ISRO CMS03 LVM3

ব্যুরো নিউজ ০৪ নভেম্বর ২০২৫ : তিন মাসের বিরতির পর, ISRO (Indian Space Research Organisation) তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট LVM-3 (পূর্বে GSLV Mk 3 নামে পরিচিত)-এর মাধ্যমে সফলভাবে একটি যোগাযোগ উপগ্রহকে মহাকাশে পাঠাল। রবিবার সন্ধ্যায় (২ নভেম্বর) সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় CMS-03 বা GSAT-7R নামের এই সামরিক যোগাযোগ উপগ্রহটি।

৪,৪১০ কেজি (৯,৭০০ পাউন্ড) ওজনের এই উপগ্রহটিকে পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৯,৯৭০ কিমি x ১৭০ কিমি দূরত্বে জিওসিনক্রোনাস ট্রান্সফার অরবিটে (GTO) স্থাপন করা হয়েছে। প্রায় ১৬ মিনিট উড়ানের পরই LVM-3 সফলভাবে উপগ্রহটিকে কক্ষপথে পৌঁছে দেয়। এটি ভারতীয় মাটি থেকে GTO-তে উৎক্ষেপণ করা সবচেয়ে ভারী যোগাযোগ উপগ্রহ, যা দেশের ক্রমবর্ধমান মহাকাশ ক্ষমতার এক মাইলফলক। এর আগে, ৪,০০০ কেজির বেশি ওজনের উপগ্রহ উৎক্ষেপণের জন্য ISRO-কে বিদেশের বেসরকারি মহাকাশ সংস্থাগুলির উপর নির্ভর করতে হত।

 

নৌবাহিনীর ব্লু-ওয়াটার অপারেশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ CMS-03

CMS-03 একটি মাল্টিব্যান্ড যোগাযোগ উপগ্রহ, যা নৌবাহিনীর জন্য তৈরি GSAT-7-এর স্থলাভিষিক্ত হবে। এটি ভারতীয় নৌবাহিনীর ক্রমবর্ধমান ব্লু-ওয়াটার অপারেশনের জন্য নিরাপদ, মাল্টি-ব্যান্ড যোগাযোগ সম্প্রসারণের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। উপগ্রহটি নৌবাহিনীর অভিযান, বিমান প্রতিরক্ষা এবং কৌশলগত কমান্ড নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যাপক সমুদ্র এবং স্থল অঞ্চল জুড়ে রিয়েল-টাইম যোগাযোগ সরবরাহ করবে।

উপগ্রহটি শেষ পর্যন্ত পৃথিবী থেকে ২২,২৩৬ মাইল (৩৫,৭৮৬ কিলোমিটার) উপরে জিওস্টেশনারি অরবিটে অবস্থান নেবে, যেখানে এটি পৃথিবীর ঘূর্ণন গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নির্দিষ্ট অঞ্চলের উপরে ‘স্থির’ থাকবে।

Atmanirbhar Bharat SemiConductor : প্রথম স্বদেশী চিপ ‘বিক্রম’ উন্মোচন ! ৭.৮% জিডিপি বৃদ্ধি, বিশ্বের আস্থা অর্জন: সেমিকন্ডাক্টরের ভবিষ্যৎ ভারতে, বললেন প্রধানমন্ত্রী

LVM-3 রকেটের ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

LVM-3 রকেটটির ক্ষমতা হলো লো আর্থ অরবিটে (LEO) ৮,০০০ কেজি পর্যন্ত এবং জিওসিনক্রোনাস অরবিটে ৪,০০০ কেজি পর্যন্ত পেলোড বহন করা। এই মিশনে এর সক্ষমতার চেয়েও বেশি ওজনের উপগ্রহ (৪,৪১০ কেজি) GTO-তে নিয়ে যাওয়ার জন্য কক্ষপথের সর্বোচ্চ বিন্দু সামান্য কমানো হয়েছে।

তবে, ISRO এই উৎক্ষেপণ যানটির সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, এই রকেটটির পরিবর্তিত সংস্করণই দেশের মানব মহাকাশ মিশন ‘গগনযান’-এ ব্যবহৃত হবে। সক্ষমতা বাড়াতে যে পরিবর্তনগুলি করা হচ্ছে:

  • ক্রায়োজেনিক স্টেজের উন্নতি: তৃতীয় বা ক্রায়োজেনিক আপার স্টেজ (C25)-এর বদলে নতুন C32 স্টেজ ব্যবহার করা হবে, যা ২২ টন থ্রাস্ট (বর্তমান ২০ টন) তৈরি করতে পারবে এবং ৩২,০০০ কেজি জ্বালানি বহন করবে।
  • সেমি-ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিন: রকেটের তরল-জ্বালানি ভিত্তিক দ্বিতীয় স্টেজের পরিবর্তে রিফাইন্ড কেরোসিন এবং তরল-অক্সিজেন ভিত্তিক সেমি-ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিন ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে। এটি রকেটের ক্ষমতা যেমন বাড়াবে, তেমনই তুলনামূলকভাবে সস্তা হবে।

এই পরিবর্তনের ফলে LVM-3 লো আর্থ অরবিটে বর্তমানেকার ৮,০০০ কেজির পরিবর্তে প্রায় ১০,০০০ কেজি বহন করতে সক্ষম হবে। এছাড়াও, এই রকেটই ভারতের পরিকল্পিত মহাকাশ স্টেশন – ভারতীয় আন্তরীক্ষ স্টেশন-এর প্রথম ও হালকা মডিউলটি বহন করবে।

USA : সাক্ষর হল যৌথ ভারত মার্কিন সামরিক পরিকাঠামো উন্নয়ন চুক্তি ,অত্যাধুনিক স্বদেশী ড্রোনের ওপর কাজ শুরু ভারতে !

LVM-3-এর সাফল্যের ধারাবাহিকতা

LVM-3 ISRO-এর সবচেয়ে সফল উৎক্ষেপণ যানগুলির মধ্যে অন্যতম। এই উৎক্ষেপণটি ছিল রকেটটির অষ্টম সার্বিক উড়ান এবং এর সবকটি মিশনেই উপগ্রহগুলিকে তাদের উদ্দিষ্ট কক্ষপথে সফলভাবে স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমেই চন্দ্রযান-২ এবং সফল চন্দ্রযান-৩ মিশন মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল। এর প্রথম উড়ানে (২০১৪) এটি ক্রু মডিউলটি কক্ষপথে স্থাপন করে দেশের প্রথম রি-এন্ট্রি পরীক্ষাও করেছিল, যা মানব মিশনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর