ব্যুরো নিউজ, ৩০ সেপ্টেম্বর :সমাজের চোখে চিরকাল অবহেলিত এক শ্রেণির মানুষ—যৌনকর্মীরা। যখন সমাজের বাকি অংশ পাড়ায় চলে আসে, তখন তাদের দেখা হয় লজ্জার দৃষ্টিতে। বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজো তাদের থেকেই শুরু হয়। যৌন পল্লীর মাটি ছাড়া দুর্গার মূর্তি তৈরি সম্ভব নয়,এটি বহু যুগের প্রথা। কিন্তু কেন এই নিয়ম? সমাজের এই দ্বিচারিতা কোথায় শেষ হয়?
যৌন পল্লীর মাটি ও দুর্গাপুজোর প্রথা
জানা যায়, পুরাণে একটি ধারণা রয়েছে যে, যখন কোনও পুরুষ যৌন পল্লীতে প্রবেশ করে, তখন সে সেখানে আসা পুণ্য বিসর্জন করে। এই কারণেই ওই পল্লীর মাটি পবিত্র হয়ে ওঠে এবং সেই পবিত্র মাটির দ্বারা নির্মিত হয় উমার মূর্তি। আবার কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, দেবী দুর্গা আসলে অসুরদলনী মহামায়ার একটি রূপ। ই ৯ রূপ হল নর্তকী, কাপালিকা, ধোপানী, নাপিতানী, ব্রাহ্মণী, শূদ্রাণী, গোয়ালিনী, মালিনী ও পতিতা। মহামায়াকে ৯টি ভিন্ন রূপে পূজিত করা হয়, যার মধ্যে একটি রূপ হচ্ছে ‘পতিতা’। এই রূপ যৌনকর্মীদের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়, যা সমাজের বিভিন্ন জাতি ও বর্ণের প্রতিনিধিত্ব করে।
অনেকের মতে, পুরাণের প্রভাবও এই প্রথার শুরুর পেছনে রয়েছে। যেমন, ঋষি বিশ্বামিত্রের তপস্যা ভাঙতে দেবরাজ ইন্দ্র মেনকাকে পাঠান, যার ফলে সেই কাহিনী সমাজে নারী শক্তির এক নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করে।
সার্বিকভাবে, দেবী দুর্গা হলেন সমস্ত নারী শক্তির প্রতিনিধি। তিনি জাতি, বর্ণ, শ্রেণী নির্বিশেষে সনাতনী শক্তির প্রতীক। যিনি সমাজের অসুর দমন করেন, তিনিই দেবী দুর্গা। তাই অনেকের মতে, সকল স্তরের নারী শক্তিকে সম্মান জানাতেই এই প্রথার সৃষ্টি। এই প্রথা আমাদের শেখায়, সমাজের অদেখা দিকগুলোকে মূল্যায়ন করতে হবে এবং সকলকে সমান মর্যাদা দিতে হবে।