ব্যুরো নিউজ ১৫ জুলাই ২০২৫ : বিশ্বজুড়ে যখন একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল – “কোথায় গেলেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং? ক্ষমতা কি তবে হাতবদল হল?”, ঠিক তখনই এক নাটকীয় মোড় নিল আন্তর্জাতিক কূটনীতি। ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সটান বেজিংয়ে পৌঁছে যেন এক অদৃশ্য যাদুবলে জিনপিংকে তাঁর ‘নিভৃতবাস’ থেকে জনসমক্ষে নিয়ে এলেন! সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO) এর বিদেশমন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জিনপিং শুধু দেখা দিলেন না, ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়েও বেশ কিছুক্ষণ কথা বললেন।
কৌতূহলী বিশ্বের বিস্ময়!
গত কয়েক মাস ধরে জিনপিংকে জনসমক্ষে খুব বেশি দেখা যাচ্ছিল না। আন্তর্জাতিক সভা-সমাবেশে তাঁর অনুপস্থিতি, চিনা কমিউনিস্ট পার্টির অন্দরে রদবদল নিয়ে কানাঘুষো – সব মিলিয়ে বিশ্বজুড়ে জল্পনার পারদ চড়েছিল। কেউ বলছিল তিনি অসুস্থ, কেউ আবার ক্ষমতা হস্তান্তরের গন্ধ পাচ্ছিল। এই অবস্থায় যখন পশ্চিমী দেশগুলোর কূটনৈতিক মহল রীতিমতো চুল ছিঁড়ছিল জিনপিংয়ের হদিশ পেতে, ঠিক তখনই ভারতের বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর তাঁর ‘চিন-যাত্রা’য় জিনপিংকে একেবারে তাঁর নিজের ঘরের মাঠে ‘খুঁজে’ বের করলেন! কূটনৈতিক মহলে অনেকেই রসিকতা করে বলছেন, “বিশ্বজুড়ে গোয়েন্দারা যা পারল না, জয়শঙ্কর একাই তা করে দেখালেন!”
গলওয়ান থেকে জিনপিংয়ের ‘গাইডেন্স’
জানা গেছে, জয়শঙ্কর শি জিনপিংকে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। এখানেই শেষ নয়, তিনি নাকি ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সাম্প্রতিক অগ্রগতি সম্পর্কেও জিনপিংকে অবহিত করেছেন এবং এই সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের ‘গাইডেন্স’-এর গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। এই খবরে অনেকেই মজা করে বলছেন, গলওয়ান কাণ্ডের পর থেকে সম্পর্ক তলানিতে, সেই ‘তলানি’ থেকে কি করে ‘গাইডেন্স’ নিতে হয়, তা জয়শঙ্করই ভালো জানেন!
হান জেং-এর ‘নতুন সূচনা’ আর জয়শঙ্করের ‘পজিটিভ ট্র্যাজেক্টরি’
এই সাক্ষাৎটি ঘটেছে জয়শঙ্করের চিনের উপ-রাষ্ট্রপতি হান জেং-এর সঙ্গে বৈঠকের ঠিক একদিন পর। হান জেং নাকি কাজানে গত অক্টোবরে মোদী-জিনপিংয়ের সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে বলেছেন যে সেটি ভারত-চিন সম্পর্কের এক “নতুন সূচনা”! এদিকে জয়শঙ্কর আবার হান জেং-এর সঙ্গে বৈঠকের পর বলেছেন যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে এবং তাঁর এই সফর ‘পজিটিভ ট্র্যাজেক্টরি’ বজায় রাখবে। প্রশ্ন হলো, এই ‘নতুন সূচনা’ আর ‘পজিটিভ ট্র্যাজেক্টরি’র মধ্যে ঠিক কতটুকু সত্য আর কতটুকু কূটনৈতিক চাটুকারিতা, তা নিয়ে চায়ের দোকানে জোর জল্পনা চলছে।
সীমান্ত থেকে বাণিজ্য – সব সামলাবেন জয়শঙ্কর?
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের জুন মাসে গালওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চিনের সৈন্যদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর এটি জয়শঙ্করের প্রথম চিন সফর। চার বছর পর এই সফরের উদ্দেশ্য হলো SCO বৈঠকে যোগদান এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা। বেজিংয়ে এসে তিনি চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সঙ্গেও বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। জয়শঙ্কর এক্স-এ (আগে টুইটার) পোস্ট করে জানিয়েছেন, সীমান্ত সমস্যা, দুই দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর মতো বিষয়গুলো নিয়ে কথা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, স্বার্থ এবং সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে সম্পর্ক একটি ইতিবাচক পথে এগোতে পারে। এখন দেখার বিষয়, জয়শঙ্কর তাঁর এই ‘পজিটিভ ট্র্যাজেক্টরি’তে জিনপিংকে সত্যিই কতদূর নিয়ে যেতে পারেন! নাকি, জিনপিং আবার তাঁর ‘নিভৃতবাস’-এই ফিরে যাবেন? এই প্রশ্নই এখন বিশ্বজুড়ে কোটি টাকার!