ব্যুরো নিউজ,৩০ ডিসেম্বর:বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে জাপানের রাজধানী টোকিয়ো, একটি নতুন সমস্যা মোকাবিলা করছে। দুর্বল মুদ্রা এবং ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করার চেষ্টা করছে দেশটির সরকার, যদিও সুদের হার বৃদ্ধি ও বাজারে বিনিয়োগ আকর্ষণের প্রচেষ্টায় কিছুটা উন্নতি এসেছে। তবে, এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেই একটি নতুন পর্যটন প্রবণতা দেখা দিয়েছে—যা অনেকের কাছে অবাক করা হতে পারে, এবং তা হলো ‘যৌন পর্যটন’ বা ‘সেক্স ট্যুরিজম’। এমন তথ্য উঠে এসেছে একটি নাম করা সংবাদমাধ্যম এর প্রতিবেদনে।
বহু মানুষ যৌনমিলনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন কিন্তু জানেন কি এটি সম্পর্কের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে?
টোকিয়োতে যৌনকর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি
এশিয়া ভিত্তিক সংগঠন ‘লিয়াজোঁ কাউন্সিল প্রোটেক্টিং ইয়ুথ’-এর সেক্রেটারি জেনারেল, ইয়োশিহিদ তানাকা, সম্প্রতি জানিয়েছিলেন যে, জাপান এখন এক দরিদ্র দেশে পরিণত হয়েছে। তার মতে, করোনার পরবর্তী সময়ে বিদেশি পুরুষদের সংখ্যা টোকিয়োয় বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে, বিশেষত চিনা পুরুষদের আগমন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এই আগমন মূলত যৌনকর্মী এবং যৌন শিল্পের জন্য, যা টোকিয়োর একাধিক এলাকার অর্থনীতিতে নতুন দিক যোগ করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং যুবকরা জীবনযাপনের জন্য অনেক সময় যৌনকর্মী হতে বাধ্য হচ্ছেন, বিশেষত শহরের বিভিন্ন এলাকায়, যেখানে এই শিল্পটি বিস্তার লাভ করেছে। এর ফলে, শহরের অনেক এলাকাতেই যৌন সহিংসতার ঘটনা বেড়েছে, যা সমাজে নতুন এক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে, টোকিয়োর ওকুবো পার্কের পাশের এলাকা, যেখানে যৌনকর্মীরা সাধারণত ঘোরাফেরা করেন, তা হয়ে উঠেছে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। কাজুনা কানাজিরি, একজন সমাজকর্মী, যিনি যৌন সহিংসতার শিকারদের সাহায্য করেন, জানাচ্ছেন যে, এই পার্কে যৌন কর্মীরা যথেষ্ট সক্রিয়।
যৌনতার পর যোনিতে ক্ষত? কারণ, প্রতিকার এবং সচেতনতার সহজ উপায় জেনে নিন
এশিয়া ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাপানের প্রধান বিরোধী দল ‘কনস্টিটিউশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফ জাপান’ এর সদস্য কাজুনোরি ইয়ামানোই জানিয়েছেন, টোকিয়োতে এই ধরনের ব্যবসার বিস্তার শুধু দেশীয় সমস্যা নয়, বরং আন্তর্জাতিক সমাজে জাপানি নারীদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করছে। তাঁরা দাবি করেছেন যে, বিদেশি পুরুষরা সহজেই অল্প বয়সী মহিলাদের থেকে যৌন সেবা পাচ্ছেন, যা জাপানের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয়।সাংবাদিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ১৪০ জন যৌনকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে অনেকেই বলেছে যে, তারা টাকা পাওয়ার জন্য বা হোস্ট ক্লাবের খরচ মেটানোর জন্য এই পেশায় নেমেছে। মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, গ্রেফতার হওয়া নারীদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশের বয়স ছিল ২০ বছরের মধ্যে।জাপানে ‘হোস্ট ক্লাব’ নামে এক ধরনের প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি ব্যাপক। এখানে মহিলারা পুরুষদের সঙ্গ পাওয়ার জন্য টাকা খরচ করেন। টোকিয়োর কাবুকিচো এলাকাতেই ২৪০-২৬০টি হোস্ট ক্লাব রয়েছে। এই ক্লাবগুলিতে যাওয়ার খরচ ২০ হাজার ইয়েনের আশপাশে। এমন পরিস্থিতিতে, অনেক যুবতী নারী এসব ক্লাবের খরচ মেটাতে যৌনকর্মী হতে বাধ্য হচ্ছেন। এছাড়া, এই ক্লাবগুলোতে যৌন নির্যাতন, শারীরিক সহিংসতা ও অর্থ নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
গন্ধে বোঝা যাবে সঙ্গীর যৌন উত্তেজনা! গবেষণায় নতুন চমক
আইন ও নিষেধাজ্ঞা
জাপানে যৌনকর্মীর মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে যৌনতা কেনাবেচা অবৈধ। তবে, শুধুমাত্র সঙ্গমের জন্য কেনাবেচা অবৈধ, কিন্তু অন্যান্য যৌন কাজের উপর বিধিনিষেধ নেই। ‘অ্যান্টি-প্রস্টিটিউশন ল’ অনুযায়ী, যৌনকর্মী বা সেবা গ্রহীতা যদি আইন ভঙ্গ করে, তবে তাকে ৬ মাসের জেল এবং ১০ হাজার ইয়েন জরিমানার শাস্তি হতে পারে। তবে, এই আইন সেবা গ্রহীতাদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ হয় না।সবমিলিয়ে, টোকিয়ো এখন নতুন এক পর্যটন প্রবণতার দিকে এগোচ্ছে, যা দেশে ও আন্তর্জাতিক মহলে এক ধরনের বিতর্কের সৃষ্টি করছে। এই যৌন পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হওয়া কি টোকিয়োর জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ, না কি ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য তা একটি আলাদা দিক, তা সময়ই বলে দেবে।