ব্যুরো নিউজ ২২শে আগস্ট ২০২৫ : প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের গুরুতর ফৌজদারি অভিযোগে ৩০ দিন আটক বা গ্রেপ্তার হলে তাঁদের পদ থেকে অপসারণের প্রস্তাব সম্বলিত সংবিধান (একশো তিরিশতম সংশোধন) বিল, ২০২৫ নিয়ে সংসদে বিরোধীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। রাহুল গান্ধী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ একাধিক বিরোধী নেতা এই বিলকে গণতন্ত্রের উপর আঘাত বলে অভিহিত করেছেন এবং এর মাধ্যমে বিজেপি নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছেন।
রাহুল গান্ধীর তীব্র সমালোচনা: ‘গণতন্ত্রকে মধ্যযুগীয় সময়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে’
কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী গত বুধবার সংসদে এই বিলের তীব্র বিরোধিতা করে বলেন, “এই বিলের মাধ্যমে আমরা এমন এক মধ্যযুগীয় সময়ে ফিরে যাচ্ছি, যেখানে রাজা যাকে খুশি তাকেই অপসারণ করতে পারতেন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির ধারণাই এতে বিলুপ্ত হচ্ছে।” তিনি অভিযোগ করেন, এই বিল নির্বাচিত নেতাদের অপসারণের ভয় দেখিয়ে ভীতির পরিবেশ তৈরি করবে। রাহুল গান্ধী বলেন, “যদি কারও মুখ পছন্দ না হয়, তাহলে ইডি-কে দিয়ে মামলা করিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে একজন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ব্যক্তিকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
রাহুল গান্ধী ভারতের প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতির আকস্মিক পদত্যাগ এবং নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “আমি কালকে একজনের সাথে কথা বলছিলাম, তিনি বললেন, জানেন, পুরানো উপরাষ্ট্রপতি কোথায় গেলেন? যেদিন তিনি পদত্যাগ করলেন, ভেনুগোপালজি আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, তিনি চলে গেছেন। কেন তিনি পদত্যাগ করলেন এবং কেন তিনি লুকিয়ে আছেন তার পেছনে একটি বড় গল্প আছে।”
উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় তার স্বাস্থ্যের কারণে পদত্যাগ করেছিলেন এবং এইমুহূর্তে স্বাভাবিক কারণেই এক নির্ঝঞ্ঝাট জীবনযাপন করছেন বলে জনসাধারণে ধারণা ।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া মন্তব্য: ‘বিজেপির উদ্দেশ্য শুধু ক্ষমতা দখল’
তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিলকে ‘মানুষকে বিভ্রান্ত করার চক্রান্ত’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “সংবিধান সংশোধনের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন। আমরা আগেই সতর্ক করেছিলাম যে বিজেপি সংবিধান পরিবর্তনের চেষ্টা করবে। ২৪০ জন সাংসদ নিয়েও তারা সংবিধান পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছে।” যদিও বিলটি প্রস্তাব করেছে এনডিএ জোটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক যাদের এই মুহূর্তে লোকসভার সাংসদ সংখ্যা ২৯৩, যা নির্বাচিত সাংসদদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা , তুলনায় বিরোধী পক্ষের ২৩৪ সাংসদ ।
অভিষেক আরও বলেন, “সরকারের দেশ শক্তিশালী করা, সন্ত্রাসবাদ দমন বা সামগ্রিক উন্নয়নের কোনো উদ্দেশ্য নেই। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ক্ষমতা কুক্ষিগত করা।” তিনি বলেন, “এই বিল অনুযায়ী, মুখ্যমন্ত্রী বা কোনো মন্ত্রীকে ৩০ দিন আটক রাখলে ৩১তম দিনে তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে মন্ত্রী পদ হারাবেন। এটা আশ্চর্যজনক, কারণ এতে অভিযুক্তকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি।” তিনি বিজেপিকে জবাবদিহি ছাড়া ক্ষমতার রাজনীতিতে বিশ্বাসী বলে অভিযোগ করেন। অভিষেক কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, গত ১০ বছরে ইডি ৫৮৯২টি মামলা করলেও মাত্র ৮টিতে সাজা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, “বিজেপিতে যোগ দেওয়া ২৩ জন নেতার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”
যদিও বিলটির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রীর , কারোর নিস্তার নেই এবং সরকার জোট হোক বা বিরোধী জোট – সবার ক্ষেত্রেই একই ভাবে প্রযোজ্য । সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র বহু ভাবে দুর্নীতিগ্রস্থরাই এই ধরণের সাংবিধানিক সংস্কারের বিরোধিতায় সরব হবেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিলটির পেশ করা কে ‘ কালো দিবসে, কালো বিল ‘ বলে মন্তব্য করেছেন !
Kolkata Metro Rail : পুজোর আগেই উপহার! মোদীর হাত ধরে চালু হচ্ছে কলকাতার নতুন ৩টি মেট্রো রুট
বিলের পক্ষে সরকারের যুক্তি ও প্রশ্ন
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পেশ করা তিনটি বিলের মধ্যে সংবিধান সংশোধনী বিলটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই বিলের প্রস্তাব অনুযায়ী, গুরুতর ফৌজদারি অভিযোগে যদি প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা কোনো মন্ত্রী ৩০ দিন বা তার বেশি সময় ধরে আটক থাকেন, তাহলে তাঁরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পদ হারাবেন। সরকার যুক্তি দিয়েছে যে, গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের উচ্চ সাংবিধানিক পদে থাকা উচিত নয়, কারণ এতে জনগণের আস্থা এবং সুশাসন ক্ষুণ্ণ হয়। তবে, বিলটি এই বিধানও রেখেছে যে, মুক্তি পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি পুনরায় পদে ফিরতে পারবেন। এই বিলগুলি এখন যৌথ সংসদীয় কমিটির কাছে পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয়েছে।
এই বিতর্কের মধ্যে একটি প্রশ্ন উঠে এসেছে: সাংবিধানিক পদাধিকারী বা আমজনতা, সবার জন্য বিচার ও আইনের সমান প্রয়োগ নিশ্চিত করতে যদি সংবিধান সংশোধন করা হয়, তবে তা নৈতিক নাকি অনৈতিক? যেখানে সাধারণ মানুষ রাজনীতির ওপর আস্থা হারাচ্ছে, সেখানেই আবার তারা সাংবিধানিক ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করে। এই বিলটি সেই মৌলিক প্রশ্নটিকেই সামনে নিয়ে এসেছে।