ব্যুরো নিউজ ৯ জুন : পশ্চিমবঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনা এখন এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। আরামবাগ মহকুমায় ক্রমবর্ধমান দুর্ঘটনার হার যেমন উদ্বেগ বাড়াচ্ছে, তেমনই কলকাতার প্রাণকেন্দ্র নবান্নের সামনে বেপরোয়া টোটোর ধাক্কায় এক সিভিক ভলান্টিয়ারের মৃত্যু রাজ্যের ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা এবং সড়কে বেপরোয়া যানের দাপট নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এই ঘটনাগুলি শুধু মূল্যবান জীবন কেড়ে নিচ্ছে না, অসংখ্য মানুষকে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু করে দিচ্ছে।
আরামবাগে সড়ক দুর্ঘটনার বৃদ্ধি: বিধায়কের অভিযোগ ও অব্যবস্থা:
আরামবাগ মহকুমায় সড়ক দুর্ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে গৌরহাটি এবং পল্লীশ্রী সড়ক মোড়ের মধ্যবর্তী দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় এর প্রকোপ বেশি। খানাকুলের বিজেপি বিধায়ক সুশান্ত ঘোষ এই ক্রমবর্ধমান সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং পুলিশ প্রশাসনকে এই সংকট রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বিধায়ক ট্র্যাফিক পুলিশের উদাসীন মনোভাবের সমালোচনা করেছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ (Safe Drive, Save Lives) অভিযান কেবল নামেই চলছে এবং এই সব দুর্ঘটনার মূল কারণগুলো মোকাবিলায় এটি ব্যর্থ হচ্ছে। তিনি দুর্ঘটনার পেছনে বেশ কয়েকটি প্রধান কারণ উল্লেখ করেছেন:
- অবৈধ টোটোর দাপট: অনুমতি ছাড়াই বিপুল সংখ্যক অবৈধ টোটো চলাচল করছে, যা তীব্র যানজটের সৃষ্টি করছে।
- অবৈধ পার্কিং: লরি এবং অন্যান্য যানবাহনের অবৈধ পার্কিং যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে।
- নির্মাণ সামগ্রীর স্তূপ: রাস্তায় নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখা হচ্ছে, যা বিশেষ করে দুই চাকার চালকদের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে।
- ফুটপাত দখল: অবৈধ দোকানপাট দ্বারা ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ায় পথচারীরা বাধ্য হয়ে রাস্তায় হাঁটছে, যা তাদের বিপদে ফেলছে।
- বেপরোয়া ড্রাইভিং: দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো এবং বেপরোয়াভাবে ওভারটেক করার কারণে ঘন ঘন দুর্ঘটনা ঘটছে।প্রবীণ নাগরিকদের জন্য কেন্দ্রের ঐতিহাসিক ঘোষণা: ১৫ জুন থেকে সারাদেশে বিনামূল্যে ভ্রমণের সুবিধা 
সুশান্ত ঘোষ অবিলম্বে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো পরীক্ষা করার জন্য স্পিডোমিটার স্থাপন, চালকদের রুটিন অ্যালকোহল ব্রেথ টেস্ট করা, কম ধারণক্ষমতার রাস্তায় অতিরিক্ত বোঝাই গাড়ির প্রবেশে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং রাস্তা থেকে অবৈধ পার্কিং ও নির্মাণ বর্জ্য অপসারণ। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, এই পদক্ষেপগুলি কার্যকরভাবে প্রয়োগ না হলে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ উদ্যোগটি অকার্যকর থাকবে এবং এই অঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনা প্রাণ কেড়ে নিতে থাকবে।
নবান্নের সামনে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা: টোটোর বলি সিভিক ভলান্টিয়ার:
শনিবার দুপুরে রাজ্য সচিবালয় নবান্নের সামনে টোটোর ধাক্কায় কলকাতা পুলিশের (KP) একজন ৫১ বছর বয়সী মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ার (CV) নিহত হয়েছেন। পুলিশ বেপরোয়া গাড়ি চালানোর অভিযোগে টোটো চালককে গ্রেফতার করেছে এবং তিন চাকার যানটির চার যাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। ঘটনার পরপরই লালবাজার এবং হাওড়া সিটি পুলিশ কমিশনার প্রবীণ কুমার ত্রিপাঠী সহ বরিষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান।প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, দুপুর ২টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে যখন হাওড়া জেলার ডোমজুরের বাসিন্দা সিভিক ভলান্টিয়ার নূপুর চট্টোপাধ্যায় সচিবালয়ের সামনে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। তিনি রাস্তা পার হয়ে নবান্নের পাশের অন্য রাজ্য সরকারি দফতর উপান্নাতে পৌঁছনোর মুহূর্তে একটি দ্রুতগতির টোটো তাকে হঠাৎ ধাক্কা মারে। তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন এবং তাকে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের পাশে একটি নার্সিং হোমে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে তার স্বামী বিকেলে নার্সিং হোমে পৌঁছান। প্রবীণ কুমার ত্রিপাঠীর হস্তক্ষেপে স্থানীয় শিবপুর থানার পুলিশ আধিকারিকরা তদন্ত শুরু করেন এবং ঘটনার আধা ঘণ্টার মধ্যেই চালককে ধরে ফেলেন। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন যে, নবান্ন এবং সংলগ্ন এলাকায় টোটোগুলি এক উৎপাত হয়ে উঠেছে এবং বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণেই এই সিভিক পুলিশকর্মীর প্রাণহানি ঘটেছে। তাদের দাবি, পুলিশকে টোটোর বেপরোয়া ড্রাইভিং নিয়ন্ত্রণ করতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, অন্যথায় একই ধরনের দুর্ঘটনা আবারও ঘটবে।
উপসংহার:
এই ঘটনাগুলি পশ্চিমবঙ্গের সড়ক নিরাপত্তার করুণ চিত্র তুলে ধরে। একদিকে যেমন আরামবাগের বিধায়ক ট্র্যাফিক পুলিশের উদাসীনতা এবং অব্যবস্থার অভিযোগ তুলেছেন, তেমনই নবান্নের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকার সামনে বেপরোয়া টোটোর তাণ্ডব প্রমাণ করে যে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও কঠোর পদক্ষেপ এবং নিরন্তর নজরদারি প্রয়োজন। ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কেবল একটি প্রচারের স্লোগান না থেকে কার্যকর নির্দেশ হয়ে উঠুক ।
 
				
 
								 
								 
								 
								



















