ব্যুরো নিউজ ৭ নভেম্বর : বহু বছর আগে পর্যন্ত কেউ জানত না ক্ষীরাইয়ের ফুলের সৌন্দর্য সম্পর্কে, তবে এখন এই জায়গা পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। শীতকালে, যখন পৃথিবী নানা ধরনের শীতকালীন ফুলে সজ্জিত থাকে, তখন ক্ষীরাই তার রঙিন ফুলের মেলা নিয়ে পর্যটকদের আকর্ষণ করে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এই ক্ষীরাই এলাকায় মাইলের পর মাইল বিস্তৃত ফুলের চাষ, মৌমাছির গুঞ্জন এবং লাল মাটির পথ—সব মিলিয়ে এখানকার সৌন্দর্য যেন এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা দেয়।
শীতের অপেক্ষা আরও কিছুদিন! নভেম্বরের শেষেই বইবে উত্তুরে হাওয়া
ফুল চাষের মাধ্যমে তাদের জীবন-যাপন
ক্ষীরাইয়ের ফুল চাষ নতুন কিছু নয়। পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট, পাঁশকুড়া ও তমলুক অঞ্চল জুড়ে ফুল উৎপাদন ব্যাপক হারে হয়ে থাকে এবং এসব ফুল রাজ্য থেকে বাইরে, এমনকি ভিন রাজ্যেও পাঠানো হয়। এখানকার অধিকাংশ মানুষ ফুল চাষের মাধ্যমে তাদের জীবন-যাপন করে। যদিও একসময় ক্ষীরাইয়ের ফুল চাষের কথা খুব কম মানুষ জানতেন, আজ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এর জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এখন শীতকালে পর্যটকেরা এখানে আসেন, বাহারি ফুলের বাগান দেখতে এবং এক মনোরম পরিবেশে সময় কাটাতে।
অভিনেত্রী ঐশ্বর্য রাই মোট কত কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক ?
কি কি দেখতে পাবেন ?
এখানে গেলে চোখে পড়বে ফুলের তৈরি নানা মালা, টায়রা, বেল্ট, যেগুলি খুব কম দামে পাওয়া যায়। মাইলের পর মাইল জমি জুড়ে চাষ করা হচ্ছে গাঁদা, ক্যালেন্ডুলা, চন্দ্রমল্লিকা ইত্যাদি ফুল। এই সময়ে কংসাবতী নদী শুষ্ক থাকলেও বর্ষার সময় এই নদী ফুলে ফুলে ভরে ওঠে।ক্ষীরাইয়ের ফুলের বাগানে ঢুকলেই চোখে পড়বে রঙ-বেরঙের গাঁদা, গোলাপ, অ্যাস্টর, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া ইত্যাদি ফুলের সমাহার। এখানকার ফুলের মেলা দেখতে প্রতিদিনই বহু পর্যটক আসেন, বিশেষত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে। বড়দিন উপলক্ষ্যে এখানে পর্যটকদের ভিড় আরও বেশি থাকে। এমনকি রবিবারের দিনেও ফুলের বাগানে দর্শনার্থীদের ঢল নামে। পাঁশকুড়া পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান নন্দকুমার মিশ্র জানিয়েছেন, এই ফুলের মেলা পর্যটকদের আকর্ষণ করছে এবং এতে চাষিদের কোনো ক্ষতি না হয়, সে ব্যাপারে প্রশাসন এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি পদক্ষেপ নিচ্ছে।
কীভাবে পৌঁছাবেন?
হাওড়া থেকে খড়গপুর বা মেদিনীপুর লোকালে চাপলে দুই ঘণ্টার মধ্যে পাঁশকুড়া পৌঁছানো যায়। পাঁশকুড়া স্টেশন থেকে ক্ষীরাই যেতে হয় ২.৫ কিলোমিটার পথ হেঁটে। কংসাবতী বা কসাই নদী পার হয়ে ফুলের বাগান শুরু হয়ে যাবে। এছাড়া টোটো নিয়েও পাঁশকুড়া স্টেশন থেকে পৌঁছানো যায় ক্ষীরাই। তবে এখানকার কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে—এখানে থাকার বা খাওয়ার কোনো ভাল জায়গা নেই। তাই, যারা ফুল দেখতে আসবেন, তাদের সঙ্গে খাবার-পানীয় নিয়ে আসা উচিত।
ক্ষীরাইয়ের ফুলের মেলা দর্শন করতে আসলে, একেবারে এক দিনের জন্যও এখানে বেড়ানো সম্ভব। এক ঘন্টার মধ্যে পুরো জায়গাটি ঘুরে দেখা যাবে। তবে, এখানে খুব একটা খাবারের জায়গা না থাকায়, পর্যটকদের প্রস্তুতি নিয়ে আসতে বলা হয়। বর্তমানে ক্ষীরাইয়ের জনপ্রিয়তা অনেক বেড়েছে, তবে স্থানীয় সেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি পর্যটন ব্যবস্থার উন্নতির জন্য কাজ করছে যাতে সবাই সুন্দরভাবে এখানে সময় কাটাতে পারেন।