International Women's Day

প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায়, ৫ মার্চ: কতনা সমাজসেবী আর বুদ্ধিজীবী কত দিন ধরে বলে গেলেন এ বিশ্বের অর্ধেকটা নর হলে অর্ধেকটা নারী। আর নারী মুক্তি নিয়ে সেই প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের আগে থেকে প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু হয়েছিল। কিন্তু, যে কাঙ্খিত সম্মান নারীদের দেওয়া দরকার তা ২০২৪ সালে এসেও দেওয়া গেল কি? এই প্রশ্ন এখনও ভাবিয়ে তুলেছে পুরো নারী সমাজকে। বিশ্বের বহু সমস্যা অপমান আর লাঞ্ছনা নারীদের ভোগ করতে হয়েছে। কিন্তু, টানা আন্দোলনের ফলে নারীরা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনের ফলে ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার পেয়েছে। সম্পত্তির অধিকার আজ পেয়েছে নারীরা। এমনকি শিক্ষা চাকরি সমস্ত জায়গাতেই নারীর অধিকার স্বীকৃতি পাচ্ছে। কিন্তু ভারতে স্বাধীনতার ৭৭ বছর পরেও এত বৈষম্য রয়েগেল কেন ? সে প্রশ্ন আমাদের সকলের মনকে নাড়া দেওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু হয়নি। এই দায় নেবে কে? যাকেই এই দায় দেওয়া হোক সে অতি সন্তর্পণে চাতুর্যের সঙ্গে গা-ঝেড়ে ফেলে দেবে।

Advertisement of Hill 2 Ocean

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজও অধরা নারীর মুক্তি

সেই কবে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের যুগে সতীদাহ প্রথা বন্ধ করেছিলেন রাজা রামমোহন রায়। বিদ্যাসাগর মহাশয় একজন বিধবার সঙ্গে নিজের ছেলের বিয়ে দিয়ে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়েছিলেন’ চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম’। কিন্তু কি নিষ্ঠুর সে সময়ের পুরুষেরা, বিশেষত কুলিন ব্রাহ্মণেরা। সতীদাহ বন্ধ হলে জমি হাতানো যাবেনা। আর বিধবার বিয়ে হলে আবার তারা নতুন করে বাঁচতে শিখবে। এই ছিল পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ভাবনা। আর মেয়েদের লেখাপড়া শেখা সে তো দুরস্ত। বেচারা রামমোহন রায়ের বিরুদ্ধে এই ব্রাহ্মণেরা কম অসভ্যতা করেনি। তার গাড়ির কাঁচ ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। শারীরিক নিগ্রহেরও চেষ্টা হয়েছিল। আর বিদ্যাসাগর মহাশয় বিধবা বিবাহ চালু করে বর্ণমালা শিখিয়েও শেষ পর্যন্ত দুঃখে শেষ জীবনটা কলকাতা থেকে বহুদূরে কাটিয়েছিলেন। যেভাবে মহাত্মা গান্ধির জন্মদিন সহ আরও অনেক রাজনৈতিক নেতার জন্ম দিবস পালন করা হয় সেভাবে বাঙালি মনে রাখানি এই দুই যুগমানবদের। খোঁজ নিলে জানা যাবে কলকাতা শহরে তাদের সৎ উপায়ে অর্জিত সম্পত্তি সরকারকে দান করে গিয়েছিলেন। আজ যেখানে তৈরি হয়েছে কত না কলেজ, গ্রন্থাগার, গবেষণাগার। কিন্তু অতীত ভুলতে অভ্যস্ত বাঙালি এখন ভুলতে বসেছে তাদের মুক্তিদাতাদের। শুধু পুরুষেরা নয় নারিরাও তাদের জন্ম দিবস চারিদিকে ঘটা করে পালন করছে এমনটা দেখা যায় না। কোথাও কোথাও তাদের মূর্তিতে একটা মালা দিয়েই দায়িত্ব খালাস।

শুধু একটি বিষয়ে আজকে আমরা নজর দিতে পারি যে নারী মুক্তির অনেকটাই এখনও অধরা। রাজ্যে মহিলাদের স্কুল তৈরি করে গ্রামে গ্রামে শিক্ষার হার বাড়ানোর চেষ্টা করতে গিয়ে বহু শিক্ষিত নারীই আজ জেরবার। সরকারি স্কুলগুলিতে নারীরা যদিবা চাকরি করতে গিয়ে অনেক সুযোগ- সুবিধা পান, বেসরকারি স্কুলগুলিতে আজও চরম বৈষম্যের শিকার স্কুলের শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা। আমি পেশার সূত্রে পশ্চিমবঙ্গে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘুরে দেখেছি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকাদের আর্থিক দুরাবস্থা। সমান ডিগ্রি পেয়েও সরকারী স্কুলের শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা যে বেতন ও সুযোগ – সুবিধা পায় তার ২০ ভাগের এক ভাগও পাননা গ্রামের প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা। তাই শিরোনামে রাখতে বাধ্য হলাম এ কেমন রঙ্গ যাদু।

এসব বিষয় যারা সহজে সমাধান করতে পারতেন তারা উদাসীন। শিক্ষিকারা আর পাঁচজনের মতোই ডিগ্রি পেয়েছেন। বাবা- মায়ের কষ্টার্জিত পয়সায় চেষ্টা করেছেন চাকরি পাওয়ার। কিন্তু সবাই হয়তো সরকারী ক্ষেত্রে জায়গা পাবেননা। কিন্তু বেসরকারি ক্ষেত্রে সম্মানজনক বেতন তাদের দেওয়া উচিৎ ছিল। সে ব্যবস্থা করার দায় ছিল শুধু সরকার বাহাদুরেরই। যারা কচি-কাঁচাদের শিক্ষার ভিত তৈরি করলেন তাদের পেটে অন্ন নেই। যারা ভবিষ্যতের শিক্ষক থেকে বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার থেকে সফল ব্যবসায়ী তৈরির ভিত গড়লেন সেই দিদিমনিরা ব্রাত্য। সুকান্তের রানারের মত তারা কর্তব্য আর হতাশার বোঝা কাঁধে নিয়ে ছুটে চলেছে নিত্য দিন। কিন্তু তাদের খবর রাখবে কে? বাহাদুরেরা দায় এড়াচ্ছেন। অর্ধ শিক্ষিত বাহাদুরেরাও গাড়ির কাঁচ তুলে তাদের পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছেন। এই বিপুল সংখ্যক অসংঘটিত ক্ষেত্রে দিদিমনি আর শিক্ষা কর্মীরা শুধু লাঞ্ছনারই শিকার। কিন্তু, যৎসামান্যই হোক এই দধিচীদের ( পড়ুন বেসরকারি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী) হাড় দিয়েই বাষ্পশকট তৈরির মত গ্রাম-গঞ্জের ছাত্র- ছাত্রীরা লেখা -পড়া শিখবে। আর জীবনের শেষে এসে এই বঞ্চিত শিক্ষিকারাই অতীত স্মৃতি চারণা করতে করতে ঢলে পড়বে মৃত্যুর কোলে। অনাড়ম্বরে তার শেষকৃত্য হবে। রানার যেমন শেষকালে এসে বুঝেছিল কি হবে এ বোঝা বয়ে? কি হবে ক্ষুধার ক্লান্তিতে ক্ষয়ে ক্ষয়ে? রানারের মত এই দিদিমনিদেরও ঘরে অভাব। দেখার কেউ নেই। তাই নারী মুক্তি হল কি?

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর