ব্যুরো নিউজ ,৭ মে: পাকিস্তানে ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালিয়ে ভারত দেখিয়ে দিল, আধুনিক প্রযুক্তি আর কৌশলগত বুদ্ধিমত্তার সম্মিলনে যুদ্ধে কীভাবে সাফল্য অর্জন করা যায়। মাত্র ২৫ মিনিটে চালানো এই নিশ্ছিদ্র হামলায় ব্যবহৃত হয় দুই অত্যাধুনিক অস্ত্র— স্ক্যাল্প (Storm Shadow) এবং হ্যামার (HAMMER)। প্রশ্ন উঠেছে— তাহলে ব্রহ্মস ব্যবহার করা হল না কেন? আসুন দেখে নেওয়া যাক এর পেছনের কারণ।
ব্রহ্মস ব্যবহার করা হল না কেন
‘অপারেশন সিঁদুর’-এ ভারতের মূল ভরসা ছিল রাফাল যুদ্ধবিমান। এই বিমান থেকেই ছোড়া হয় স্ক্যাল্প এবং হ্যামার ক্ষেপণাস্ত্র। দু’টি অস্ত্রই তৈরি ফ্রান্সে, এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সাজানো।
স্ক্যাল্প, যা ‘স্টর্ম শ্যাডো’ নামেও পরিচিত, একটি দূরপাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। ৪৫০ কিমি পর্যন্ত পাল্লার এই অস্ত্র তিনটি ন্যাভিগেশন সিস্টেম ব্যবহার করে লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করে নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে সক্ষম। স্ক্যাল্পের ইমেজিং ইনফ্রারেড সিকার প্রযুক্তি এটিকে আরও মারাত্মক করে তোলে। লক্ষ্যবস্তুতে মিলে গেলে তবেই বিস্ফোরণ ঘটায়, ফলে পাশের অঞ্চলে ক্ষতি হয় না। আর সবচেয়ে বড় কথা, এটি এত নিচু দিয়ে উড়ে যায় যে শত্রুপক্ষের রাডারে ধরা পড়া প্রায় অসম্ভব।
হ্যামার, অর্থাৎ Highly Agile Modular Munition Extended Range, একটি ছোট পাল্লার প্রিসিশন-গাইডেড বোমা। এটি ৭০ কিমি পর্যন্ত নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম। পাহাড়ি অঞ্চল, ঘন জঙ্গল কিংবা কংক্রিট বাঙ্কার— সব জায়গাতেই এটি ব্যবহারযোগ্য।
ব্রহ্মস একটি দ্রুতগামী, ভারি এবং তুলনামূলকভাবে বেশি ধ্বংসাত্মক ক্ষেপণাস্ত্র। কিন্তু অপারেশন সিঁদুরে ভারতের লক্ষ্য ছিল নির্দিষ্ট জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করা, সাধারণ নাগরিকদের ক্ষতি না করে। স্ক্যাল্প ও হ্যামারের নির্ভুলতা এবং কম কোল্যাটারাল ড্যামেজের ক্ষমতা তাই এই মিশনে উপযুক্ত।
২০১৯ সালে পুলওয়ামার পরে ভারত মিরাজ ২০০০ থেকে হামলা চালিয়ে বালাকোটে জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করেছিল। এবার রাফাল ও আধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করে ভারত শুধু প্রতিশোধ নেয়নি, বিশ্বের সামরিক পরিমণ্ডলে শক্ত বার্তাও পাঠিয়েছে। পাকিস্তান নিজেই এই হামলার কথা স্বীকার করেছে, যদিও তারা দাবি করছে নিহতরা সাধারণ মানুষ।এই হামলা শুধু বায়ুসেনার একক অভিযান নয়, ভারতীয় সেনা ও নৌবাহিনীরও সমন্বয় ছিল এতে। এর ফলে কৌশলগতভাবে আরও সুসংগঠিত ও সুরক্ষিত ছিল অপারেশন।
স্ক্যাল্প ও হ্যামার নির্বাচনের পেছনে ছিল সুস্পষ্ট কৌশলগত পরিকল্পনা— নির্ভুলতা, লো-কোল্যাটারাল ড্যামেজ এবং শত্রু রাডার ফাঁকি দেওয়ার দক্ষতা। ব্রহ্মস নয়, এই দুই অস্ত্রই সঠিক সময়ে সঠিক প্রয়োগের নিদর্শন।