Khagen murmu ICU visit

ব্যুরো নিউজ ০৮ অক্টোবর ২০২৫ : উত্তরবঙ্গে বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু এবং বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে চরম উত্তেজনা। তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাসপাতালে আহত সাংসদ খগেন মুর্মুকে দেখতে গেলেও, একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিধায়ক শঙ্কর ঘোষকে এড়িয়ে যান বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ‘অমানবিক’ আচরণের অভিযোগ তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

 

হাসপাতালে রাজনৈতিক সৌজন্যতার অভাব: শুভেন্দু অধিকারীর তোপ

মঙ্গলবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি হাসপাতালে আহত সাংসদ ও বিধায়কের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁদের চিকিৎসার খোঁজ নেন। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর আচরণের তীব্র নিন্দা করেন। তিনি বলেন, একই হাসপাতালে শঙ্কর ঘোষ চিকিৎসাধীন থাকা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে এড়িয়ে যান।

শুভেন্দু অধিকারী কড়া ভাষায় বলেন, “তাঁর (মুখ্যমন্ত্রী) এই আচরণই দেখায় যে তিনি মানসিকভাবে কতটা অমানবিক হয়ে উঠেছেন।” তিনি আরও দাবি করেন, “খগেন মুর্মুর অবস্থা গুরুতর—মুখের হাড় ভেঙেছে, এবং চিকিৎসকরা বলেছেন ট্র্যাকশনের সাহায্যে তাঁর সম্পূর্ণ সেরে উঠতে অন্তত ছয় সপ্তাহ লাগবে। তিনি নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য আমরা তাঁকে এইমস-এ স্থানান্তরিত করার কথা ভাবছি।”

আক্রান্ত বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ যদিও পরে মুখ খুলে জানান, তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে দেখা করার সম্মতি দেননি। তবে তিনি বলেন, “তৃণমূল রাজনৈতিক সৌজন্যতা দেখাচ্ছে।” এর আগে ওই দিন সকালে রাজ্যপাল ডঃ সি ভি আনন্দ বোসও হাসপাতালে আহত দুই নেতার সঙ্গে দেখা করেন।

North Bengal Floods : উত্তরবঙ্গে জনপ্রতিনিধি আক্রান্তর ঘটনায় রাজ্যকে আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর।

‘বদলা ও বদল হবে’: সুকান্ত-শুভেন্দুর কড়া হুঁশিয়ারি

আহত সাংসদ ও বিধায়ককে দেখতে হাসপাতালে যান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারও। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে তিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে চরম তোপ দাগেন। সুকান্ত মজুমদার বলেন, “খগেন মুর্মু শুধু এমপি নন, তিনি নানান সাংবিধানিক পদে থেকেছেন, এবং শঙ্কর ঘোষ শিলিগুড়ির বিধায়ক, সঙ্গে বিধানসভায় প্রধান বিরোধী দলের মুখ্য সচেতক। তাঁরা রাজনৈতিক আক্রমণ, রাজনৈতিক হিংসার শিকার হন।”

তিনি পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যাদের নাম এবং ছবি দেখা গেছে এই হামলায়, পুলিশ যদি ব্যবস্থা না নেয়, বিজেপি নিজের মতো করে ট্রিটমেন্ট করবে! একজন বিধায়ক আক্রান্ত হয়েছে রাজ্যের, পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করেনি, এই পুলিশ মন্ত্রীকে নিয়ে বন্যার জলে ফেলে দেওয়া ভালো।”

শুভেন্দু অধিকারী আক্রান্তদের অবস্থা ও চিকিৎসার অগ্রগতি দেখার পর আরও কড়া ভাষায় বলেন, “চলুন হিসাব হবে, বদলা হবে। বদলও হবে বদলাও হবে।” তিনি বলেন, “আমরা এই হামলার সিবিআই বা এনআইএ তদন্তের দাবি জানাই। মুখ্যমন্ত্রী মুর্মু সাহেবকে জিজ্ঞাসা করেছেন ঘটনাটি কীভাবে ঘটল, কিন্তু কে হামলা করেছে তা জানতে চাননি। অপরাধীরা কুখ্যাত গুন্ডা যাদের অপরাধমূলক অতীত রয়েছে, তবুও এখন পর্যন্ত কোনও গ্রেপ্তার হয়নি। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে অভিযোগকারী আগামীকাল হাইকোর্টে যাবেন।”

 

মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা বয়ান

বিধায়ক এবং সাংসদ আক্রন্ত হওয়ার ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরকন্যা থেকে বিজেপিকে পাল্টা আক্রমণ করেন। তিনি কলকাতায় পূর্ব নির্ধারিত অনুষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে বলেন, “কলকাতার অনুষ্ঠান থাকায় আমি রবিবার কীভাবে আসব? তাছাড়া, যখন উদ্ধার ও ত্রাণ কাজ চলছে, তখন প্রশাসন একসাথে ভিআইপি আন্দোলন সামলাবে কীভাবে?”

বিজেপিকে তিনি “রাজনৈতিক পর্যটন”-এর জন্য সমালোচিত করেন এবং বলেন, “তাঁরা ৩০ থেকে ৪০টি গাড়ির কনভয় নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তাঁদের ট্রাফিকের কারণে ভঙ্গুর রাস্তাগুলির আরও ক্ষতি করছেন।”

অন্যদিকে, এই আক্রমণের প্রতিবাদে ত্রিপুরায় তৃণমূলের আঞ্চলিক কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। তৃণমূল কংগ্রেস অভিযোগ করেছে যে মঙ্গলবার বিজেপি-সমর্থিত গুন্ডারা তাদের পার্টি অফিস ভাঙচুর করেছে। এই হামলার প্রতিবাদে তৃণমূল কংগ্রেস একটি প্রতিনিধিদলকে কলকাতায় থেকে বুধবার সকাল ১০:৫০ মিনিটে আগরতলা পাঠাচ্ছে। প্রতিনিধিদলে থাকছেন প্রতিমা মণ্ডল, সায়নী ঘোষ, বীরবাহা হাঁসদা, কুণাল ঘোষ, সুদীপ রাহা এবং সুস্মিতা দেব (যিনি অসম থেকে যোগ দেবেন)।

দলের X হ্যান্ডেলে এই হামলার বিষয়ে লেখা হয়েছে, “বিজেপি-সমর্থিত গুন্ডাদের দ্বারা @AITC4Tripura-এর অফিসে এই হিংসাত্মক আক্রমণ কোনও বিচ্ছিন্ন আগ্রাসন নয়, এটি গণতন্ত্রের উপর একটি প্রকাশ্য আক্রমণ… যারা ক্ষমতায় আছে তারা তাদের বিরোধীদের চুপ করাতে যখন হিংসার আশ্রয় নেয়, তখন তারা শক্তি নয়, বরং ভয় এবং নৈতিক দেউলিয়াপনা প্রকাশ করে।”

তবে জানা গেছে, ত্রিপুরায় পৌঁছে কুণাল এবং সায়নী ঘোষ-সহ তৃণমূলের সমস্ত প্রতিনিধিরা তাদের ক্ষতিগ্রস্ত অফিসে যাওয়ার জন্য যানবাহন পাচ্ছেন না। আঞ্চলিক পরিবহণকারীরা তাঁদের বহন করতে নারাজ ।

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর