ব্যুরো নিউজ,২০ নভেম্বর: বড়োদের অফিসের কাজের চাপে আর ছোটোদের স্কুলের পড়ার চাপে সবার জীবনটা যেন একঘেয়ে হয়েগেছে । আর শীতকাল এসে গেছে মানেই মনটা বেড়াই বেড়াই করে। শীতের ছুটি পেলেই কি শান্ত নিরিবিলি প্রকৃতির মাঝে সময় কাটাতে ইচ্ছা করে ? কিন্তু হাতে যদি মাত্র ৩ দিন থাকে তাহলে আপনাদের জন্য আদর্শ জায়গা হল দার্জিলিং থেকে মাত্র ৩২ কিমি দূরে সিকিম সিমান্তের একদম কাছেই অবস্থিত একটি গ্রাম তিনচুল।পশ্চিমবঙ্গ-সিকিম সীমান্তের কাছে ৫৫৫০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই গ্রাম । তিনটি পাহাড়শৃঙ্গকে মাটির চুলার মতো দেখায় বলেই এর এমন নাম। এছাড়াও এই গ্রামে গেলে আপনি দেখতে পারবেন তিস্তা ও রঞ্জিত নদী প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে ।
এই গ্রামটি শুধুমাত্র চা বাগান বা তাজা ফলের বাগানের জন্য বিখ্যাত নয়, বরং এর শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এখানে ভ্রমণকারীদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয়। ভিড়-ভাট্টা থেকে দূরে থাকা এই স্থানটি প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য স্বর্গ। আপনি এখানে রক ক্লাইম্বিং, ট্রেকিং কিংবা দর্শনীয় স্থান ভ্রমণের মাধ্যমে প্রকৃতির অপার রূপ উপভোগ করতে পারবেন। সবকিছুর পটভূমিতে সবুজ পাহাড়শ্রেণী এমন এক দৃশ্য তৈরি করে, যা যেন সরাসরি কোনও সিনেমার দৃশ্য থেকে উঠে এসেছে।
শীতের ছুটিতে ঘুরে আসুন সবুজে ঘেরা ডুকা ভ্যালিতে
যারা ভ্রমণের পাশাপাশি আধ্যাত্মিক শান্তি খুঁজছেন তাদের জন্য তিনচুল এক আদর্শ স্থান। এখানকার শান্ত পাহাড়শ্রেণী ও নির্মল পরিবেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতাকে আরও বিশেষ করে তোলে। প্রকৃতির সান্নিধ্যে কিছু সময় কাটাতে চাইলে তিনচুল আপনার গন্তব্য হতে পারে।
কি কি দেখতে পারবেন
১. টিনচুলে সানরাইজ ভিউ পয়েন্ট
টিনচুলে ভ্রমণের মূল আকর্ষণ হল সানরাইজ ভিউ পয়েন্ট। এখান থেকে পূর্ব হিমালয়ের মহিমান্বিত শৃঙ্গগুলির ওপর সূর্যোদয়ের অপার্থিব দৃশ্য দেখা যায়। মাউন্ট কাঞ্চনজঙ্ঘার ঝলমলে সৌন্দর্য ও তিস্তা উপত্যকার মোহময় দৃশ্য ফটোগ্রাফি উত্সাহীদের জন্য এটি আদর্শ স্থান করে তুলেছে। পাখির কিচিরমিচির এবং নির্মল পরিবেশে এখানকার সকাল শুরু করার অভিজ্ঞতা সত্যিই অনন্য।
২. গুম্বাদারা
পেশোক রোড থেকে একটি অল্প সময়ের ট্রেকিংয়ের মাধ্যমে আপনি পৌঁছাতে পারেন গুম্বাদারায়। চমৎকার পাইন ও ফার্নের জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যাওয়ার পথে প্রাচীন হিমালয় গুহা এবং রক ক্লাইম্বিংয়ের সুযোগ পাওয়া যায়। এখান থেকে তিস্তা নদী এবং সিকিম রাজ্যের ঝলমলে দৃশ্য এক কথায় অতুলনীয়। বিশেষ করে বৃষ্টির সময়, এই জায়গার সৌন্দর্য আরও বেড়ে যায়।
৩. চা বাগান
তিনচুলের অন্যতম বিশেষ আকর্ষণ হলো এর চা বাগান। পাহাড়ি মাটিতে উৎপন্ন চা বিশ্বজুড়ে রপ্তানি হয়। এখানে ছয়টি চা বাগান রয়েছে, যার মধ্যে পেশোক এবং রাংলি রংলিওট চা বাগান সবচেয়ে জনপ্রিয়। বাগান পরিদর্শনের সময় চা উৎপাদনের প্রক্রিয়া দেখার সুযোগ পাওয়া যায়, যা একটি শিক্ষামূলক ও আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা।
৪. কমলা বাগান
তিনচুলির অর্থনীতির বড় একটি অংশ গড়ে উঠেছে কমলা চাষের ওপর। এখানকার ম্যান্ডারিন কমলা রপ্তানি মানের এবং খুবই সুস্বাদু। স্থানীয় বাগানগুলোতে হাঁটাহাঁটি করতে করতে কমলার গাছের সবুজ পরিবেশে সময় কাটানো খুবই প্রশান্তিদায়ক। এছাড়া, এখানে তৈরি তাজা মোরব্বা, কমলার রস এবং আচার স্বাদ নিতে ভুলবেন না।
৫. তিনচুলে মঠ
এই গ্রামে আধ্যাত্মিকতার কেন্দ্রবিন্দু হলো তিনচুলে মঠ। নালন্দার ঐতিহ্য অনুসরণকারী এক সন্ন্যাসী এটি প্রতিষ্ঠা করেন। মঠের সকালের করতালের ধ্বনি এবং রঙিন পতাকার দোলায় এখানে এক ধরনের আধ্যাত্মিক প্রশান্তি অনুভব করা যায়। সন্ন্যাসীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের জীবনধারার সম্পর্কে জানা এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
৬. ছোটমাংওয়া গ্রাম
তিনচুলে থেকে খুব কাছেই অবস্থিত ছোটমাংওয়া, যা পর্যটকদের নতুন আকর্ষণ হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই গ্রাম তার অতিথিপরায়ণ মানুষ এবং ফুলের সুন্দর বাগানের জন্য পরিচিত।
শীতের ছুটিতে ঘুরে আসুন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঘেরা দার্জিলিংয়ের সেলপু
তিনচুলেতে ভ্রমণের সেরা সময়
এপ্রিল থেকে মে মাসের প্রথম দিক টিনচুলে ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এসময় তাপমাত্রা ১০-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। শীতকালে তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রির নিচে নেমে যায়, যা বেশ ঠান্ডা। বর্ষাকালে টিনচুলেতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়, তবে এই সময়ে হিমালয়ের সৌন্দর্য অনন্য হয়ে ওঠে।
কি ভাবে যাবেন?
কাছের এয়ারপোর্ট বাগডোগরা। আর ট্রেন স্টেশন নিউ জলপাইগুড়ি। গাড়ি ভাড়া করে আসতে সময় লাগবে ঘণ্টা তিন। আর আসার পথে আপনি ঘুরে নিতে পারবেন তিস্তা ভ্যালি, তাকদা, লামাহাটা।