হেলে পড়া বাড়ি

ব্যুরো নিউজ,২৮ জানুয়ারি :কলকাতার মাটি ক্রমশ বিপদের মুখে, এবং বিশেষজ্ঞরা এটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। শহরের মাটির স্তরের নীচে যে বিশেষ ফর্মেশন রয়েছে, তাকে ভূবিজ্ঞানীরা ‘কালীঘাট ফর্মেশন’ নামে অভিহিত করেছেন। এটি এমন এক ধরনের মাটি যা আঠালো ও থকথকে, কিন্তু এর নিচে থাকা উপাদানগুলো ভঙ্গুর এবং ঝুরঝুরে। এই মাটির অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে, যার প্রভাব পড়ছে কলকাতার উপর। অতীতে একাধিক বহুতল ভবন হেলে পড়ার পেছনে এই মাটির ভঙ্গুরতাকেই দায়ী করা হচ্ছে।তার পাশাপাশি রয়েছে জলাভূমি ভরাট, অতিরিক্ত গ্রাউন্ড ওয়াটার সাকশন এবং বৃষ্টির জল ভূমিতে প্রবাহিত না হওয়া।

কলকাতা বইমেলায় এবার পথ হারাবেন না? নতুন অ্যাপের সুবিধা!

বিশেষজ্ঞরা বহু বছর আগে সতর্ক করলেও, বেহিসাবি বহুতল নির্মাণ,ফোর্থ ফ্লোর কে সিক্স ফ্লোর বানানো কর্পোরেশনের আইনকে তোয়াক্কা না করে, অতিরিক্ত টিউবওয়েল ব্যবহার এবং সাবমারসিবেলের কারণে কলকাতা ও হাওড়া অঞ্চলের মাটি আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে। এল ডি ভ্যারাইং ডেল্টা নামে পরিচিত এই এলাকা, যেখানকার মাটির গঠন এখনো সম্পূর্ণ হয়নি, সেখানে অতিরিক্ত নির্মাণ কাজ বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে। ১৯৬০ দশক থেকে ভূমি ধর্ষণের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, তা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।১৯৮০ সালের দিকে বিজ্ঞানীরা সাবধান করেছিলেন, কিন্তু সরকারি অবহেলা এবং নাগরিক অসচেতনতার কারণে আজও পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। কলকাতা ও হাওড়া একদিন হয়তো মাটির তলায় চলে যেতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

নাসার দ্বারা স্বীকৃত ভারতের ছাত্র, আকাশগঙ্গায় আবিষ্কার করল নতুন গ্রহাণু!

‘কালীঘাট ফর্মেশন’

বিশেষজ্ঞদের মতে, কালীঘাট ফর্মেশন হাজার দেড়েক বছর আগে কালীঘাট অঞ্চলকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছিল এবং তারপর তা শহরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়েছিল। ভূগর্ভস্থ জলস্তর ক্রমশ নেমে যাওয়ার ফলে এই সমস্যাটি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলস্তরের বিপদজনক হ্রাসের ফলে মাটির শুষ্কতা বাড়ছে, যার ফলে মাটির নীচে ফাঁপা জায়গা তৈরি হচ্ছে, এবং তা থেকে গঙ্গা ও বাগজোলা খালে অতিরিক্ত পলি জমা হচ্ছে। ২০১৮-২০২০ সালের মধ্যে গঙ্গায় পলির স্তর বৃদ্ধির পরিমাণ স্বাভাবিকের প্রায় পাঁচ গুণ বেড়েছে।

গিলেন ব্যারি সিনড্রোম (GBS)ঃ একটি বিরল রোগ এবং তার চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

বিশেষজ্ঞদের মতে, কলকাতা শহরের অনেক অংশে বিপদ খুবই তীব্র। গঙ্গার দু’পারে সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকায় এই বিপদ সবচেয়ে বেশি। কলকাতার ৪০ শতাংশ এবং হাওড়ার ৩৫ শতাংশ এলাকা এই বিপদের মধ্যে পড়ছে। বাবুঘাট, বড়বাজার, কাশীপুর, শোভাবাজার, দক্ষিণেশ্বরের মতো জায়গাগুলির মাটির তলা এখন বিপদের মুখে। গার্ডেনরিচ, মানিকতলা, বিধাননগর, নবান্ন, কোনা এক্সপ্রেসওয়ে, এবং ডোমজুড় এলাকার অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

ভূবিজ্ঞানী সুজীব কর এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সমস্যা সমাধানে কিছু সহজ পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। মাটির উপরে কংক্রিটের আচ্ছাদন কমানো এবং জল মাটির তলায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হলে এই বিপদ রোধ করা সম্ভব। এতে ভূগর্ভস্থ জলস্তর আবার বৃদ্ধি পাবে, যা মাটির স্থিতিশীলতা ফেরাতে সাহায্য করবে।এই গবেষণাগুলি কলকাতার ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক সংকেত প্রদান করছে, এবং সঠিক পদক্ষেপ না নিলে শহরের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর