ব্যুরো নিউজ, ৩১ মার্চ : অনেকেই সকালে ঘুম থেকে উঠে এক নিঃশ্বাসে ২ লিটার বা তার বেশি জল পান করেন। অনেকে মনে করেন, এটি শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয় এবং হজমশক্তি উন্নত করে। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে, এই অভ্যাস স্বাস্থ্যকর না-ও হতে পারে। বিশেষ করে, এটি কিডনির উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তাহলে সকালে কতটুকু জল পান করা নিরাপদ? চলুন, বিশেষজ্ঞদের মতামত ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে জেনে নিই।
নিয়তির খেলা না জীবনের রহস্য? ষাটোর্ধ্ব নারীর মাতৃত্বের গল্প
অতিরিক্ত জল কি কিডনির জন্য ক্ষতিকর?
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সকালে বেশি পরিমাণ জল পান করার প্রবণতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। অনেকেই মনে করেন, এটি শরীরকে ডিটক্স করে। কিন্তু ভারতের পিএসআরআই হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান ডা. সঞ্জীব সাক্সেনার মতে, এই ধারণাটি সম্পূর্ণ সঠিক নয়। তিনি বলেন, “একসঙ্গে অতিরিক্ত জল পান করলে কিডনির উপর চাপ পড়ে। কিডনির প্রধান কাজ শরীরের অতিরিক্ত তরল ও বর্জ্য অপসারণ করা। কিন্তু হঠাৎ করে প্রচুর জল প্রবেশ করলে কিডনি দ্রুত এটি ফিল্টার করতে পারে না, ফলে এর কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।” তিনি পরামর্শ দেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে ১ থেকে ২ গ্লাস (প্রায় ২৫০-৫০০ মিলি) জল পান করাই যথেষ্ট। এর বেশি একবারে পান না করাই ভালো।
দিনে কতটুকু জল পান করা উচিত? কিডনি ও শরীর সুস্থ রাখতে সঠিক পরিমাণ জল পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দিনে ২.৫ থেকে ৩ লিটার জল পান করাই আদর্শ। তবে এটি সারা দিনে ভাগ করে পান করতে হবে। ডা. সাক্সেনা আরও ব্যাখ্যা করেন, “যারা অফিসে বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে কাজ করেন, তাদের প্রতিদিন অন্তত ২-২.৫ লিটার জল পান করা উচিত। অন্যদিকে, যারা ব্যায়াম করেন বা মাঠে কাজ করেন, তাদের জলের চাহিদা আরও বেশি হতে পারে।” একই সঙ্গে, তিনি সতর্ক করে বলেন, “জল কম পান করলে যেমন ডিহাইড্রেশনের সমস্যা হতে পারে, অতিরিক্ত জল পান করলেও কিডনি ও অন্যান্য অঙ্গের উপর বাড়তি চাপ পড়ে। তাই ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি।”
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ: সঠিক নিয়ম মেনে জল পান করুন, একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত জল কিডনির ফিল্টারিং সিস্টেমের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা দীর্ঘমেয়াদে কিডনির কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। অন্যদিকে, যারা কম জল পান করেন, তাদের ডিহাইড্রেশন ও কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই চিকিৎসকরা বলছেন, দিনভর সমানভাবে জল পান করাই সবচেয়ে নিরাপদ উপায়। ভুল ধারণা থেকে সতর্ক থাকুন, বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে। যেমন, “সকালে ২-৩ লিটার জল পান করলে শরীর ডিটক্স হয়”—এই ধারণা সঠিক নয়। ডা. সাক্সেনা বলেন, “আমাদের শরীরের নিজস্ব প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া রয়েছে। কিডনি ও লিভার স্বাভাবিকভাবেই টক্সিন অপসারণ করে। অতিরিক্ত জল পান করলে এই প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো চরমপন্থা অবলম্বন করা উচিত নয়।”
ভূমিকম্প না কি যুদ্ধের ছক? মায়ানমারের ঘটনার পেছনে গোপন সত্য উন্মোচন করুন!
সঠিক জল পানের অভ্যাস গড়ে তুলুন, কিডনি ও শরীর সুস্থ রাখতে জল পানের সঠিক নিয়ম অনুসরণ করুন: সকালে ১-২ গ্লাস (২৫০-৫০০ মিলি) হালকা গরম জল পান করুন। সারা দিনে ২.৫-৩ লিটার জল পান করুন, তবে একসঙ্গে নয়। ব্যায়াম বা গরম আবহাওয়ায় বেশি জল পান করুন। তৃষ্ণার সংকেত উপেক্ষা করবেন না, কিন্তু জোর করে অতিরিক্ত জল পান করবেন না। সুস্থ থাকতে সব কিছুতেই ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। জল পানের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলুন, ভুল তথ্যের ফাঁদে পড়বেন না!