ব্যুরো নিউজ,২৮ মার্চ : যুক্তরাজ্যের একটি কলেজে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বক্তৃতার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে।এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাজ্যে বসবাস করা ভারতীয় প্রবাসীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। সেই কলেজটি হল অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেলগ কলেজ। তারা কেলগ কলেজের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক জোনাথন মিচিকে এক খোলা চিঠিতে অনুরোধ জানিয়েছেন এই আমন্ত্রণ বাতিল করার জন্য। তাদের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক ব্যর্থতা, নারী নির্যাতন ইস্যুতে অসংবেদনশীলতা, শিক্ষা ও শিল্পক্ষেত্রে দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক সহিংসতা তাঁকে এমন একটি সম্মানজনক মঞ্চে বক্তৃতা দেওয়ার যোগ্যতা থেকে বঞ্চিত করে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎ নিয়ে নতুন জটিলতা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য কি গ্রহণযোগ্য?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে বহুবার প্রশ্ন উঠেছে। ১৯৮৫ সালে তিনি দাবি করেছিলেন যে তিনি “University of East Georgia” থেকে পিএইচডি করেছেন। তিনি একটি গবেষণাপত্র জমা দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন, যার শিরোনাম ছিল “The Impact of Mughal Harem on State and Policies”। তবে পরবর্তীতে জানা যায়, এমন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আদৌ নেই এবং তার তথাকথিত গবেষণা গাইড “Karuna Pada Datta”-এর অস্তিত্বও প্রমাণিত হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা ফাউন্ডেশন নিশ্চিত করেছে যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অস্তিত্ব নেই। এমন একজন ব্যক্তি, যিনি নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে অসততা করেছেন, তাকে একটি আন্তর্জাতিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো অক্সফোর্ডের একাডেমিক নীতির পরিপন্থী।
অস্ত্রোপচারের দুঃস্বপ্ন: তরুণীর শরীরে মিলল পশুর ডিএনএ!
নারী নির্যাতনের ঘটনায় অসংবেদনশীলতা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার নারী নির্যাতনের ঘটনাকে অবজ্ঞা করেছেন এবং রাজনৈতিক কারণে অপরাধীদের রক্ষা করেছেন।
১. পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণ (২০১২): কলকাতায় এক তরুণী গণধর্ষণের শিকার হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনাটিকে “মিথ্যা” ও “পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র” বলে উড়িয়ে দেন।
২. নদিয়া minor rape case (২০২২): এক ১৪ বছরের কিশোরীর ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনাকে তিনি প্রেমঘটিত বিষয় বলে ব্যাখ্যা করেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
৩. ধর্ষণের জন্য বৈষম্যমূলক ক্ষতিপূরণ নীতি: তাঁর সরকার ধর্ষিতাদের জন্য বিভিন্ন বয়স অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছিল, যা নারীদের প্রতি অবমাননাকর বলে সমালোচিত হয়।
এত সব ঘটনার পরেও যদি তাঁকে নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়, তবে তা নারী অধিকারের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করবে।
রাজনৈতিক সহিংসতা ও দমননীতি,পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালে রাজনৈতিক সহিংসতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে।
১. নির্বাচনী সহিংসতা: পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর প্রার্থীদের উপর আক্রমণ ও ভোট কারচুপির অভিযোগ উঠেছে।
২.সন্দেশখালি কাণ্ড (২০২৪): তৃণমূলের নেতারা নারীদের উপর অত্যাচার, জমি দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন।
৩. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দমন: সাংবাদিক ও বিরোধী সমর্থকদের ওপর পুলিশি নির্যাতন এবং হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।এই ধরনের রাজনৈতিক হিংসা ও দমননীতি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি এবং এটি পশ্চিমবঙ্গের আইনের শাসনকে দুর্বল করেছে।
তৃণমূলের মঞ্চে আইসি, গলায় উত্তরীয় ঘিরে বিতর্ক
শিক্ষা ও শিল্প ধ্বংস,মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতি: লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে, যা মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করেছে। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতার: তাঁর বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হয়, যা শিক্ষা দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে। শিক্ষার মান অবনতি: গ্রামীণ অঞ্চলে পর্যাপ্ত শিক্ষক ও পরিকাঠামোর অভাবে শিক্ষার মান তলানিতে ঠেকেছে।শিল্পক্ষেত্রেও পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়ে পড়েছে। ২০০৮ সালে টাটা মোটরস প্রকল্প ব্যর্থতা: ন্যানো গাড়ির কারখানা বন্ধ হওয়ার ফলে পশ্চিমবঙ্গ শিল্প বিনিয়োগ হারায়।গ্লোবাল বিজনেস সামিট ব্যর্থতা: বিদেশি বিনিয়োগকারীরা রাজ্যের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশের কারণে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হননি।এই প্রেক্ষাপটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি অর্থনীতি ও শিক্ষা নিয়ে বক্তব্য রাখেন, তবে তা বাস্তবতার সঙ্গে কোনোভাবেই মেলে না।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনের বাস্তবতা গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শিক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কেলগ কলেজ, যা একাডেমিক সততা ও নৈতিকতার পক্ষে, তাদের উচিত এই আমন্ত্রণ পুনর্বিবেচনা করা। তাঁর বক্তৃতার বিষয় যদি “নারী নির্যাতন, রাজনৈতিক সহিংসতা, শিক্ষা দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক ব্যর্থতা” নিয়ে হতো, তবে তা যুক্তিযুক্ত হতো। কিন্তু নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষা নিয়ে তিনি যখন নিজেই ব্যর্থ, তখন এই আমন্ত্রণ একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হতে পারে।অতএব, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত তাদের মর্যাদা রক্ষার্থে এই আমন্ত্রণ বাতিল করা এবং সত্যিকারের শিক্ষাবিদ ও মানবাধিকার রক্ষাকারীদের আমন্ত্রণ জানানো।