ব্যুরো নিউজ ,২৫ ডিসেম্বর:বড়দিন মানেই স্যান্টা ক্লজের আগমন, যার হাত ধরেই আসে আনন্দ, খুশি আর উপহার। স্যান্টা ক্লজ যেভাবে বড়দিনের পরিপূরক চরিত্র হয়ে উঠেছে, তেমনি এর পেছনে রয়েছে এক দীর্ঘ ইতিহাস। স্যান্টা ক্লজের উৎস নিয়ে অনেক গল্প রয়েছে, তবে সবচাইতে পুরনো ও জনপ্রিয় গল্পটি সেন্ট নিকোলাসের। চতুর্থ শতকের সেন্ট নিকোলাস ছিলেন মায়রা প্রদেশের বিশপ, বর্তমান তুরস্কের এলাকার মানুষ। সেন্ট নিকোলাস ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু এবং দরিদ্রদের সাহায্য করতেন। একবার, এক গরিব প্রতিবেশীর মেয়ের জন্য সেন্ট নিকোলাস গোপনে তার মোজার মধ্যে স্বর্ণমুদ্রা রেখে দেন। এই ধরনের সাহায্য তিনি অনেকবার করতেন। সেন্ট নিকোলাস শিশুদের জন্যও বিশেষ উপহার দিতেন, যা আজকের স্যান্টা ক্লজের আচরণের সাথে মিলে যায়।
একটি হৃদয়স্পর্শী মুহূর্তঃ বিশেষ ভাবে সক্ষম ভক্তের সঙ্গে মেলবোর্নে আলিঙ্গন ঋষভ পন্থের
কাল্পনিক চরিত্র নয়
উপহার দেওয়া এবং সান্ত্বনা দেওয়ার এই প্রচলন আরও শক্তি পেয়েছিল ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে। ডাচ ভাষায় সেন্ট নিকোলাসকে ‘সিন্টারক্লাস’ বলা হতো। সেন্ট নিকোলাস ডে, ৬ ডিসেম্বর, মধ্যযুগে ইউরোপে ব্যাপকভাবে পালিত হত, কিন্তু ১৬ শতকের পর এ উদযাপন কিছুটা কমে যায়। তবে, ডাচরা এই ঐতিহ্য ধরে রাখে এবং ১৮০০ সালের প্রথমদিকে আমেরিকায় এই প্রথা ছড়িয়ে পড়ে। নিউ ইয়র্ক শহরে ডাচ বসতি গড়ার পর, সেন্ট নিকোলাসের এই সংস্কৃতি জনপ্রিয় হতে শুরু করে।১৮০৪ সালে প্রথম সেন্ট নিকোলাস বা স্যান্টা ক্লজের ছবি আঁকেন শিল্পী অ্যালেক্সান্ডার অ্যান্ডারসন। পরে, ১৮২২ সালে কবি ক্লেমেন্ট মুর তাঁর বিখ্যাত কবিতা “দ্য নাইট বিফোর ক্রিসমাস”-এ স্যান্টাকে স্লেজগাড়ি চড়ে উপহার বিতরণকারী হিসেবে চিত্রিত করেন। পরবর্তীতে, ১৮৬২ সালে কার্টুনিস্ট টমাস ন্যাস্ট স্যান্টা ক্লজের একটি নতুন রূপ এঁকে, তাঁকে এক গোলগাল, দাড়িওয়ালা এবং হাসিখুশি চরিত্র হিসেবে জনপ্রিয় করে তোলেন। ন্যাস্টের আঁকা স্যান্টাই পরবর্তীকালে বড়দিনের প্রতীক হয়ে ওঠে।১৯৩১ সালে কোকাকোলা কোম্পানির বিজ্ঞাপনে স্যান্টা ক্লজের বাণিজ্যিক আত্মপ্রকাশ ঘটে। শিল্পী হ্যাডন সান্ডব্লম স্যান্টাকে একটি বাস্তব এবং প্রতীকী চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করেন, যা পরে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। স্যান্ডব্লমের তৈরি স্যান্টা আজকের বড়দিনের প্রতীক হয়ে গেছে।
জানেন কি আগে সান্তা ক্লজ সবুজ রঙের পোশাক পড়তেন? হঠাৎ কেন পোশাকের রঙ বদল? জানুন
তবে, স্যান্টা ক্লজ শুধুমাত্র এক কাল্পনিক চরিত্র নয়। বাস্তবে, ফিনল্যান্ডের রোভানিয়েমি শহরে স্যান্টা ক্লজের বসবাস। সেখানে হাজার হাজার পর্যটক স্যান্টার সঙ্গে দেখা করতে যান। আলাস্কায়ও রয়েছে এক বিশেষ স্যান্টা ক্লজ, যিনি ৭৫ বছর বয়সী টমাস প্যাট্রিক ও’কোনার, আলাস্কার মেয়র। তিনি শিশুদের অধিকার এবং সমাজসেবা নিয়ে কাজ করেন।তবে এই বড়দিনে স্যান্টার বার্তা হয়ে ওঠে আরও বড় এবং শক্তিশালী। স্যান্টা ক্লজের আদর্শে, পৃথিবীর প্রতিটি শিশু যেন নিরাপদ এবং আনন্দময় পরিবেশে বেড়ে ওঠে। আজকের বিশ্বে, যেখানে যুদ্ধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শিশুদের জীবন বিপন্ন, সেখানে স্যান্টার ছোঁয়ায় একটি সুন্দর, শান্তিপূর্ণ পৃথিবী গড়ে তোলার আশায় ভরা জীবন বাচ্চাদের জন্য উপহার হয়ে উঠবে। এক নতুন সকালের স্বপ্ন, যেখানে প্রতিটি শিশু নিরাপদ এবং সুখী থাকবে, সে দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে আমাদের।