Suvendu Adhikari Mamta Banerji SIR

ব্যুরো নিউজ ২৯ জুলাই ২০২৫ : নির্বাচন কমিশনের স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (SIR) বা ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রক্রিয়া ঘিরে দেশজুড়ে বিতর্ক দানা বাঁধছে। বিহারে ৫০ লক্ষেরও বেশি ভোটারের নাম বাদ পড়ার পর এবার পশ্চিমবঙ্গ এই প্রক্রিয়ার কেন্দ্রে উঠে এসেছে। আগামী ১লা অগাস্ট জাতীয় নির্বাচন কমিশন খসড়া ভোটার তালিকা পেশ করতে চলেছে। এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে অবৈধভাবে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ তুলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে চিঠি দিয়েছেন। অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বাংলাভাষীদের নিশানা করার অভিযোগ এনেছেন।

শুভেন্দুর অভিযোগ: ‘অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার বানানোর চেষ্টা’

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তাঁর চিঠিতে দাবি করেছেন যে, পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে একটি ‘অবৈধ কাজ’ চলছে। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, রাজ্য সরকার পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নাম ভোটার তালিকায় যুক্ত করছে। তাঁর দাবি অনুযায়ী, প্রতি সপ্তাহে এসব এলাকায় গড়ে ৭০ হাজারেরও বেশি ফর্ম-৬ (ভোটার তালিকায় নাম তোলার আবেদন) জমা পড়েছে, যা অত্যন্ত সন্দেহজনক। সাধারণত, এই সংখ্যাটা ২০ থেকে ২৫ হাজারের মধ্যে থাকে। এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন।
শুভেন্দু অধিকারীর মতে, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, মালদা, উত্তর দিনাজপুর, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় ফর্ম-৬ জমার হার সবচেয়ে বেশি। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, রাজ্য সরকার এই অনুপ্রবেশকারীদের বৈধতা দিতে ‘পরিকল্পিতভাবে’ ডোমিসাইল সার্টিফিকেট (আবাসিক শংসাপত্র) দিচ্ছে এবং এর মাধ্যমে আসন্ন ভোটে ভোটার তালিকা বিকৃত করার চেষ্টা চলছে। বিরোধী দলনেতা নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন যে, ২০২৫ সালের ২৫শে জুলাইয়ের পরে রাজ্য সরকার কর্তৃক ইস্যু করা কোনো ডোমিসাইল সার্টিফিকেট যেন ভোটার তালিকা সংশোধনে গ্রাহ্য না করা হয়।

Suvendu vs Mamata : বাঙালি বিদ্বেষ বিতর্কে মুখোমুখি মুখ্যমন্ত্রী এবং বিরোধী দলনেতা । বাস্তব চিত্র কিরকম ?

ডোমিসাইল সার্টিফিকেট ও ফর্ম-৬: কী এর গুরুত্ব?

ডোমিসাইল সার্টিফিকেট হল একটি সরকারি প্রমাণপত্র যা প্রমাণ করে যে একজন ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে দীর্ঘ সময় ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে বসবাস করছেন। ভোটার তালিকায় নাম তোলার পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা পেতেও এই শংসাপত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফর্ম-৬ হলো ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য ব্যবহৃত আবেদনপত্র। নির্বাচন কমিশন দেশজুড়েই SIR প্রক্রিয়া ঘোষণা করেছে। বিহারের পর পশ্চিমবঙ্গেই বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। সূত্রের খবর অনুযায়ী, রাজ্যে ইতিমধ্যেই SIR প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে এবং নির্বাচন কমিশন প্রশিক্ষণও চালু করেছে। এই প্রক্রিয়া ভোটার তালিকা পুনরায় সংশোধনের মাধ্যমে ত্রুটিমুক্ত করার লক্ষ্য রাখে।

মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা সুর: ‘পুরনো ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া যাবে না’

অন্যদিকে, রাজ্যের প্রশাসনিক কাজে গতি আনা এবং স্থানীয় মানুষকে কাজ দেওয়ার লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার বীরভূমে এক জেলা প্রশাসনিক বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দেন। তিনি পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফিরিয়ে এনে ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্পে যুক্ত করার কথা বলেন। তিনি বলেন, “পাড়ায় পাড়ায় ছোট ছোট কাজ করতে হবে। বড় কাজ সরকার করছে। স্থানীয় মানুষকে কাজে লাগান। জব কার্ডধারীদের কাজে লাগাতে হবে।” তিনি এও জানান যে রাজ্যে ইতিমধ্যেই ১২ লক্ষ বাড়ি তৈরি করা হয়েছে এবং গরিব মানুষের মাটির ছাদ ভেঙে প্রাণহানির ঘটনা তিনি চান না। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, যে রাজ্যে কর্মের অভাবে শ্রমিককে ভিন্ন রাজ্যে যেতে হয়, তাদের জন্য কি পাড়ায় পাড়ায় হঠাৎ করে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়ে যাবে? নাকি সেই পাড়ায় কর্তব্যরত কোনো মানুষকে নিজের কর্মসংস্থানে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির ভাগ বসানোকে মেনে নিতে হবে?
এই প্রশাসনিক বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী ভোটার তালিকা এবং প্রশাসনিক সতর্কতা নিয়েও সরব হন। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “যারা দীর্ঘদিন ধরে এই রাজ্যের ভোটার, তাঁদের নাম বাদ দেওয়া যাবে না। বাংলায় যারা কথা বলছে, তাদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে।” তিনি অসমের বিরুদ্ধে বাংলাতে চিঠি পাঠানোর অভিযোগ তুলে বলেন, “কোথা থেকে এই সাহস আসে?” মুখ্যমন্ত্রী আরও অভিযোগ করেন যে, গুরগাঁওয়ে লোকজনকে ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছে ।

Suvendu : বাঙালি সংস্কৃতি এবং অধিকারের রক্ষার্থে বিরোধী দলনেতার উত্তরকন্যা অভিযানে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা !

উপসংহার : বিতর্কের নতুন মাত্রা?

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেছেন যে, “যে সব বঙ্গে বসবাসকারী পরিযায়ী শ্রমিক বঙ্গে ফিরে আসবেন, তাদের বাসস্থান না থাকলে – তাদের ক্যাম্পে রাখার ব্যবস্থা করা হবে, দেওয়া হবে রেশন কার্ড খাদ্যের স্বার্থে এবং পরিচয়পত্র।” এই মন্তব্যের পর প্রশ্ন উঠছে যে, যদি কোনো পরিযায়ী শ্রমিক পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হন, তাহলে তার এই রাজ্যে নিজের বাড়ি না ফিরে ক্যাম্পে থাকার প্রয়োজন কেন হবে? তার নতুন করে রেশন কার্ড বা পরিচয়পত্র লাগবে কেন? এটি কি ফর্ম-৬ এর বাইরে অনুপ্রবেশকারীদের একটি ভারতীয় পরিচয় দেওয়ার মুখ্যমন্ত্রীর আলাদা প্রচেষ্টা? নির্বাচনের আগে থেকেই চূড়ান্ত অরাজকতার সৃষ্টি শুরু করার পরিকল্পনা শুরু করছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। যে SIR (স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন) সারা ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে হচ্ছে, তাই নিয়ে এই রাজ্যের এত বিরক্তি কেন—প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর