ব্যুরো নিউজ ২১ অক্টোবর : ইদানিং বহু নামিদামি রেস্টুরেন্টের খাবারে পাম তেলের ব্যবহার অত্যাধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পাম তেলর ব্যবহার কেন খাদ্যশিল্পে অত্যাধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে? যেখানে পাম তেল শরীরের জন্য অনেকটাই ঝুঁকি পূর্ণ।পাম তেল এক ধরনের ভোজ্য উদ্ভিদজ তেল যা পাম ফলের মধ্যবর্তী অংশ থেকে পাওয়া যায়। উচ্চ বিটা ক্যারাটিনের কারণে স্বাভাবিকভাবেই পাম তেল লালচে রংয়ের হয়। আফ্রিকার ,দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ব্রাজিলের মানুষেরা পাম তেল রান্নায় ব্যবহার করে থাকে অধিক মাত্রায়।বর্তমানে বেশিরভাগ সাধারণ খাবারে পাম তেল পাওয়া যায় । বাজারে পাম তেলের দাম অনেকটা কম হওয়ায় খাদ্য শিল্পে বিভিন্ন খাবারে পাম তেল ব্যবহার করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাভাবিক এই তেলে স্ট্যাচুডেড ফ্যাট অনেক বেশি থাকে যা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। সেচুডেড ফ্যাট এলডিএল (লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন) কোষ্টের প্লেট বাড়ানোর জন্য কুখ্যাত। নাটকীয়ভাবে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাসকুলার রোগের বৃদ্ধি ঘটায়।
আসুন জেনে নেওয়া যাক পাম তেল কিভাবে উৎপাদন করা হয়।
এটি মূলত পাম গাছের ফল থেকে তৈরি হয়, যা দেখতে নারকেল গাছের মতো, কিন্তু এর উচ্চতা অনেক বেশি। এই গাছগুলি প্রায় ২৫ বছর পর্যন্ত ফল দেয় এবং প্রতি তিন বছরে একবার ফল ধরার সময় আসে। পাকা পাম ফলগুলি লালচে-কমলা রঙের হয় এবং থোকা থোকা থাকে। ফলের ভেতরের সাদা অংশটিকে বলা হয় পাম নাট, যা নারকেলের মতো দেখতে।পাম অয়েল তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয় ফল সংগ্রহের মাধ্যমে। শ্রমিকরা গাছ থেকে ফল গুলি তুলে ট্রাকে করে কারখানায় নিয়ে যায়। পাকা ফল গুলি নিজে থেকেই পড়ে যায়,ফল গুলো কারখানায় পৌঁছানোর পর প্রথমেই সেগুলি বাছাই করা হয়। মেশিনের সাহায্যে ভালো এবং খারাপ ফল আলাদা করা হয়। এরপর আসে স্ট্রিলাইজেশন ধাপ, যেখানে ১৪০-১৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ফলগুলোকে জীবাণুমুক্ত করা হয়। তারপর ফলগুলো সেদ্ধ করা হয় যাতে অনুজীবগুলো মরে যায়।এরপর ফলের খোসা আলাদা করা হয় এবং সেগুলোকে শুকনো জায়গায় রাখা হয়। পরবর্তী ধাপে, প্রেস মেশিনে অতিরিক্ত চাপ দিয়ে ফল থেকে তেল বের করা হয়। প্রাপ্ত তেলটি একটি ট্যাঙ্কে জমা হয় এবং ঠান্ডা হলে এটি মাখন বা চিজের মতো দেখতে হয়। শেষ পর্যায়ে, তেলকে পরিশোধন করে রান্নার জন্য প্রস্তুত করা হয় এবং বোতলে ভরে বিক্রি করা হয়।
পাম চাষের পেছনে কিছু অজানা সত্য রয়েছে। এই চাষে শ্রমিকদের কম মজুরিতে দীর্ঘ সময় কাজ করানো হয়। অনেক সময় আদিবাসীদের জমি জোরপূর্বক দখল করা হয়। পাম ফল বাজারে অনেক কম দামে পাওয়া যায়। সবমিলিয়ে এই তেল উৎপাদন করতে অনেকটাই কম খরচ হয়। যার ফলে পাম তেলের দাম অন্যান্য তেলের দাম থেকে অনেক কম। যার জন্য খাদ্য শিল্পে পাম তেলের ব্যবহার অত্যাধিক মাত্রায় বেড়ে গেছে।সুতরাং, পাম অয়েল আমাদের খাদ্যাভ্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। তবে খাদ্যে পাম তেলের ব্যবহারে যে হৃদরোগের সমস্যা অনেকটাই বেড়ে যায় তাই এই তেল ব্যবহার অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ।তবে এর উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় পরিবেশ ও মানবাধিকার বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা আবশ্যক।