ব্যুরো নিউজ, ৫ মার্চ: প্রতিবছর ৮ মার্চ বিশ্ব জুড়ে নারী অধিকার আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে পালিত হয়। এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য হল লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠা করা। নারীদের প্রতি হিংস্র মনোভাব ও নির্যাতন বন্ধ করা। বিগত ২০ শতকের প্রথম দিকে ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় শ্রম আন্দোলন থেকে এই আন্তর্জাতিক নারী দিবসের উৎপত্তি। আমেরিকায় সমাজতান্ত্রিক দল ১৯০৯ সালের নারী দিবস আয়োজন করে। ১৯১০ সালে আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক মহিলা সম্মেলনে জার্মান প্রতিনিধিদের প্রতি বছর একটি বিশেষ নারী দিবস আয়োজনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। ওই দিন বিশ্ব জুড়ে ছুটি ঘোষণা করা হয়। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর বিশ্বে শান্তি স্থাপনের জন্য প্রতিষ্ঠিত লিগ অফ নেশান্স-এর কর্তারাও আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের জন্য প্রচারাভিযান চালায়। বিশ্বের কিছু অংশ এই আন্তর্জাতিক নারী দিবসের বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু করেন।
এখনও বাকি নারী মুক্তির কাজ
জাতীয় নারী দিবস নিউইয়র্কে পালিত হয় ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯০৯ সালে। জানা গিয়েছে, নারী আন্দোলনে সক্রিয় নেত্রী টেরেসা মালকিয়েলের পরামর্শে মার্কিন সোশ্যালিস্ট পার্টি এর আয়োজন করে। পরে ১৭ টি দেশের প্রতিনিধিত্বকারী ১০০ জন প্রতিনিধি নারীদের ভোটাধিকার-সহ সমান অধিকারের জন্য নারী দিবসের সমর্থনে এক মত হন। ১৯ মার্চ ১৯১১ সালের প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস ১০ লক্ষেরও বেশি লোক নিয়ে পালিত হয় সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া ও জার্মানির নারীদের নিয়ে। নারীদের সমানাধিকারের দাবিতে অস্ট্রিয়া- হাঙ্গেরিতে ৩০০ টিরও বেশি বিক্ষোভ হয়। তখনও নারীদের ভোটাধিকার ছিল না। ইউরোপ জুড়ে এরপরেই নারীরা ভোটাধিকারের দাবি তোলে ও কর্মস্থলে যৌন বৈষম্যের দুর করার দাবি জানায়। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ (১৯১৪-১৯১৯) চলাকালিন এই ভোটাধিকারের আন্দোলন করতে গিয়ে বহু নারী গ্রেফতার হয়। পূর্বতন সোভিয়েত রাশিয়াতেও তখন নারী আন্দোলনের দাপটে জার দ্বিতীয় নিকলাস সম্রাট পদ ত্যাগ করেন। এরপরেই সেখানকার অস্থায়ি সরকার মহিলাদের ভোটাধিকার স্বীকার করে নেয়। ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের সময় বলশেভিক আলেজান্দ্রা কোলোনতাই ও ভিআই লেনিন আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ছুটির ঘোষণা করেন। সরকার স্বীকার করে নেয় ওই দিনটি অ-কাজের দিবস এবং সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠায় নারী আন্দোলনের সাফল্যকেও তারা স্মরণ করে।
মোহালির শেষ টেস্টে বেজায় ঠাণ্ডা ইংল্যান্ডকে খেলার সুযোগ দেবে
শুধু সোভিয়েত রাশিয়া নয় চিনা কমিউনিস্টরাও ১৯২২ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ছুটি ঘোষণা করে। ১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর গণপ্রজাতন্ত্রী চিন প্রতিষ্ঠার পর ২৩ ডিসেম্বর ঘোষণা করে যে, ৮ মার্চ সরকারী ছুটি হিসাবে ঘোষণা করা হয়। আর মহিলাদের দেওয়া হবে অর্ধ দিবস ছুটি। সহজে এই নারী দিবস অর্জন করা যায়নি। ২০০৭ সালের ৪ মার্চ ইরানের তেহরানে পুলিশ কয়েকশো নারী- পুরুষকে ব্যপক লাঠি পেটা করে। শ’খানেক নারিকে গ্রেফতার করা হয় ও নির্জন কারাবাসে পাঠানো হয়। মিশরের কায়রোতে নারীদের হয়রানীর প্রতিবাদে কয়েকশো পুরুষ পথে নেমেছিল। আন্দোলন করতে গিয়ে বহু ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছিল বিভিন্ন দেশে সরকারের বন্দুকবাহিনির দাপটে। ইন্টারন্যাশেনাল কমিটি অফ দি রেডক্রস কারাগারে নারীদের দুর্দশার দিকটি তুলে ধরেছিল। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সমর্থনে রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিয় গুতেরেস বলেছিলেন কিভাবে নারীদের অধিকার হ্রাস ও সীমাবদ্ধ করা হচ্ছে। তিনি এর সম্পূর্ণ পরিবর্তনের আহ্বান জানান। ২০১৮ সালে রাষ্ট্রসংঘে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের থিম ছিল ‘এই সময় গ্রামীণ ও শহুরে কর্মীরা নারীদের জীবন পরিবর্তন করছে’। নারীদের যৌন হয়রানি, লাঞ্ছনা ও লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে তাদের সোচ্চার- প্রতিবাদ করার শক্তি দিয়েছে। এটাই নারী মুক্তির অগ্রগতি। কিন্তু এখনও কাজ শেষ হয়নি।