ব্যুরো নিউজ, ৪ মার্চ: প্রকাশ্যে নব্য ও প্রাচীন তৃণমূলের কাজিয়া। ২৩ বছর ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খারাপ এবং ভালো সময়ের সঙ্গী ছিলেন তাপস রায়। একরাশ অভিমান নিয়ে ২৩ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করলেন বরানগরের তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়।
তৃণমূলে যোগ দেবার আগে তিনি কংগ্রেসের অন্যতম নির্ভরযোগ্য নেতা উত্তর কলকাতায় সৌমেন মিত্র অনুগামী বলেই পরিচিত ছিলেন তিনি। এমনকি তৃণমূলে থাকাকালীন সৌমেন মিত্র যখন কংগ্রেসে ফিরে যান এবং হঠাৎই মারা যান তখন তার মরদেহর সঙ্গে একেবারে হাসপাতাল থেকে নিমতলা মহাশ্মশান পর্যন্ত সঙ্গীও ছিলেন তাপস রায়। ২০০১ সালে বড়বাজার থেকে তৃণমূলের বিধায়ক হয়েছিলেন। ২০১১ , ২০১৬ এবং ২০২১ সালে বরানগরের বিধায়ক ছিলেন তাপস রায়। পশ্চিমবঙ্গের পরিকল্পনা ও পরিসংখ্যান প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন তিনি।
এদিন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তিনি ইস্তফা পত্র জমা দেন তাপস রায়। স্তবপত্র জমা দেওয়ার পর তিনি সরকারি গাড়ি ত্যাগ করে নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি করে বিধানসভা থেকে বেরিয়ে আসেন। ১৩ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টারেটের আধিকারিকরা পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি তদন্তে হানা দেন তাপস রায়ের বাড়িতে। সেই সময় থেকেই তিনি অভিযোগ করেন এই ইডি হানার পেছনে তার দলেরই একাংশের যোগ রয়েছে। এবং দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয়ে উদাসীন থেকেছেন বরাবর।
আপ সরকারের বড় ঘোষণা! প্রতিমাসে মহিলারা পাবেন ১০০০ টাকা
এই বর্ষিয়ান নেতা দলের সর্বক্ষণের কর্মী এবং অনুগত সৈনিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। দলের মধ্যেই দুর্নীতির বিষয়ে সোচ্চার হতেন তিনি। মুখের ওপরে ভালোকে ভালো এবং খারাপকে খারাপ বলতেন। প্রতিবাদী এই নেতা কখনো কোনও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নন বলেই দাবি করেন। হঠাৎই তার বাড়িতে ইডির হানা দেওয়ায় দল তার পাশে থাকেনি বলে একরাশ অভিমান উগরে দিয়েছেন সংবাদমাধ্যমের সামনে। ইডি অভিযান নিয়ে তিনি বলেছেন কয়েক দশকের রাজনৈতিক জীবনে এরকম অপমানিত আর কখনো হইনি। বাম আমলেও রাজনীতি করেছি তখনও কোন পুলিশ বাড়িতে ঢোকেনি। এদিকে আমার বাড়িতে ইডি অভিযান নিয়ে নীরব ভূমিকা মুখ্যমন্ত্রীর। যেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখা গেছে অনুব্রত মণ্ডল, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, রাজিব কুমার এদের পাশে দাঁড়াতে এবং সম্প্রতি সন্দেশখালীর ঘটনায় যেভাবে অভিযুক্ত শেখ শাহজাহানের পক্ষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভা কক্ষে সওয়াল করেছেন সে ভাবে বিধায়ক তাপস রায়ের পক্ষে তিনি একটি বাক্য ব্যয় করেননি। আর এতেই তিনি অপমানিত হয়েছেন বলে জানান। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা কখনো এধরনের পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যায়নি বলে জানান তিনি।
বেশ কয়েক মাস ধরে সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার মনোমালিন্য সামনে উঠে এসেছে। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে তিনি বলেন, তার বাড়িতে ইডি হানার মূল কারিগর সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ তিনি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নন প্রডাক্টিভ এবং বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক রাখা একটি অকেজো রাজনৈতিক নেতা বলে উল্লেখ করেছিলেন। আর তাতেই নাকি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় তার বাড়িতে ইডি হানার ব্যবস্থা করেন। একই সঙ্গে জানান ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস উত্তর কলকাতা থেকে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে টিকিট দিলেও তিনি কোনওমতে জিতবেন না। তিনি আস্তে আস্তে দূরত্ব তৈরি করছিলেন দলের সঙ্গে। ইডি তার বাড়িতে হানা দেবার পর এই দূরত্ব আরও বাড়তে থাকে। ইদানিং সেভাবে তিনি বিধান সভাতেও হাজিরা দিতেন না। দলের কোন কাজকর্মেও সেভাবে নিজেকে যুক্ত করতে না।
এর আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের দিকে তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার কথা বলেছিলেন। সঠিক সময়ে রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়া উচিৎ। এ বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, “আমি গাভাস্কারের ভক্ত সকলের উচিত ওকে অনুসরণ করা পাঁচ ছটা সেঞ্চুরি হাতে নিয়ে ব্যাট দোলাতে দোলাতে ক্রিস ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। রাজনীতিতেও তেমন হওয়া উচিত। তা নাহলে নতুন প্রজন্ম জায়গা পাবে কি করে? সময়ে জায়গা না ছাড়লে সিলেক্টারদের কোপেও পড়তে হবে”। তিনি মনে করতেন রাজনীতিতেও অবসরের বয়স থাকা উচিত। এ ব্যাপারে তিনি বলেছিলেন, যখন পাকাপাকি সিদ্ধান্ত নেবেন তখন তিনি সর্বোচ্চ নেতৃত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশ্চিতভাবে বিষয়টি জানিয়ে দেবেন। অবশ্য সেই সময় আসতে না আসতেই তিনি মানসিকভাবে আহত হলেন দলের সুপ্রিমোর কাছ থেকেই। তার একটাই বক্তব্য দল তার বিপদের সময় পাশে দাঁড়ায়নি। ইডি হানার ৫২ দিন পরেও মুখ্যমন্ত্রী একবারও খোঁজ নেননি এই বিষয়ে। দলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ এবং ব্রাত্য বসু তার বাড়িতে গিয়ে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করলেও এই পুরনো সৈনিকের মনের বরফ গলাতে পারেননি। তাই তিনি দলে থাকবেন না বলেই সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন। আর সেই মতো আজ সকালেই বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তার ইস্তফা পত্র জমা দেন। ইভিএম নিউজ