ব্যুরো নিউজ, ১৭ ফেব্রুয়ারি: বহু সমাজসেবী ও পরিবেশ কর্মী আজ পর্যন্ত ভারতবাসীকে যা শেখাতে পারেনি তাকি সত্যিই শেখাতে পারল জঙ্গলের বাঘ?
হ্যাঁ, শিখিয়েছে কিন্তু ভারতবাসী তা শেখেনি। এটা নিশ্চিত করে বলা যায় আবারও প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে সবাই পথে নামবে না। মধ্য প্রদেশের কানহা রিজার্ভ ফরেস্টে একটি বাঘিনী জল খেতে যাচ্ছিল। সেই মিষ্টি জলের পুকুরেই ভাসছিল প্লাস্টিক বোতল। বাঘিনী সেটা মুখে করে তুলে নিয়ে জঙ্গল সাফারিরত একটি জিবসি গাড়ির সামনে রেখে দেয়। ওয়াইল্ড লাইফের বিশিষ্ট কর্মী দীপ কাঠিকার বলেছেন, ওই বাঘিনী তার আচরণে বলে গেছে, তোমাদের নিয়ে আসা আবর্জনা আমি জল থেকে তুলে আনলাম। তোমরা অবশ্যই নিয়ে যাবে। গোটা দেশের বিভিন্ন রিজার্ভ ফরেস্টের কর্তা- ব্যক্তিদের আক্ষেপ শীতের দিনে ওয়াইল্ড লাইফ স্যাঞ্চুয়ারি ও চিড়িয়াখানাগুলির ভেতরে অবাধে ক্যারিব্যাগে খাবার নিয়ে যাওয়া, প্লাস্টিক বোতলে জল নিয়ে ঢোকা, খবরের কাগজ পেতে খাবার খেয়ে তা মুড়ে যত্রতত্র ফেলে আসা, নন বায়োডিগ্রেবাল তথা থার্মোকল ও প্লাস্টিকের থালা ছিড়িয়ে- ছিটিয়ে ফেলা আসাটাই পর্যটকদের যেনও দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জন্তুদের কষ্টে আমজনতা উদাসীন
প্লাস্টিকের জলের বোতল মুখে নিয়ে বাঘের ছবি যেমন ভাইরাল হয়েছে, তমনই আগেও ভাইরাল হয়েছিল প্লাস্টিকের বাক্স নিয়ে বাঘের খেলা ও কামড়ানো। বাঘার খাঁচার মধ্যে গেলে আসা পড়নের লুঙ্গী নিয়ে শার্দূলের ছেড়া-কাটাও ভাইরাল হয়েছে । চিড়িয়াখানা ও রিজার্ভ ফরেস্টের কর্তারা এমনকি ওয়াইল্ড লাইফ বিশেষজ্ঞরাও রীতিমতো ক্ষোভের সঙ্গে জানিয়েছেন যে, এই সমস্ত চিড়িয়াখানা ও রিজার্ভ ফরেস্টের বাইরের দোকানে দেদার বিক্রি হচ্ছে ক্যারিব্যাগে খাবার, প্লাস্টিক বোতলে জল, প্লাস্টিকের হাল্কা কাগজ। আর সেসবই নিয়ে দর্শকরা ঢুকে পরছে। এসব বিক্রি হলে কার্যত চোরেদের জন্য দরজা খুলে রেখে যেনও অনুরোধ জানানো যে, ভাই চৌর্যবৃত্তি করোনা। কিন্তু তা আবার হয় নাকি? এই ধরনের উদাসীন ও পরিবেশ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় প্ল্যানের অভাবে রীতিমতো পরিপুষ্ট মানুষেরা কোনও নিষেধেই কর্ণপাত করেনা। বহু চিড়িয়াখানায় বাঘেদের ওই প্লাস্টিক নিয়ে টানা হেঁচড়া করতে দেখেও সেখানে কর্মরত বনকর্মীরা উদাসীন। তাদের বললেও তারা কর্ণপাত করেনা। ওয়াইল্ড লাইফ বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদরা যে এই ধরনের কতো অভিযোগ জমা দিয়েছে তা গুনে শেষ করা যাবে না।
তবে অন্যদিক থেকেও ওই সমস্ত বনাঞ্চল ও চিড়িয়াখানার বাইরে এবিষয়ে সরকার কতোটা প্রচার করছে সে বিষয়েও সন্দেহ রয়েছে। শুধু কি স্থলে, সমুদ্রেও শয়ে শয়ে পেঙ্গুইন, হাঙর ও তিমির গায়ে জড়িয়ে থাকে জেলেদের জালের ছেঁড়া অংশ। তখন সেই জলজ প্রানিদেরও প্রানান্তকর অবস্থা হয়। পশু প্রেমীরা জিবনের ঝুঁকি নিয়ে বহু ক্ষেত্রেই জাল কেটে তাদের মুক্ত করে। কম্পিউটার, ইউটিউব, ফেসবুক এমনকি ওয়াইল্ড লাইফ ডকুমেন্টারি দেখেও ভারতবাসী যেনও হিমালয়ের সন্ন্যাসী। তারা এখনও ভেবে চলেছেন পরের ছেলে পরমানন্দ, যত উচ্ছন্নে যায় তত আনন্দ। তা সে মানুষ হোক বা মনুষ্যেতর প্রাণীই হোক মনুষ্য কূলের কি যায় আসে?