ব্যুরো নিউজ, ২১ এপ্রিলঃ ভারতে রক্তের একটি জটিল ও বংশগত রোগ — সিক্ল সেল অ্যানিমিয়া — এখনও বহু মানুষকে নীরবে কাবু করে চলেছে। বিশেষ করে দেশের উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে এই রোগের প্রকোপ বেশি। কিন্তু রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষাগুলি এতটাই ব্যয়বহুল যে, সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। সেই সমস্যার সমাধানেই নতুন এক বৈজ্ঞানিক উদ্যোগ দেশকে এনে দিয়েছে আশার আলো। বেঙ্গালুরুর রমন রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং সেন্ট জন্স মেডিক্যাল কলেজ যৌথ ভাবে আবিষ্কার করেছে একটি যন্ত্র, যা দ্রুত, সহজে এবং সস্তায় সিক্ল সেল অ্যানিমিয়ার উপস্থিতি শনাক্ত করতে পারবে। এই যন্ত্রটির নাম ‘ইলেক্ট্রো-ফ্লুইড ডিভাইস’।
মমতার খামে রাজনৈতিক কৌশল? দিলীপের দরজায় পৌঁছল নবান্ন!
কীভাবে কাজ করে এই যন্ত্র?
রক্তে লোহিত রক্তকণিকার গঠন বদলে গিয়ে যদি কাস্তের মতো আকৃতি নেয়, তখনই শুরু হয় সিক্ল সেল ডিজ়িজ়। এই বিকৃতি ধরা পড়ত আগেই প্রচলিত এইচপিএলসি (High Performance Liquid Chromatography) পরীক্ষার মাধ্যমে। কিন্তু সেই পরীক্ষার খরচ এত বেশি যে, অনেকেই তা করাতে পারেন না। তার উপর, ফলাফল পেতেও অনেক সময় লাগে। নতুন যন্ত্রটি বৈদ্যুতিক তরঙ্গ ব্যবহার করে দ্রুত শনাক্ত করতে পারে রক্তকণিকায় অস্বাভাবিকতা রয়েছে কি না। শুধু তা-ই নয়, এই যন্ত্রে রয়েছে বায়োপসির সুবিধাও, যার মাধ্যমে কোষ বিভাজনের গতি বা রূপান্তরের ধরনও চিহ্নিত করা সম্ভব। ফলে স্ট্রোক, অ্যানিমিয়া বা লিউকেমিয়ার মতো জটিল সমস্যার আশঙ্কা আগেভাগেই শনাক্ত করা যাবে।
সিক্ল সেল একটি জিন-বাহিত রোগ। বাবা-মা যদি বাহক হন, তাহলে সন্তানের মধ্যে রোগটি তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে যেসব সমাজে আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ের রীতি রয়েছে, সেইসব উপজাতি গোষ্ঠীতে রোগটি ভয়ানক রূপ নিচ্ছে। উপসর্গের মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, গাঁটে ব্যথা, জন্ডিস, শিশুর বৃদ্ধি থেমে যাওয়া ইত্যাদি। সময়মতো ধরা না পড়লে এই রোগ থেকে ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।
শান্তির মুখোশে লুকানো উত্তেজনার আগুন: কী বললেন মুখ্যমন্ত্রী?
এই যন্ত্রটি ব্যবহার করে এমন সব এলাকাতেও রোগ নির্ণয় সহজ হবে, যেখানে এখনও আধুনিক ল্যাব বা পরীক্ষার সুবিধা নেই।এই নতুন প্রযুক্তি শুধু একটি যন্ত্র নয়, গ্রামীণ ও উপজাতি জনগোষ্ঠীর জন্য এটি হতে পারে জীবন বাঁচানোর হাতিয়ার। সুলভ মূল্যে, কম সময়ে রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে এই উদ্যোগ এক বড় পদক্ষেপ হতে চলেছে ভারতের রক্তরোগ মুক্ত ভবিষ্যতের পথে।