ব্যুরো নিউজ ০১ জুলাই : কসবা সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় কলকাতা পুলিশের তদন্তের গতিপ্রকৃতি এবং তাদের কার্যক্রম নিয়ে নতুন করে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। একদিকে নির্যাতিতার পরিবার কলকাতা পুলিশের প্রতি আস্থা প্রকাশ করলেও, অন্যদিকে বিরোধীরা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
নির্যাতিতার পরিবারের আস্থা
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবা স্পষ্ট জানিয়েছেন, “আমাদের কলকাতা পুলিশেই আস্থা রয়েছে।” তিনি উল্লেখ করেন যে, জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যরাও এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর এবং নির্যাতিতা অভিযোগ দায়ের করার মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যেই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করায় কলকাতা পুলিশের প্রশংসা করেছে রাজ্য শাসকদল। নির্যাতিতার বাবাও বলেন, “তদন্ত হোক, দোষীরা শাস্তি পাক। কলকাতা পুলিশের তদন্তের গতিপ্রকৃতিতে আমরা সন্তুষ্ট।” তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক।”
কসবা কলেজে গণধর্ষণ: ধৃত টিএমসিপি সদস্য, বিরোধী দলেনেতার নিশানায় প্রশাসনিক ব্যর্থতা ।
তদন্তের অগ্রগতি এবং পুলিশের বক্তব্য
মঙ্গলবার কলকাতা পুলিশের কমিশনার মনোজ ভার্মাকে কসবা কাণ্ডের তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজে যে ঘটনা ঘটেছে, তা নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। তবে যেহেতু মামলাটি খুবই স্পর্শকাতর, তাই এই নিয়ে আমরা খুব বিস্তারিত কিছু এখনই জানাতে পারছি না। শুধু এটুকুই বলব, খুব দ্রুত FIR দায়ের করা হয়েছিল। ৩ অভিযুক্তই ১২ ঘণ্টার মধ্যে ধরা পড়েছে। তারপর তদন্ত করে আরও একজনকে আমরা গ্রেফতার করেছি।” পুলিশ কমিশনার জানান, অনেক তথ্যপ্রমাণ তাদের হাতে এসেছে, সেগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি নির্যাতিতার পরিচয় কোনোমতেই প্রকাশ না করার বিষয়ে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের নির্দেশিকা মেনে।
বিতর্কিত আইন প্রয়োগ পদ্ধতি এবং নগরপালের দায়সারা জবাব
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার ১০ মাসের মধ্যে শহর কলকাতায় আরও একটি নৃশংস নির্যাতনের ঘটনা ঘটল। এ প্রসঙ্গে কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নগরপাল মনোজ ভার্মা সুকৌশলে জবাব এড়িয়ে যান। কেন একাধিক এফআইআর হওয়া সত্ত্বেও এর আগে মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্রর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, এই প্রশ্নের জবাবে ভার্মা বলেন, “কেসের তদন্ত সম্পর্কিত কোনো তথ্য এখনও বিশদে আমি বলতে চাইছি না। তবে আমাদের কাছে অনেক তথ্য এসেছে। সেগুলি অ্যানালিসিস করা হচ্ছে। কোনোভাবে যাতে তদন্তে কোনো প্রভাব না পড়ে, তাই আমি এই মুহূর্তে কিছু বলব না। কিন্তু যা যা অ্যাকশন নেওয়ার প্রয়োজন ছিল, তা লালবাজার নিয়েছে। তদন্ত চলছে, যা যা পদক্ষেপ করার প্রয়োজন পড়বে, তা আমরা করব। প্রত্যেকটা বিষয়কেই তদন্তের স্ক্যানারে রাখা হয়েছে।”
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও কলেজের পদক্ষেপ
কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজে গণধর্ষণের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্রকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার সঙ্গে আরও দু’জন অভিযুক্ত ছাত্রের ছাত্রত্বও বাতিল করা হয়েছে। কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা বজবজের তৃণমূল বিধায়ক অশোক দেব জিবি মিটিংয়ের পর জানিয়েছেন, “তিনজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। নির্যাতিতার পরিবার চাইলে আমরা সবরকম সাহায্য করব। কলেজে সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।”
কসবা কাণ্ডে প্রধান বিরোধী দল সরব অনুসন্ধানে এবং প্রতিবাদে !
রাজনৈতিক যোগসূত্র ও বিতর্ক
এই ঘটনাকে ঘিরে মূল অভিযুক্ত মনোজিতের রাজনৈতিক যোগ এবং তার উত্থান নিয়ে বিতর্ক তীব্রতর হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, কলেজের অস্থায়ী কর্মী ও প্রাক্তন ছাত্র মনোজিৎকে কলেজে চাকরির জন্য সুপারিশ করেছিলেন স্বয়ং অশোক দেবই। ছাত্রছাত্রীদের একাংশের দাবি, রাজনৈতিক ছত্রছায়াতেই কলেজ চত্বরে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন মনোজিৎ। যদিও অশোক দেব এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, “আমি ওর বাবাকে ডেকে সতর্ক করেছিলাম। বলেছিলাম, ছেলে খারাপ পথে যাচ্ছে। বাবা বলেছিল ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু হয়নি।”
কলেজের সুরক্ষা ব্যবস্থা ও তদন্তের পরবর্তী পদক্ষেপ
ঘটনার জেরে কলেজে সাময়িকভাবে পঠনপাঠন বন্ধ রাখা হয়েছে, খোলা থাকবে শুধু অফিস। প্রশাসনিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, নতুন বেসরকারি এজেন্সির নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করা হবে, যাতে থাকবেন মহিলা নিরাপত্তারক্ষীও। সিসিটিভি ব্যবস্থাও আরও উন্নত করা হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। নির্যাতিতাকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ এবং দ্বিতীয়বার মেডিক্যাল পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে। ধৃতদের আগামীকাল আদালতে তোলার কথা।