ব্যুরো নিউজ ১৮ই আগস্ট ২০২৫ : বিহারে ভোটার তালিকার ‘স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন (SIR)’ প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ‘ভোট চুরি’র অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আজ নির্বাচন কমিশন একটি সাংবাদিক বৈঠক করে। রাহুল গান্ধীর নাম সরাসরি উল্লেখ না করে কমিশন স্পষ্ট জানায়, যিনি এই অভিযোগ নিয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দিয়েছেন, তাকে সাত দিনের মধ্যে হলফনামা জমা দিতে হবে। যদি হলফনামা জমা দিতে ব্যর্থ হন, তাহলে তার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে গণ্য হবে। নির্বাচন কমিশন কড়া ভাষায় বলেছে, হয় হলফনামা দিন, নয়তো ক্ষমা চান, অন্য কোনো বিকল্প নেই।
রাহুল গান্ধীর ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ ও অভিযোগ:
রাহুল গান্ধী সম্প্রতি বিহারের সাসারাম থেকে ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ শুরু করেছেন, যা এসআইআর প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ। এই যাত্রা ১৬ দিন ধরে বিহারের ২৫টি জেলায় ১,৩০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করবে এবং ১ সেপ্টেম্বর পাটনার গান্ধী ময়দানে একটি জনসভার মাধ্যমে শেষ হবে। এই যাত্রায় রাহুল গান্ধীর সঙ্গে আরজেডি নেতা ও বিহারের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবও যোগ দিয়েছেন। রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেছেন, নির্বাচন কমিশন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত এবং ভোটার তালিকা থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই ‘ভোট চুরি’র মাধ্যমে বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কড়া জবাব:
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জ্ঞানেশ কুমার সাংবাদিক বৈঠকে বলেন যে, নির্বাচন কমিশন সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতি সমান দৃষ্টিভঙ্গি রাখে, তা সে ক্ষমতাসীন দলই হোক বা বিরোধী দল। তিনি বলেন, “ভারতের সংবিধান অনুযায়ী, ১৮ বছর বয়সী প্রতিটি নাগরিকের ভোটার হওয়া উচিত। আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের মধ্যে বৈষম্য করি না, কারণ নির্বাচন কমিশনের প্রধান কর্তব্য হল আইনকে নিরপেক্ষভাবে বজায় রাখা।”
ভোটার তালিকা সংশোধনে কমিশনের প্রতিশ্রুতি:
সিইসি জানান, বিহারে চলমান এসআইআর প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ১.৬ লক্ষ বুথ লেভেল এজেন্ট (বিএলএ) একসঙ্গে কাজ করছেন। এই প্রক্রিয়াটির লক্ষ্য হল ভোটার রেজিস্ট্রেশনের ত্রুটিগুলো সংশোধন করা, এবং এটি ভোটার, বুথ-স্তরীয় কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক দলগুলোর একটি যৌথ প্রচেষ্টা। খসড়া ভোটার তালিকা সব পক্ষের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া হয়েছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর যাচাই করা সাক্ষ্য ও স্বাক্ষর এই প্রক্রিয়ার অংশ।
‘ভোট চোর’ স্লোগানের প্রেক্ষিতে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব:
রাহুল গান্ধীর ‘ভোট চোর’ অভিযোগের পর বিরোধী দলগুলির জোট ‘ইন্ডিজোট ‘ (INDI Alliance ) নির্বাচন কমিশনের প্রধান জ্ঞানেশ কুমারের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনার কথা ভাবছে। কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ সৈয়দ নাসির হুসেন বলেন, দল গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে উপলব্ধ সমস্ত উপায় ব্যবহার করতে প্রস্তুত। যদিও তিনি বলেন, এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি।
দ্বৈত ভোটার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান:
জ্ঞানেশ কুমার দ্বৈত ভোটিংয়ের অভিযোগও প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, কিছু ভোটার দ্বৈত ভোটিংয়ের অভিযোগ করেছিলেন, কিন্তু প্রমাণ চাওয়া হলে কোনো প্রমাণ দেওয়া হয়নি। তিনি জানান, নির্বাচন কমিশন এমন ভিত্তিহীন অভিযোগকে ভয় পায় না। কমিশনের স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ১০ লক্ষেরও বেশি বুথ-স্তরীয় এজেন্ট এবং লক্ষ লক্ষ পোলিং এজেন্ট কাজ করেন, তাই এমন অভিযোগের সম্ভাবনা নেই।
ভোটারের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা:
সিইসি আরও স্পষ্ট করেন যে, কোনো ভোটারের তথ্য বা ছবি তার অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা উচিত নয়। তিনি কিছু সংবাদ মাধ্যমের দ্বারা ভোটারদের ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করার নিন্দা করেন, যা ভোটারের ব্যক্তিগত অধিকারের লঙ্ঘন। তিনি ডিপফেক এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধেও কড়া বার্তা দেন।
ভোটার তালিকা বিশুদ্ধকরণের অঙ্গীকার:
সিইসি পুনরায় নিশ্চিত করেন যে, এসআইআর প্রক্রিয়া ভোটার তালিকার ত্রুটি সংশোধন এবং বিদেশী নাগরিকদের মতো অযোগ্য ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জানান, এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশি ও নেপালির মতো অ-ভারতীয় নাগরিকদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, দেশের আরও ১০টিরও বেশি রাজ্যে এই ধরনের সংশোধন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
সংবিধানের প্রতি অবিচল সংহতি:
প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার বক্তব্য শেষ করে প্রতিটি ভোটারের অধিকার রক্ষায় কমিশনের প্রতিশ্রুতির উপর জোর দেন। তিনি বলেন, “গরিব, বয়স্ক, মহিলা, যুবক এবং সকল ধর্ম ও সামাজিক পটভূমির ভোটারদের পাশে নির্বাচন কমিশন একটি পাথরের মতো অবিচল থাকবে। আমরা কোনো ভয় বা পক্ষপাতিত্ব ছাড়াই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পবিত্রতা রক্ষা করে চলব।”