ব্যুরো নিউজ ২৩ মে : জানা গিয়েছে, মৃত ছাত্রের নাম কৃষ্ণেন্দু দাস, সে পাঁশকুড়ার গোঁসাইবেড় বাজারের বাসিন্দা। গত রবিবার কৃষ্ণেন্দু বাজারে চিপস কিনতে গিয়েছিল। এলাকারই সিভিক ভলান্টিয়ার শুভঙ্কর দীক্ষিতের দোকানেই গিয়েছিল সে। শুভঙ্করকে বারবার ডেকেও সাড়া না পেয়ে কৃষ্ণেন্দু দোকানের বাইরে পড়ে থাকা একটি কুড়কুড়ের প্যাকেট কুড়িয়ে নেয়। বাড়ি ফেরার পথে শুভঙ্কর দীক্ষিতের সঙ্গে তার দেখা হয়। অভিযোগ, পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ার শুভঙ্কর মোটরবাইক নিয়ে কৃষ্ণেন্দুর পিছু ধাওয়া করেন এবং তাকে পাকড়াও করে চুরির অভিযোগ তোলেন।
কান ধরে ওঠবস ও মারধর
অভিযোগ উঠেছে যে, বাজার এলাকায় সকলের সামনে কৃষ্ণেন্দুকে কান ধরে ওঠবস করানো হয় এবং মারধরও করা হয়। সেই সময় কৃষ্ণেন্দু চিপসের দাম শুভঙ্করকে দিয়েছিল বলেও জানা গেছে। ঘটনার খবর পেয়ে কৃষ্ণেন্দুর মা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ছেলেকে শাসন করেন এবং বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।
সুইসাইড নোটে ‘আমি চুরি করিনি মা’
বাড়ি ফিরে কৃষ্ণেন্দু একটি সুইসাইড নোট লেখে। তাতে সে লিখেছিল, “মা আমি বলে যাচ্ছি যে আমি কুড়কুড়াটি রাস্তার ধারে কুড়িয়ে পেয়েছিলাম আমি চুরি করিনি।” এই নোট লেখার পরই সে কীটনাশক খেয়ে নেয়। দ্রুত তাকে তমলুক মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হলেও, বৃহস্পতিবার সকালে তার মৃত্যু হয়। এই মর্মান্তিক ঘটনায় পরিবার ও গোটা গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও নীরবতা
গ্রামবাসীরা এই ঘটনায় অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার শুভঙ্কর দীক্ষিতের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। যদিও যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই শুভঙ্কর দীক্ষিতের কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি। তিনি কোনও সিসিটিভি ফুটেজ দেখাতেও রাজি হননি বলে খবর। এই ঘটনা সমাজের বুকে শিশুদের ওপর মানসিক নির্যাতনের এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরল।
সমাজের প্রতি প্রশ্ন: রক্ষক যখন ভক্ষক?
যে সমাজে কাটমানি খোর, ঘুষখোর, খুন এবং ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধে জড়িত ব্যক্তিরা বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়ায়, সেই সমাজের একজন সদস্যের কি অধিকার আছে একটি নিরীহ শিশুকে সামান্য একটি কুড়কুড়ে প্যাকেটের জন্য এমন জঘন্য অপবাদে অভিযুক্ত করার, যা শেষ পর্যন্ত তার জীবন কেড়ে নেয়? সমাজকেই এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। যখন আইনরক্ষক নিজেই ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, তখন তার প্রতিকার কী? এই ঘটনা শুধু একটি শিশুর আত্মহত্যা নয়, এটি সমাজের বিবেকের প্রতি এক কঠিন প্রশ্নচিহ্ন।