত্রেও প্রশংসিত হয়।২০১৬ সালে তার মৃত্যু ঘটে, কিন্তু তার কার্যকলাপ এবং জনগণের প্রতি তার ভালোবাসা আজও তামিলনাড়ুর মানুষদের মধ্যে জীবিত রয়েছে। তাকে নিয়ে তৈরি একটি চলচ্চিত্র ‘থালাইভি’ কঙ্গনা রানাওয়াত অভিনয় করেছেন, যা জয়ললিতার জীবনের গল্প তুলে ধরে। তামিলনাড়ুর ইতিহাসে তিনি একটি কিংবদন্তি হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।