ব্যুরো নিউজ, ২৬ ফেব্রুয়ারি: সন্দেশখালিতে ঘটে যাওয়া একের পর এক অন্তর্দ্বন্দ্বে উঠে আসছে রাঘব বোয়ালেদের নাম! আর এবার সেই সন্দেশখালি কাণ্ডে কাঠগড়ায় খোদ রাজ্যের সেচ মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক! ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল কাশ্মীরের সোনমার্গ থেকে সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনকে রাজীব কুমারের নেতৃত্বাধীন রাজ্য পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। সেই ঘটনায় বারবার সাফল্য দাবি করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সেই পুলিশই কেন গ্রেফতার করতে পারছে না শেখ শাহজাহানকে? উঠছে এই নিয়ে বহু প্রশ্ন।
অন্তর্দ্বন্দ্বে উঠে আসছে একাধিক তথ্য। স্থানীয় সূত্রে খবর, সন্দেশখালিতে নিয়মিত আনাগোনা ছিল তৃণমূল নেতা পার্থ ভৌমিকের। এলাকাবাসীর কথায়, পার্থর সঙ্গে শেখ শাহজাহান, উত্তম সর্দার, শিবু হাজরাদের সূচ-সুতোর সম্পর্ক। সিজিও সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই শেখ শাহজাহানের বেশ কিছু সম্পত্তির হদিশ মিলেছে মন্ত্রীসভার ব্যর্থ মন্ত্রী বলে পরিচিত পার্থ ভৌমিকের নৈহাটি বিধানসভায়। এ তো সবে ‘কলির সন্ধ্যা’। পার্থ-শাহজাহান ঘনিষ্ঠতার একের পর এক অজস্র প্রমাণ উঠে আসছে সংবাদমাধ্যমের হাতে। সম্প্রতি চাকলার সাংগঠনিক সভা থেকে রাজ্যের দমকল মন্ত্রী সুজিত বসুকে বসিরহাট দেখার দায়িত্ব দিয়েছেন দলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধীদের দাবি, এই লেনদেনের সম্পর্ক যাতে জনসমক্ষে না আসে তাই সুজিত বসুকে সাইডলাইনে পাঠিয়ে বসিরহাট দেখার দায়িত্ব আগ বাড়িয়ে নিজের কাঁধে তুলে নেন পার্থ ভৌমিক। এলাকাবাসীর সমস্যা সমাধান দূর অস্ত। উত্তম সর্দারকে বলির পাঁঠা করে শাহজাহান, শিবুদের আড়াল করাই মূল উদ্দেশ্য ছিল ‘আবার প্রলয়’ ওয়েব সিরিজের দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসার ‘করালি বাবু’ ওরফে পার্থ ভৌমিকের। সূত্রের খবর, নিজেকে বাঁচাতে সম্প্রতি পুরীতে জগন্নাথ দেবের শরণাপন্ন হয়েছিলেন নৈহাটি বিজয়নগর কলোনির দুর্নীতিগ্রস্ত অপদার্থ ওই নেতা। আর এখানেই উঠে আসছে আরও বিস্ফোরক অভিযোগ। তদন্তের হাত থেকে বাঁচতে পুরীতে গিয়ে স্থানীয় নম্বর ব্যবহার করে একাধিক বিজেপি নেতার সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন রাজ্যের সেচ মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। পার্থর এক ছায়াসঙ্গীর অভিযোগ, ঘনিষ্ঠমহলে পার্থ নিজেই একথা জানিয়েছেন।
অমৃত ভারত স্টেশন প্রকল্পের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে ব্যান্ডেলে উপস্থিত রাজ্যপাল বোস
তার আরও দাবি, ২০১৯-এর আগে রাজনীতি না করা নবাগত বিজেপি নেতা সুবোধ অধিকারীকে দলে নেওয়ার পাশাপাশি রাজা দত্ত সহ দলের পুরানো কর্মীদের কোণঠাসা করেছেন তিনি। দলীয় পদ থেকে পুরনো বা দুর্দিনে পাশে থাকা কর্মীদের সরিয়ে সুবোধ অধিকারীর ভাই কমল অধিকারীকে কাঁচরাপাড়া পৌরসভার চেয়ারম্যানের কুর্সিতে বসিয়েছেন। নিজের পিঠ বাঁচাতে সুকৌশলে বিজেপির হাত শক্ত করেছেন তৃণমূলের জার্সিধারী খলনায়ক। যার ফলে সাধারণ মানুষের মনে যেমন দানা বেঁধেছে ক্ষোভ, ঠিক তেমনই পুরনো কর্মীরা দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ানোয় শক্ত হয়েছে বিজেপির হাত। সুবোধ অধিকারী ২০১৯-এর আগে বিজেপি করার সুবাদে তার সঙ্গে একাধিক বিজেপি নেতার যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক আছে। বিজেপির থেকে সুবিধা নিতে ক্রমাগত সুবোধ অধিকারীকে পদ পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি করেছেন পার্থ ভৌমিক। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে ধ্বংস করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক ভাবমূর্তি, মত সংশ্লিষ্ট মহলের। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর খাসতালুক বলে পরিচিত হলদিয়ায় চুটিয়ে ব্যবসাও করেন সুবোধ অধিকারী ও তার পরিবারের একাধিক সদস্য।
