ব্যুরো নিউজ, ২৮ অক্টোবর :কলকাতার কাছেই হুগলীর হরিপালে রয়েছে এমন এক মন্দির যেখানে দেবী কালী পূজিত হন সবুজ রূপে। যা সাধারণ মানুষের কাছে অত্যন্ত অদ্ভুত! হরিপালের শ্রীপতিপুর পশ্চিম গ্রামে প্রায় ৭০ বছর ধরে পূজিত হয়ে আসছেন এই সবুজ কালী। বৈষ্ণব পরিবার থেকে আসা বটকৃষ্ণ অধিকারীর এক মায়াবী স্বপ্ন এই দেবীকে স্থাপন করেন। মাঠেঘাটে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসতেন বটকৃষ্ণ। আর একদিন তার সেই সখের বাঁশি শুনেই, এক সন্ন্যাসীর সাক্ষাৎ হয়। তার নির্দেশে গভীর রাতে গুরুবিদ্যা লাভ করেন এবং শাক্ত সাধনায় মনোনিবেশ করেন। বৈষ্ণব পরিবারে শক্তি সাধনা করতে গিয়ে বটকৃষ্ণকে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়। কিন্তু মায়ের স্বপ্নাদেশে অবশেষে প্রতিষ্ঠা করলেন মন্দির।
উত্তর কলকাতার জীবন্ত কালীর মন্দির! এখানে মা শ্যামসুন্দরী ছোট মেয়ে রূপে পূজিত
বটকৃষ্ণের বাঁশির সুরেই দেবী মুগ্ধ
কখনও কাউকে খালি হাতে ফেরান না নৈহাটির ‘বড়মা’
স্বপ্নে দেখা সেই কালীদেবীর রূপ ছিল সবুজ—এক হাতে খড়্গ, অন্য হাতে ত্রিশূল। সেই সবুজ মাতৃরূপেই মূর্তি গড়লেন তিনি আর আজও এই বিশেষ রূপে পূজিত হন হরিপালের সবুজ কালী। তবে এখানেই শেষ নয়। বিশেষ রীতির মধ্যে প্রতিদিন বাঁশি বাজিয়ে দেবীকে আরতি দেওয়া হয় কারণ লোকবিশ্বাস বটকৃষ্ণের বাঁশির সুরেই দেবী মুগ্ধ হয়ে প্রকাশ পেয়েছিলেন। অধিকারী পরিবারের উত্তরসূরিরা তিন প্রজন্ম ধরে রাতের দ্বিতীয় প্রহরে বাঁশির সুরে মাকে পুজো দেন, আর শ্যামা পূজার দিন সারা রাত একটানা বাঁশি বাজে।
৪০০ বছরের পুরনো এই মা কালি পুজোর আচারে ত্রুটি হলে খেয়ে নেন মানুষ।
দেবীর অঙ্গরাগ হিসেবে ব্যবহার করা হয় দূর্বাঘাসের কচি সবুজ পাতার রস যা দেবীর সবুজ রূপকে বিশেষ করে তোলে। দীপান্বিতা শ্যামা পূজার দিনে ষোড়শ উপাচারে পূজা, আমিষ ভোগ ও বিশেষ হোম নিবেদন করা হয়। মা কালীর প্রিয় ইলিশ মাছ এবং জুঁই ফুলের মালা নিবেদন করাও এই পুজোর বিশেষ অঙ্গ। শাক্ত-বৈষ্ণব সাধনার এই মিলনে তৈরি হুগলীর সবুজ কালী পুজো আজও মানুষের মাঝে ভক্তির অমোঘ টান ধরে রেখেছে।