ব্যুরো নিউজ ১৫ অক্টোবর ২০২৫ : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছিলেন যে, গাজা সংঘাতের অবসানের জন্য ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস একটি শান্তি চুক্তির প্রথম পর্বে স্বাক্ষর করেছে। তিনি এই চুক্তিটিকে “ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন ঘটনা” হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।
চুক্তির প্রধান শর্তাবলী ও ট্রাম্পের বার্তা
ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল-এ এই চুক্তি স্বাক্ষরের খবরটি নিশ্চিত করেছিলেন। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ইসরায়েল তার সৈন্যদের একটি সম্মত সীমানা পর্যন্ত প্রত্যাহার করে নেবে এবং হামাস সকল বন্দিদের মুক্তি দেবে।
ট্রাম্প লিখেছিলেন, “আমি অত্যন্ত গর্বের সাথে ঘোষণা করছি যে ইসরায়েল এবং হামাস উভয়ই আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্বে স্বাক্ষর করেছে। এর অর্থ ছিল যে, খুব শীঘ্রই সকল বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে, এবং ইসরায়েল তাদের সৈন্যদের একটি সম্মত সীমানা পর্যন্ত প্রত্যাহার করে নেবে। এটি একটি শক্তিশালী, দীর্ঘস্থায়ী এবং চিরন্তন শান্তির দিকে প্রথম পদক্ষেপ ছিল।”
মধ্যস্থতাকারীদের ধন্যবাদ ও বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই চুক্তি সম্পন্ন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো— কাতার, মিশর এবং তুরস্ককে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন।
এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এই শান্তি চুক্তিকে তাদের “কূটনৈতিক ও নৈতিক বিজয়” বলে অভিহিত করেছিলেন। তিনি ইসরায়েলের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানো এবং বন্দিদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন, “আমাদের সকল বন্দিকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামব না।”
অন্যদিকে, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও এই চুক্তির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। তিনি মধ্যস্থতায় সহায়তাকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কাতার এবং মিশরকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন এবং সকল পক্ষকে চুক্তির শর্তাবলী মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়া ও মার্কিন বাহিনীর আগমন
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, হামাস ৪৮ জন ইসরায়েলি বন্দিকে (জীবিত বা মৃত) মুক্তি দেবে , যার বিনিময়ে ইসরায়েল তাদের কারাগারে আটক ২,০০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্ত করবে। হামাসের একজন কর্মকর্তা ওসামা হামদান নিশ্চিত করেছিলেন যে, চুক্তিতে সম্মত হওয়া অনুযায়ী সোমবার (অক্টোবর ১৩, ২০২৫) সকাল থেকে বন্দি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি পর্যবেক্ষণে এবং মানবিক সহায়তা প্রবাহ সহজ করতে প্রায় ২০০ জন মার্কিন সেনা ইসরায়েলে পৌঁছেছিলেন। তবে একজন মার্কিন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছিলেন যে, গাজার মাটিতে কোনো মার্কিন সেনা নামেনি।
England : খালিস্থান সমস্যা পুনরায় উত্থাপন! চরমপন্থা মোকাবিলায় যৌথ পদক্ষেপের অঙ্গীকার ভারত-ব্রিটেনের
হামাসের ভিন্নমত ও রক্তপাতের সতর্কতা
প্রথম ধাপের চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও, ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস এই পরিকল্পনা নিয়ে কিছু অসম্মতির কারণে মিশরে আয়োজিত এর আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেনি বলে জানা গিয়েছিল। হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য হোসাম বাদ্রান দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা কঠিন হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
শান্তি প্রক্রিয়ায় দ্রুততার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে ট্রাম্প এর আগে সতর্ক করেছিলেন যে, কোনো বিলম্ব “বিশাল রক্তপাত”-এর কারণ হতে পারে। তিনি সকল পক্ষের প্রতি দ্রুত পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছিলেন। “সময় অতি গুরুত্বপূর্ণ, অন্যথায় বিশাল রক্তপাত আসন্ন—যা কেউ দেখতে চায় না!” বলে তিনি মন্তব্য করেছিলেন।