পুরনো তৃণমূলীদের দাবি, দলের দুঃসময়ে ২০০৩ সালে বোম্বেতে একাউনটেন্টের চাকরি করতে গিয়েছিলেন এই পাল্টিবাজ, বিশ্বাসঘাতক নেতা । ২০০৯-এর পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল জিততেই কেটে যাওয়া ঘুড়ির মতন আবার উড়ে এসে জুড়ে বসেন তিনি। যে মুকুল রায়কে ধরে তার উত্থান, সেই মুকুল রায়কেও পিছন থেকে ছুরি মারতে হাত কাঁপেনি পার্থ ভৌমিকের।
নৈহাটির এক প্রবীণ নাগরিক ও পুরানো তৃণমূল নেতার কথায় ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। পুরনো কর্মী সহ বিরোধীদের মত মমতার আসল ফ্রাঙ্কেস্টাইন এই পার্থ ভৌমিক ও তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার ৯ বছর পর তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়া ততকাল তৃণমূল বলে পরিচিত সুবোধ অধিকারী ,সোমনাথ শ্যামরা । মহাভারতে শকুনি মামা যেমন কৌরবদের শেষ করেছিল, তেমনই ৫৯ বছর বয়সী ব্যর্থ নেতা পার্থর আসল উদ্দেশ্য- মমতা বন্দোপাধ্যায়কে শেষ করা। তাই দলের মধ্যে থেকেই দলের ক্ষতি করে চলছেন সুকৌশলে। অনুব্রত মণ্ডল, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মানিক ভট্টাচার্য, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, জীবন সাহা ,শান্তনু, কুন্তল , সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রদের মতন পার্থ ভৌমিককেও তার কর্মফল পেতে হবে।
সূত্রের খবর পার্থ ভৌমিকের বাবা সাধারণ স্কুল শিক্ষক হলেও ২০১১-তে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পরেই হঠাৎ করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হতে থাকে। ২০১৭ সালে মুকুল রায় বিজেপিতে যাওয়ার পরে দলের এক শীর্ষ স্থানীয় যুব নেতার পদলেহন করে ক্ষমতার শিখরে পৌঁছে যান বিজয়গর কলোনির এই বহুরূপী নেতা। রাতারাতি চারটি পেট্রল পাম্প, হোটেল, বার, পুরুলিয়ায় রিসর্ট বাগিয়ে বিপুল সম্পত্তির মালিক হন। বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে শেখ শাহজাহানদের কায়দায় জমি বাড়ি লুঠের মত গুরুতর অভিযোগও তার বিরুদ্ধে।
পার্থ ভৌমিক সেচ মন্ত্রী হওয়ার পর সেচ দফতরেও স্বজন পোষণ ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে বেনামে ঘনিষ্ঠদের টেন্ডার পাইয়ে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক আমলার।
সম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে একাধিক জায়গায় মাছের মীন বা ডিমপোনা বেআইনিভাবে পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়ে বিএসএফ-এর হাতে। এখানেও পার্থ ভৌমিক যোগের কথা জানা গিয়েছে বলে বিএসএফ সূত্রে দাবি। বিরোধীদের দাবি, গরু পাচারে অভিযুক্ত অনুব্রত মণ্ডলের মত পার্থকেও অবিলম্বে হেফাজতে নিয়ে জেরা করা উচিত কেন্দ্রীয় সংস্থার ।
মুখ্যমন্ত্রী নিজে একাধিকবার সতর্ক করলেও তাতে খুব একটা কাজ হয়নি। পার্থ আছেন পার্থতেই।
সন্দেশখালি কাণ্ডে এবার খোদ মন্ত্রীর যুক্ত থাকার অভিযোগ!
ভৌমিকের অতি ঘনিষ্ঠ বারাসাত পৌরসভার এক পুর প্রতিনিধির কথায়, "পার্থদাকে কেউ ছুঁতে পারবে না, পুলিশ-প্রশাসন-সরকার সবই পার্থদার পকেটে। দোলা সেনের প্রকাশ্যে করা মন্তব্যের থিওরি মেনে পার্থদা নিয়মিত নৈবেদ্য পৌঁছে দেন যথাস্থানে"। সন্দেশখালি, চোপড়ার মত ফুঁসছে নৈহাটি, জগদ্দল, বীজপুর, নোয়াপাড়া, ব্যারাকপুর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সি-সহ দলের উচ্চ নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে এখন এই দুর্নীতিগ্রস্থের হাত থেকে মুক্তির অপেক্ষায় সাধারণ মানুষ। মানুষের ক্ষোভের বিস্ফোরণ শুধু সময়ের অপেক্ষা। এমনটাই মনে করছেন, সিপিআইএম রাজ্য কমিটির সম্পাদক গার্গী চট্টোপাধ্যায়। রাজ্যস্তরের এক তৃণমূল নেতার কথায়, নিজের দুর্নীতি ঢাকতে ও বিএসএফ-কেন্দ্রীয় এজেন্সির হাত থেকে বাঁচতেই বিজেপির সঙ্গে আঁতাত। এতে আদতে তৃণমূলের সংগঠনকেই ভেতর থেকে ফোপরা করে দিচ্ছেন দুর্নীতির কিংপিন। ইভিএম নিউজ