মনমোহন সিং

ব্যুরো নিউজ, ২৭ ডিসেম্বর:মনমোহন সিং ভারতের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। প্রধানমন্ত্রী তিনি যদি নাও হতেন তাহলেও তিনি ভারতের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পথপ্রদর্শক। ১৯৯১ সালে তিনি যখন নরসিংহ রাও সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন ভারতীয় অর্থনীতিতে এক নতুন যুগের সূচনা হয়। উদার আর্থিক নীতির মাধ্যমে ভারতকে এক নতুন দিক দেখিয়েছিলেন তিনি, যার জন্য তাঁকে আজও স্মরণ করা হয়।মনমোহনের জন্ম ১৯৩২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর, বর্তমান পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের চকওয়াল জেলার গাহ গ্রামে। দেশভাগের সময়, তাঁর পরিবার অমৃতসরে চলে আসে। চণ্ডীগড়ের পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শেষ করার পর, তিনি ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি’ফিল করেন।

শুভেন্দু অধিকারীকে প্রাণে মারার ছক?

ঐতিহাসিক ঘটনা


অক্সফোর্ডের পড়াশোনা শেষ করে মনমোহন ভারত ফিরে আসেন এবং রাষ্ট্রপুঞ্জে কাজ শুরু করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি দিল্লি স্কুল অব ইকনোমিক্সে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং কিছু সময় পরই সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করেন। ১৯৭২ সালে তিনি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হন এবং ১৯৭৬ সালে কেন্দ্রীয় অর্থসচিব হন। পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে তিনি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার গভর্নর নিযুক্ত হন।১৯৯১ সালে, প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিংহ রাও তাঁকে অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেন। সেই সময়, তিনি ভারতের অর্থনৈতিক সংস্কারের পথপ্রদর্শক হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। তিনি দেশের আর্থিক নীতি পরিবর্তন করেন এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করেন। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী হিসেবে তাঁর নেতৃত্বে ভারত আর্থিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে।মনমোহন সিং ২০০৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর নেতৃত্বে ভারতীয় অর্থনীতিতে একটি বিপ্লব ঘটে। তাঁর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ২০০৮ সালের বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে ভারতের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা। তিনি বামপন্থী দলগুলির বিরোধিতা সত্ত্বেও ভারত-আমেরিকা পরমাণু চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, যা ছিল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।

সম্পর্ক থেকে বিয়ের গল্প শেয়ার করলেন পিভি সিন্ধু নিজেই

২০০৯ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসে, এবং মনমোহন সিং দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। যদিও তাঁর সরকার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রস্থান এবং অন্যান্য রাজনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছিল, তবুও তিনি তার অর্থনৈতিক নীতি থেকে এক চুলও সরেননি। ২০১৪ সালে, তিনি ঘোষণা করেন যে, তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রিত্বের জন্য তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না এবং ২৬ মে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন।মনমোহন সিংয়ের কাজের সবচেয়ে বড় দিক ছিল তার মিতভাষিতা এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তগুলির প্রতি সততা। তাঁর নেতৃত্বে, ভারত একদিকে যেখানে বৈশ্বিক অর্থনীতির সাথে একীভূত হয়েছিল, অন্যদিকে তিনি দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি শক্তিশালী রাখার চেষ্টা করেছিলেন। বর্তমানে, তিনি মোদী সরকারের অর্থনৈতিক নীতির কঠোর সমালোচক, কিন্তু তা সত্ত্বেও, তিনি প্রয়োজনে পরামর্শও দিয়েছেন।মনমোহন সিংয়ের অবদান শুধু অর্থনীতিতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তাঁর রাজনৈতিক বিচক্ষণতা এবং দেশের প্রতি অবিচল আনুগত্য তাকে এক অনন্য স্থানে রেখেছে। তাঁর নেতৃত্বে ভারতের অর্থনীতি যেখানে সাফল্য পেয়েছিল, সেখানে আজও তার রূপান্তরের ছাপ স্পষ্ট।

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর