ব্যুরো নিউজ ২৭ জুন: আজ, শুক্রবার, আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে সারা দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে হিন্দুদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব রথযাত্রা। ওড়িশার পুরীধামের পাশাপাশি এপার বাংলার শ্রীরামপুরের মাহেশ, কলকাতার বিভিন্ন প্রান্ত এবং মায়াপুরের ইস্কন মন্দির-সহ নানা জায়গায় রথের চাকা গড়াবে উদ্দীপনার সঙ্গে। কলকাতার বেশ কিছু বনেদি বাড়িতেও ঐতিহ্য মেনে আয়োজন করা হয়েছে জগন্নাথ দেবের এই উৎসব। রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে শহর কলকাতার বিভিন্ন স্থানে বসেছে বর্ণাঢ্য মেলা, যা বাঙালির এক প্রাচীন ঐতিহ্য।
বাংলার রথযাত্রার ইতিহাস ও মাহেশের রথ
বাংলার রথযাত্রার সূচনা কে বা কারা করেছিলেন, তা নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে কিছুটা বিতর্ক থাকলেও, এখনও পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী শ্রীরামপুরের মাহেশের রথকেই বাংলার প্রাচীনতম রথযাত্রা বলে মনে করা হয়। আনুমানিক ১৩৯৬ সাল থেকে মাহেশের রথযাত্রা নিরবচ্ছিন্নভাবে পালিত হয়ে আসছে, যা এর দীর্ঘস্থায়ী ঐতিহ্যকে প্রমাণ করে। এটি কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি বাঙালির লোকসংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
শ্রীক্ষেত্র পুরীর রথযাত্রা: ভক্তি, আধ্যাত্মিকতা ও মানবতার এক মহাযাত্রা
রথের মেলা: লোকসংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি
রথযাত্রার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে রথের মেলা। পাঁপড় ভাজা, বাদাম ভাজা, গজা, নিমকি, আলোর রোশনাই, জিলিপির দোকান – এসবই রথের মেলার অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই মেলাগুলি বাংলার গ্রামীণ ও শহুরে জীবনে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। এটি কেবল কেনাকাটার জায়গা নয়, বরং মানুষের মিলনক্ষেত্র, যেখানে বিভিন্ন প্রজন্মের মানুষ একসঙ্গে আনন্দ উপভোগ করতে পারেন।
কলকাতার প্রধান রথের মেলাগুলি
কলকাতায় রথযাত্রা উপলক্ষে একাধিক ঐতিহ্যবাহী মেলা বসে, যা পরিবার নিয়ে ঘোরার জন্য আদর্শ। নিচে কলকাতার কয়েকটি জনপ্রিয় রথের মেলার ঠিকানা দেওয়া হলো:
- মৌলালি রথযাত্রা মেলা (রামলীলা পার্ক): প্রায় ৫০-৬০ বছরের পুরনো এই মেলা পাখি এবং গাছপালার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাখিপ্রেমীরা এখানে আসেন লাভ বার্ড, ময়না, তোতাপাখি ইত্যাদি কেনার জন্য। এটি কলকাতার অন্যতম জনপ্রিয় রথের মেলা।
- ইসকনের রথের মেলা (ইসকন রথ ময়দান): ইসকনের রথ ময়দান প্রাঙ্গণে রথযাত্রা থেকে উল্টো রথ পর্যন্ত সাত দিন ধরে এই প্রাণবন্ত মেলা চলে। এখানে ইসকনের বিভিন্ন প্রকাশনা, ধর্মীয় সামগ্রী এবং সুস্বাদু খাবারের স্টল পাওয়া যায়। এটি ধর্মীয় আবহ এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ পণ্যের জন্য পরিচিত।
- বেলঘরিয়া রথতলা মেলা: বেলঘরিয়ার ঘোষাল পরিবার প্রায় ২০০ বছর আগে এই মেলার সূচনা করেছিল। এই মেলার এতটাই খ্যাতি যে পুরো এলাকাটি এখন ‘রথতলা’ নামেই পরিচিত। এটি স্থানীয় মানুষের কাছে এক ঐতিহ্যবাহী মেলার স্থান।
- নাগেরবাজার রথতলা মেলা (দমদম): প্রায় ৭০ বছরের পুরনো দমদমের এই মেলা ভোজনরসিকদের জন্য এক স্বর্গ। নাগেরবাজার ক্রসিংয়ের পাশে রাস্তার ধারে বেশ কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির স্টল এই মেলার প্রধান আকর্ষণ। এখানে ছানার জিলিপি, মিষ্টি দই, রাবড়ি-সহ নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি মিষ্টির স্বাদ নেওয়া যায়।
- টালিগঞ্জের কাছে শান্তিনগর: এখানেও ধুমধাম করে রথের মেলার আয়োজন করা হয়। রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে এই মেলার একটি বড় অংশ পরিচালিত হয়। সোজা রথ থেকে উল্টো রথ পর্যন্ত এখানে মেলা বসে এবং ভোগের আয়োজনও করা হয়।
পুরীতে রথযাত্রা উপলক্ষে ইস্ট কোস্ট রেলওয়ের ‘ECoR যাত্রা’ অ্যাপ চালু: বিস্তারিত জানুন!
এই রথের মেলাগুলি কেবল উৎসবের আনন্দই বাড়ায় না, বরং বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক জীবন্ত চিত্র তুলে ধরে। তাই, পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে এই মেলাগুলিতে ঘুরে আসতে পারেন এবং রথযাত্রার উৎসবের পূর্ণ আনন্দ উপভোগ করতে পারেন।